স্টাফ রিপোর্টার
সুনামগঞ্জের মেহনতি মানুষের আপনজন হিসাবে পরিচিত প্রয়াত জননেতা আলফাত উদ্দিন আহমদ (মোক্তার সাহেব) এর ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তাঁর ত্যাগ ছিল স্বার্থহীন নিপীড়িত মানুষের অধিকারের জন্য। মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্য প্রতিষ্ঠার।
ছাত্রজীবনে ছাত্র ফেডারেশনের কর্মী হিসাবে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা। রাজনীতির কারণে ১৯৫৮ সালে প্রথম, ১৯৬৯ সালে ২য়, ১৯৭৬ সালে ৩য় ও ১৯৮৬ সালে ৪র্থবার কারাবরণ করেন। মামলা-হামলা, জেল-জুলুমের পরও থেমে থাকেননি তিনি। রাজনৈতিক কর্মকা-, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকা-সহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া এই মানুষটি ১৯৯৫ সালের ২৩ মে মৃত্যুবরণ করেন।
আলফাত উদ্দিন আহমদ ১৯৪৬-৪৮ সালে মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কর্মী হিসাবে সিলেট গণভোট আন্দোলন তথা পাকিস্তান আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে স্থানীয় কর্মকা-ে নেতৃত্ব দেন। ১৯৫৪ সালে গণতন্ত্রী দলে যোগদান করেন ও সুনামগঞ্জ মহকুমা শাখার আহবায়ক হন। এই সময়ে যুক্তফ্রন্ট্রের নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠিত হলে তিনি সে দলে যোগ দেন ও এর সম্পাদক হন। ১৯৬৩ সালে এনডিএফ এ যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে ন্যাপ দ্বিধা বিভক্ত হলে তিনি ভাসানী সমর্থিত ন্যাপের সুনামগঞ্জ শাখার সম্পাদক ও পরে সভাপতি হন। ১৯৬৫ সালে কপ (সম্মীলিত বিরোধী দলের) আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ এর গণ আন্দোলনে স্থানীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভাসানী ন্যাপ নির্বাচন বয়কট করলে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে সমর্থন দেন ও তাঁর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হলে তিনি সর্বদলীয় স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম কমিটির সুনামগঞ্জ মহকুমা শাখার সদস্য সচিব নিযুক্ত হন। সুনামগঞ্জের প্রাথমিক পর্যায়ের প্রতিরোধ যুদ্ধের অবসান ঘটলে তিনি ভারতে চলে যান। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রুট, ট্রেনিং সহ মুক্তিযুদ্ধের সফল সংগঠক হিসাবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। স্বাধীনতার পর তিনি ভারত প্রত্যাগতদের পুনর্বাসনে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৩ সালে তিনি ন্যাপের প্রার্থী হিসাবে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি পা-ারখাল বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৭ ও ১৯৮৪ সালে তিনি পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৮০ সালের পর তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৮৫-১৯৯৫ সাল পর্যন্ত (মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত) তিনি সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
এছাড়াও তিনি ১৯৫৬ সালে মাহমুদখালী খান খনন, ১৯৭৫ সালে পা-ার খালে বাঁধ নির্মাণ, ১৯৬৮ থেকে ৯৫ সাল পর্যন্ত সুনামগঞ্জ রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পালন, দীর্ঘদিন লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশন সুনামগঞ্জ মহকুমা শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন, বন্যা ও খরায় দুর্গতদের সেবা, পুনর্বাসন, নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধের সকল উদ্যোগে অগ্রসেনানী হিসাবে ভূমিকা পালন করেন। মজুতদার সুদখোর-ঘুষখোরদের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার। প্রতিটি আন্দোলনে সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।
আলফাত উদ্দিন আহমদ (মোক্তার সাহেব) এর জন্ম ১৯৩১ সালের ২১ জুন। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাঁক ইউনিয়নের মুক্তাখাই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ভাটি বাংলার বঞ্চিত মানুষদের প্রতিনিধি আলফাত উদ্দিন আহমদ। পিতার নাম আব্দুস সামাদ ও মাতার নাম জমিলা খাতুন।
১৯৪০ সালে সদর থানার গোবিন্দপুর এম.ই মাদ্রাসায় ৩য় শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৪৪ সালে সুনামগঞ্জ শহরের বুলচান্দ হাই স্কুলে ভর্তি হন ৭ম শ্রেণিতে। ১৯৪৬ সালের ৬ এপ্রিল সরকারি জুবিলী হাই স্কুলে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৪৮ সালে মেট্রিক পাশ করেন। ১৯৪৮-৫০ সাল পর্যন্ত সুনামগঞ্জ কলেজে লেখাপড়া করেন। ১৯৫০ সালে আইএ পরীক্ষায় অংগ্রহণ করেন।
১৯৫৭ সালে তিনি সুনামগঞ্জ কোর্টে মোক্তার হিসাবে পেশাগত জীবন শুরু করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি অ্যাডভোকেট হন।
১৯৬১ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর স্ত্রীর নাম আয়েশা খানম। পাঁচ সন্তানের (দুই পুত্র ও তিন কন্যা) জনক ছিলেন। তিন কন্যার মধ্যে সালেহা শিরীন, সালমা শিল্পী স্বামী সন্তানসহ লন্ডন প্রবাসী এবং সেলিনা শিপ্তা দেশে শিক্ষকতা পেশার সাথে জড়িত এবং স্বামী সন্তান সহ সুনামগঞ্জ শহরে বসবাস করছেন। দুই পুত্র সালেহ আহমদ ও এনাম আহমদ। তাঁরা স্ত্রী সন্তান সহ মায়ের সঙ্গে সুনামগঞ্জ শহরের পৈত্রিক বাসভবনে বসবাস করছেন। তাঁরা দুই জনই আইনজীবী।
- মাছ দেখতে হাজারো মানুষের ভিড়
- ধানের পর এবার শত কোটি টাকার খড়