অস্বস্তিকর বাঁধের কাজ/ মাটি থেকে যারা কড়ি আহরণে উন্মাদ তাদের প্রতিহত করুন

জামালগঞ্জে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজের অগ্রগতিকে সংবাদ শিরোনামে ‘অস্বস্তিকর’ বলা হয়েছে। না, কর্তা ব্যক্তিদের অস্বস্তির কারণ নয়। বরং তাঁরা তোতাপাখির বুলির মতো বলে চলেছেনÑনির্ধারিত সময়েই শেষ হবে কাজ। হাওর নিয়ে কাজ করা সংগঠনের জামালগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক গণমাধ্যমে বলছেন, উপজেলার ৬টি হাওরের ৬১টি প্রকল্পে সাকুল্যে মাটির কাজ বাকি রয়ে গেছে ৩০ ভাগ। মাটির কাজের বাইরে অপরাপর অপরিহার্য করণীয়Ñ কমপেকশন, দুর্বা ঘাস লাগানো, জিও প্লাস্টিক ব্যাগ বসানো, বাঁশ পোঁতা, স্লোব ঠিক রাখা ইত্যাদি কাজ বাকি গড়ে ৮০ শতাংশ। এদিকে পুরো জেলার বাঁধের কাজের মূল্যায়ন করেছেন হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্যসচিব চিত্তরঞ্জন তালুকদার। তাঁর মতে সর্বত্রই কাজ কম হয়েছে, যেখানে কর্মকর্তারা যেতে পারেন সেসব বাঁধে এক ধরনের কাজ হচ্ছে যেখানে দায়িত্বশীল উর্দ্ধতনরা যেতে পারেন না সেসব দুর্গম বাঁধে কাজ হচ্ছে কম। অর্থাৎ বাঁধ নিয়ে উদ্বিগ্ন সকলে। এদিকে গত তিন দিনে কিছুটা স্বস্তির বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই বৃষ্টি আবার অতিরিক্ত ঝরলে মহা অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। স্মরণ করুন ২০১৭ সন। সেবার এই ফেব্রুয়ারিতেই প্রথম ডুবেছিলো ধর্মপাশার চন্দ্রসোনারথাল হাওর। এরপর একে একে সব হাওর। কপাল পুড়েছিলো কৃষকদের। এক মুঠো ধান তুলতে পারেননি সেবার কোনো কৃষক। সুতরাং আগাম ঢলের আশঙ্কা থাকে বলেই ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের শতভাগ কাজ শেষ করার মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে সরকারি নীতিমালায়। কিন্তু ঠিক আজকের দিনে বাঁধগুলোর যে অবস্থা তাতে ওই ঝুঁকি মোকাবিলা করা কতটা সম্ভব?
বাঁধকে অতিমাত্রায় বাণিজ্যিকরণের খেসারত দিচ্ছেন কৃষকরা। প্রয়োজনের সময় এসব বাঁধ কোনো কাজেই আসে না বলে দেখে আসছেন এই অঞ্চলের মানুষ। গত সনেও প্রচুর ফসলি জমি ডুবেছে, রক্ষা করতে পারেনি দুর্বল বাঁধ। অর্থাৎ বাঁধ করে টাকা কামাই করেছে কিছু লোক কিন্তু সর্বনাশ ঘটেছে উৎপাদক কৃষক সমাজের। কে দেখবে এই অনাচার? কথায় বলে, নীতিমালার কোনো দোষ নেই, বরং যারা সেটি বাস্তবায়ন করছেন দোষটি তাদের। নতুবা ঠিকাদারি প্রথার রাক্ষুসে চেহারার কথা প্রচার করে আমরা যে গণমুখী পিআইসি প্রথার প্রবর্তন ঘটিয়েছিলাম সেটিও আজ এতোটা কলুষিত হয়ে পড়তে পারত না। সেই যে, গল্পের বরখাস্ত হওয়া দুর্নীতিগ্রস্ত রাজকর্মচারির কথা; যাকে অতিষ্ঠ হয়ে বিরক্ত রাজা ঢেউ গোণার কাজে লাগিয়েছিলেন। দেখা গেল, ঢেউ ভেঙে ফেলছে বলে জলপথে চলাচল করা নৌযান আটকে দিচ্ছে সে, পরে নগদ নারায়ণ প্রাপ্ত হয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। এখনও একই অবস্থা বিরাজমান। কর্তা ঠিক থাকলে ঠিকাদারি প্রথা বলুন আর পিআইসি; সবই সঠিক থাকে। কর্তা বেগরবাই হলেই সব পণ্ড। আমরা যতো ফাঁকফোকর বিহীন পথ ও পদ্ধতির আবিষ্কার করি না কেন, যাদের হাত দিয়ে পুরো ব্যবস্থাটি বাস্তবায়িত হয় সেই ব্যক্তি ও সিস্টেম যদি অপরিবর্তিত থাকে তাহলে ফলাফল যে একই হয়; বাঁধের কাজের অভিজ্ঞতা তার বড় প্রমাণ।
আমরা কেবল মিনতি করতে পারি, বারেবারে তাই করে যাচ্ছি এই মৌসুমে। দয়া করুন এই কৃষকদের প্রতি। যাদের শ্রম ঘামে পুষ্ঠ হয় আমাদের খাদ্যভাণ্ডার। তাঁদের রক্ষা করা মানে আমি আপনি পুরো জাতিকে রক্ষা করার নামান্তর। একটু বুঝুন খাদ্য নিরাপত্তায় টান পড়লে এই দেশটির কী হাল হবে। সুতরাং মানুষের হাতে যেটুকো আছে ঝুঁকি মোকাবিলা করার উপায়, তার যথাযথ সদ্ব্যবহার করুন। নতুবা আফসোসের আগুনে পুড়তে হবে সকলকে। মাটি থেকে যারা কড়ি আহরণে উন্মাদ তাদের প্রতিহত করে মাঠ ভরা সবুজ শস্যচারাগুলোকে সোনালী গর্বে গরীয়ান হতে দিন। এ থেকে পাওয়া প্রতিটি খাদ্যদানা আমাদের বাঁচিয়ে রাখবে সামনের সংকট থেকেÑ ধেয়ে আসছে যে বৈশ্বিক মহামন্দা।