টাঙ্গুয়ার হাওরে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে অতিথি পাখি শিকারের একটি উদ্বেগজনক সংবাদ প্রকাশ হয়েছে গতকাল দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে। অবৈধ পাখি শিকারীরা আগে ফাঁদ পেতে অতিথি পাখি শিকার করত। এখন কৌশল পাল্টেছে তারা। ফাঁদের পরিবর্তে এই নির্মম শিকারী দল বিল—জলাশয়ে বিষ ছিটিয়ে রাখে। ঝাঁকে ঝাঁকে খাদ্যের সন্ধানে বিলে নেমে আসা পাখিরা সেই বিষের প্রভাবে দলে দলে মারা পড়ে। বিষ প্রয়োগের ফলে বিল জলাশয়ের পানি দূষিত হয়ে যায়। স্থানীয়ভাবে যেসব হাঁসের খামার গড়ে উঠেছে সেইসব খামারের প্রচুর হাঁস এই বিষাক্ত পানিতে এসে মারা পড়ে। এক হাঁস খামারী জানিয়েছেন দিনের বেলায় যে পরিমাণ হাঁস তিনি জলাশয়ে চড়ান সন্ধ্যা বেলা তার অর্ধেক ঘরে ফিরে। অর্থাৎ সেই খামারীর ভাষ্য মতে অর্ধেক হাঁসই মারা পড়ছে। বিষয়টি কতটা উদ্বেগজনক ও ক্ষতিকর ভাবুন। অথচ এ নিয়ে কারও কোনো হেলদোল নেই।
বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে অতিথি পাখি শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অতিথি পাখিরা যেমন অপরূপ সৌন্দর্যের কারণ তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে এইসব পাখি রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রকৃতি মনুষ্যসৃষ্ট অনাচারের কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এই হাওরে অতিথি পাখির আগমন অনেক কমে গেছে। এখন সামান্য কিছু পাখি এখানে আসে। এই পাখিগুলোও নির্মম শিকারীদের কারণে নিধন করে ফেলা হচ্ছে। তাদের প্রতিহত করার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। অতিথি পাখি শিকার যেমন নিষিদ্ধ তেমনি অতিথি পাখি বিক্রি করাও নিষিদ্ধ। দেশের কিছু মানুষের অতিথি পাখির মাংস খাওয়ার একটি নেশা আছে। এরা বেশি দামে হলেও এই পাখির মাংসের স্বাদ নিতে চায়। এই চাহিদার কারণে শিকারীরা পাখি নিধন করে বিক্রি করতে নানা ছলচাতুরী ও অপরাধকর্মের সাথে যুক্ত হয়। রাতের আঁধারে পাখি শিকার করে নানা কৌশলে রাতেই তারা ক্রেতার কাছে তা পৌঁছে দেয়। এই ক্রয়—বিক্রয় ব্যবস্থা বন্ধ করা না গেলে নিষিদ্ধ পাখি শিকারের নির্মমতাও বন্ধ করা যাবে না।
কারা অবৈধভাবে পাখি শিকারের সাথে জড়িত তা স্থানীয় কারও অজানা থাকার কথা নয়। এরা সংখ্যায়ও খুব বেশি নয়। এদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থার আওতায় আনা খুব কঠিন কাজ বলে কেউ মনে করেন না। কিন্তু সমস্যা রয়েছে আন্তরিকতা ও দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠার উপর। অভিযোগ আছে এইসব কাজ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যাদের উপর ন্যস্ত তারাই নানা অনৈতিক যোগাযোগের কারণে পাখি শিকারীদের প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ রক্ষকই এখানে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। এরকম হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যে কঠিন তা বুঝতে কারও বাকি থাকে না। টাঙ্গুয়ার হাওরে পাখি নিধনের বেলায় এই খেলাই চলছে। আমরা বিশ্বাস করি, শক্ত মনোভাব নিয়ে কিছু সংখ্যক পাখি শিকারীকে কঠিন সাজা দিতে পারলে এই পেশায় জড়িত অন্যরা তা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন। মূল কথা হলো শিকারীদের কাছে এই অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালনাকে কঠিন থেকে কঠিনতর করে তোলতে হবে। কেউই বেশি ঝঁুকি নিয়ে কোনো পেশায় জড়িত থাকতে চাইবে না। তা না করে যদি অবৈধ শিকারীদের উল্টো প্রশ্রয় দেয়া হয় তাহলে কোনো কিছুই আশা করা ঠিক হবে না।
যা হোক, আমাদের নিবেদন থাকবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতিÑ পরিবেশ জলবায়ু ও প্রকৃতির সৌন্দর্য রক্ষায় অতিথি পাখিদের বাঁচিয়ে রাখার ব্যবস্থা করুন। এইসব পাখি হাজার হাজার মাইল দূর থেকে এইসব জলাশয়ে আসে। তাদের প্রতি সদয় হোন। সাময়িক রসনা তৃপ্তি বা গুটিকয় টাকার লোভের কারণে এই অতিথিদের বিভৎস হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে দিবেন না। পাশাপাশি দ্রত বর্ধমান হাঁসপালন কর্মকাণ্ডকে রক্ষা করতেও পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে হবে।
- মিথ্যা বলা, দুর্নীতি ও লুটপাট করা বিএনপির অভ্যাস : প্রধানমন্ত্রী
- জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ