উজানের করিম

এনামুল কবির
করিম ছিলেন গানের মানুষ, জীবনভর তাঁর প্রাণের আকুতি ছিলো এই একটাই; কোন গান- সেটা নিয়েও গেয়েছেন, যে ‘গানে মেলে প্রাণের সন্ধান।’ কিন্তু বিস্ময়কর ছিলো তাঁর দরদ, তাই গানের মধ্যে সচেতনভাবে নিয়ে এসেছিলেন সমষ্টিকে। তাই গান তাঁর একার ভাব-সাধনা হয়ে থাকলো না, ভাবগত বিজ্ঞপ্তিতে সেটা হলো অভাবের বিরুদ্ধে, সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ- সাধারণের পক্ষে মুক্তির ইশতেহার। এখানে করিম প্রাণের সন্ধানে গানের ভেতর জুড়ে দিয়েছিলেন তাঁর সমাজ ও মহত্তম জীবনের সন্ধানকেও। করিম এখানে পরিবর্তনকামী, তাঁর গান পরিপার্শ্বের ব্যবহারিক জীবনের একটা পর্যায়, এখানে তিনি গড়পরতা থেকে উজানের মানুষ।
এই মানুষটাকে নিয়ে আমার বলার বেশি কিছু নেই, এখন এই অধিকার আছে কেবল আমাদের লোকমান্য গবেষকদের। তবুও যে এই প্রয়াস, এটা একটা সময়কে স্মরণ করা এবং কোথায় করিম ভাটির নন বরং তীব্রভাবে উজানের, হতে পারে সেদিকেরও একটা পুনরুল্লেখ। তাই আমরা এখানে করিমের (জন্ম: ১৫ ফেব্রেুয়ারি, ১৯১৬ – মৃত্যু: ১২ সেপ্টেম্বর, ২০০৯) জীবনালেখ্যের দিকে যাবো না। যদিও এই মানুষটাকে আমাদের বিদ্বৎ সমাজ একটু দেরিতে অভিনন্দন জানিয়েছিলো, তাঁর ভূমিকা ও তাৎপর্য বুঝতে লেগে গিয়েছিলো তাঁদের দীর্ঘসময়। এখানে এই কথাটাও বলতে হয় এই সময়টাতে আমরা বেড়ে উঠেছিলাম। এর মধ্যে একটা সময় বাউল করিমের গাত্রোত্থান হচ্ছিলো, বলা যায় সেটা হচ্ছিলো তাঁর নিজ শক্তিমত্তার ভেতর থেকে। তখন করিম এখানে সেই বিদ্বৎদের এটাও স্বীকারে বাধ্য করেছিলেন যে, ভাবসাদৃশ্যে তিনি পুরোই আলাদা; তাঁর কেবল গান নয়, বলারও আছে বেশ। স্বভাবত এই সময়টাতে অন্যদেরও পুনরুত্থান ঘটে, তাঁরা হন সমান উচ্চারিত, বাউলের পৃথিবী যৎকিঞ্চিৎ হয়ে ওঠে বাউলদের। এখানে আত্মপ্রকাশের ভার তো বাউল করিমের ছিলোই, সে ভার থেকে মুক্ত হবার তাগিদও তাঁর থাকবে এতো স্বাভাবিক। আমরা সেটা দেখি তাঁর ‘বাউলা গানে, আমরা তখন দেখি তাঁর এই গান গাওয়ার স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করার মতো বেশ হুমকি ও বাধাও ছিলো। কিন্তু এখানে করিম ছিলেন ভিন্ন ধাতুর, তাই গড়পরতার নিয়মে তলিয়ে যাননি, শিরদাঁড়া সোজা রেখে গেয়ে গেছেন। শাসকদের শাসিয়েছেন, ‘শাসক তুমি হও হুশিয়ার।’ আমরা এমনটা পাই হাসন বা রাধারমণে? করিম জানতেন, তাঁর চিন্তা ও সাধনা বা তাঁর ভাবসম্পদকে অবহেলার পরিণাম কী হতে পারে, এটা হবে তাঁর ব্যক্তিসত্তার মৃত্যু বা অন্তর্ধান। তাই গ্রামের মোল্লাতন্ত্রের থেকে যখন গানবাজনা ছেড়ে দেবার প্রস্তাব এলো, মেনে নেননি; নিজেকে ছোটো করার মতো বোকামি করেননি। এখানে করিম ¯্রােতের অনুকুলের ছিলেন না, মৃত্যুবৎ ছিলেন প্রতিকুল তথা উজানের।
এখানে উজানের এই মানুষটার গান ছিলো বেঁচে থাকার মন্ত্রণা, সে কারণে ব্যক্তিসত্তার সপক্ষে দাঁড়াতে তাঁর অসুবিধা হয়নি; প্রেম বলুন, ভালবাসা বা দায়- বাধা ডিঙানো ছিলো তাঁর জন্য সহজ। তাই অনুকুলে না ভেসে, করিম গেলেন- প্রতিকুলে; উজান বেয়ে গানে দাঁড় করালেন তাঁর স্বভাবজাত প্রতিমূর্তি। এখানে গানের এই মানুষটি একরকম অস্বীকারই করলেন মরমিদের, বিপরীতে তুলে ধরছেন, গণ-মানুষের ‘দুঃখ দুর্দশার ছবি।’ অসাম্প্রদায়িকতার স্মৃতিকাতরতার মধ্যে দাবি করছেন সমতাকে। এখানে আমরা দেখবো উজানের থেকে করিম শাহ’র বাড়ি ছিলো একটু ভাটিতে, আবার ভাটি থেকে সেটা উজানেরও বটে; দেখা যাবে তাঁর গ্রামের নামেও জড়িয়ে আছে সে পরিচয়- উজানধল। তবুও অনেকে যে তাঁকে ভাটির মানুষ, ভাটির পুরুষ বলে ডাকেন বা পরিচিতি দেন, তাৎপর্যের দিক থেকে তাঁকে একটু দূরে ঠেলে দেওয়া হয় না তো! আমার মতে, হয় না; তবে তাৎপর্যের জায়গায় করিম যে উজানের ছিলেন, সেটা কোথায়- আমাদের বুঝতে হবে। মনে করি এটা বুঝতে না পারলে সাংস্কৃতিক লড়াই-সংগ্রাম কী সেটা বুঝতে পারবেন কেউ সামান্যই। আমার কাছে এই করিম যেমন উজানের, তেমনই এক বাধা-ডিঙানোর নাম; প্রতিক্রিয়াশীল বিশ্বে সেটা সাহসেরও। এই মানুষটি আমার সচেতনতায় প্রথম প্রবেশ করেন বাল্যকালেই। তখন ৮৪/৮৫ খ্রি: হবে। বর্ষাকাল, দিনের দুপুর, আমাদের উঠানে ধান শুকানো হচ্ছিল। সেবার কালন চাচা নামে একজনের সাথে আব্বা গল্প করছিলেন। করিম তখন এসে উপস্থিত হলেন তাঁর সুরে, তাঁর গানের বাণীতে; আমার পিতা গাইছেন, ‘ঘর ছানির কামলা চাচা দিলা না।’ এর সর্ম্পূর্ণটাই গাইলেন, যত ছোটই থাকি, এর সংক্রামটা সেদিন টের পেয়েছিলাম। (মনে পড়ছে- আমার পিতা ছিলেন একসময় একটা রেডিও’র মালিক!) বলা যায় এরপর থেকে করিম আর আমার থেকে দূরে যাননি।
অবশ্য তখনও করিম শাহ ছিলেন আমার কাছে একটা নাম বা শব্দমাত্র। মনে হয় তখন থেকে তাঁকে দেখার একটা আগ্রহ তৈরি হয়ে গিয়েছিলো। এই সুযোগটা আসে দুইতিন বছর পর, আমি তখন প্রাইমারী শেষ করে জগন্নাথপুরে। এটা শোনা কথা যে, এই সময়টাতে আমি দুষ্ট ছিলাম। কিন্তু এখন এটাও বেশ মনে পড়ছে, হাইস্কুল জীবনের শুরুর দিকে ক’টা মাস তেমন কথা বলতে পারিনি। তখন সাহসটা আমার খুব প্রয়োজন ছিলো এবং কে না জানে, শিক্ষাটাকে হতে হয় ব্যবহারিক। এর মধ্যে একদিন সে সাহসটা খোঁজে পাই, বলা যায় করিমই তখন উদ্ধার করেন আমাকে। কাজের লোকেরা বলাবলি করছিলেন, করিম শাহ এবারও আসবেন; নামটা শোনার পর জানতে চাই, কোথায়? তারা পাত্তাই দিচ্ছিলেন না, বলছিলেন- সেটা শোনে লাভ নেই; তুমি ছোট মানুষ। তবুও বলছিলেন, আছিম শাহ’র ওরস আজ, এখানে বড় এক শিল্পী গান গাইতে আসবেন; তাঁর নাম- করিম। মনে হয় তাঁরা এটাও বলছিলেন, লোকটা ‘বাউলা গান’ গায়। তাঁরা ক’জন আজ এখানে যাচ্ছেন তাঁর গান শুনতে। ভেতর থেকে এবার সাহসটা টের পেলাম, বাধা-নিষেধ তো আছে এবং এটা এক নিষিদ্ধ জগত। এখানে যেতে হলে গতানুগতিক হলে হয় না, তার থাকতে হয় সাহস এবং সে-ই হয় উজানের মানুষ। মনে স্থির করি আমাকেও ওখানে যেতে হবে, করিম শাহকে দেখতে হবে। আমার এক মামা, বয়সে ছোট, নাম- রফিক; এখন ইংল্যা- প্রবাসী। তাঁকে সেটা বলি, তিনিও রাজী হয়ে যান। কোনও রকম ঘরকে সামলে ও কাজের লোকদের রাজী করিয়ে সেবার আমরা ওখানে গিয়েছিলাম। একটা নাম বা শব্দ থেকে এই প্রথম আমি দেখি- শাহ আবদুল করিমকে।
তখন ছিলো আশ্বিন মাস। কিছুটা নৌকায়, কিছুটা হেঁটে আমরা ওরসে গিয়ে পৌঁছি। ফেরার সময় কোথায় মিলিত হবো সেটা দেখিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। তখনও বুকে একটা ধুরুধুরু ছিলোই। এরপর আমি ও আমার মামা হাত ধরাধরি করে এদিক-সেদিক ঘুরলাম। এই প্রথম নির্জনতা থেকে আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম একটা কোলাহলে, দেখলাম লোকউৎসব কী ও আবহমান বাঙালির প্রাণের আনন্দকে। এখানে আসরের সংখ্যা কম নয়, কিন্তু সমস্যা হলো কোন আসরে এসে করিম গাইবেন- ‘আমি কুল হারা কলঙ্কিনি’ আমরা জানতাম না। ততক্ষণে বড় একটা আসরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি, ভিরটা মনে হলো আগের তুলনায় বেড়ে প্রাচীরের মতো হয়ে গেছে। কোনও রকম মাথা ঢুৃকিয়ে বুঝতে পারি এখানে করিম বসে আছেন, সাক্ষ্যও দিলেন কেউ। হাতটা আমার তখনও মামার হাতে ধরাই আছে, আমরা ছোট দেখে লোকটির মনে দয়া হলো, তিনি আমাদেরকে তাঁর সামনে দাঁড়াবার সুযোগ করে দিলেন। (তাঁর নামটা জানতাম না, মুখের অবয়বও আর এখন মনে নেই, কিন্তু অবুঝ দুই বালকের প্রতি তাঁর সেদিনের যে অগ্রাধিকার, সেটা আজও গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় অুনভব করি।) এর মধ্যে দু-একজন করিমের গান গেয়ে শোনালেন, একসময় নিজেই দাঁড়িয়ে গেলেন করিম। বয়স হয়ে গিয়েছিলো তাঁর, দেখি- এ যেনো আড়মোড়া ভেঙে জাগা। কী দীর্ঘকায় মানুষ! একহারা গড়ন, গলা যেনো রাজহাঁসের মতো লম্বা, পরনে সাদা পাঞ্জাবী। শরীরে তখন একটা দুলনি খেয়ে যাচ্ছিলো, মনে হচ্ছিলো যেনো উঁকি-ঝুকি মারছেন, তাকাচ্ছেন এদিক-সেদিক। একজন তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে গেলো বেহেলা নিয়ে, তিনি মনে হয় একটু সময় নিলেন, আসর জুড়ে তৈরি হয়ে গেলো একটা তন্ময়তা। তারপর বড় গলায় ডাক পারার মতো শুরু করলেন তাঁর গান, বাধভাঙা একটা আনন্দ ও উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে।
সেবার এক-দুটি কলি মনে হয় করিম শাহ গাইলেন, বাকীটা দেখেছি গাচ্ছেন তাঁর শিষ্যরা; তিনি তখন শুধু হাততালি দিচ্ছেন ও মাথা নাড়ছেন- এতোটুকুই। এভাবে আমরা আছিম শাহে নিয়মিত হয়ে যাই, দিনে স্কুলে গেলে বন্ধুদের মন্তব্য শুনি, ‘কী রে কাল তো তুকে ওরসে দেখেছি।’ তাহলে এখানে যে আমরা একা যেতাম এমন নয়। কিন্তু একটা সময় খেয়াল করেছি, ৯০ এর দিকে হবে, এরপর থেকে করিম শাহ আর এদিকে আসেননি। এই সময়টাতে করিম সম্পর্কে আমরা কত কিছু শুনেছি, এর কতটা সত্য বা মিথ্যা বলতে পারবো না, তবে এসব তাঁকে একটা মিথ-চরিত্রে উন্নীত করেছিলো। এর মধ্যে অনেকটা ভেঙে দেবার গল্পও শুনে গিয়েছিলাম। এছাড়া করিমকে তো উজানে আসতেই হতো, লঞ্চের যুগে তিনি আসতেন উজানি গাও। এখান থেকে যেতেন এদিক-সেদিক, যেমনটা কখনও তাঁর গন্তব্য ছিলো কাগমারি সম্মেলন পর্যন্ত। আমরা জেনেছি, ১৯৫৭ সালের এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন, ভাসানীর সাথে পরিচয়ও করিয়ে দিয়েছিলেন। এখানে করিম লাভ করেছিলেন মাওলানা ভাসানীর স¯েœহ আর্শীবাদ, ‘যাও বেটা গানে একাগ্রতা ছাড়িও না। একদিন তুমি গণমানুষের শিল্পী হবে।’ বাউল করিমের মূলপ্রবণতাও আমরা দেখবো এর বাইরে কিছু নয়, কিন্তু এখনকার দুঃখজনক বাস্তবতা হলো এসব গণসংগীতের করিম থেকে তাঁকে আড়াল করা। এখানে উজানি গাওয়ের কথা বলেছিলাম, বলা বাহুল্য তখনকার সময়ে করিমের বাড়ি ফেরার পথও ছিলো ওই একটাই; সেজন্য বাউল থেকে করিম শাহ’র উজানিগাওসহ এতদঞ্চলের মানুষের সাথে বাড়তি একটা সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিলো। আমরা দেখবো শান্তিগঞ্জের উকার গাও তাঁর পীরের বাড়ি, তখনকার যে যোগাযোগ ব্যবস্থা, যখন-তখন চাইলে যাবার উপায় নেই। তাই আসা-যাবার পথে কখনও সখনও তাঁকে এখানে রাত কাটাতে হতো। এর মধ্যে এখানকার একজন তাঁর শিষ্য হয়ে গেলে সে সুযোগটা বেড়ে যায়।
বলতে গেলে তখন থেকে এতদঞ্চলের মানুষের কাছে করিম ছিলেন আটপৌরেই, কারও কাছে তিনি ভাই বা পীর সাহেব। এই গ্রামের একজন ছিলেন আলতাব আলী, তাঁর কথাটা এখানে মনে পড়ছে, এখন তিনি মৃত। তখনকার সময়ে উজানি গাও বাজারে ছিলো তার চায়ের দোকান, একদিন ‘করিম ভাই’য়ের সাথে তাঁর বেশ আড্ডার কথা এই লেখককে জানিয়েছিলেন। এসব আলাপের একটা সাধারণ ও প্রথাগত সূত্র লক্ষ করেছি, করিম ছিলেন এখানে বড় শিল্পী- একজন বড় ‘গাওয়াইয়া মানুষ’। কিন্তু কথা হচ্ছে, এখানে আমরা যে করিমকে সন্ধান করি, একদিন যে মানুষটা নিজেকে অতিক্রম করেছিলেন, এখন আমরা তাঁকে জানবো কীভাবে বা তাঁর সেরকম ভাবসম্পদের সাথে পরিচিত হবো? যদিও এটা হলো তাঁর সমাজ-মনস্কতার দিক, যা বাদ দিলে অন্যদের সাথে করিমের পার্থক্য থাকে না। তাই প্রকৃত অর্থে আমরা মনে করি তাঁর প্রগতিশীল ও সেকুলার দিকটা তাঁর সেই সমাজ-মনস্কতার দিক থেকে বিচার করতে হবে। সার্বিক এই মূল্যায়নে আমরা দেখবো, তিনি বড় শিল্পীই নয়, কেবল বড় ‘গাওয়াইয়া মানুষ’ও না, ভূমিকা ও তাৎপর্যে ছিলেন জৈব বুদ্ধিজীবী; গড়পরতা থেকে আলাদা এবং উজানের। মূলত এর জন্য তাঁকে বেশ মূল্য শোধ করতে হয়েছিলো, এখানে তাঁর গ্রামের মানুষদের শ্রেণিগত অবস্থা যাইহোক, গাটচড়ায় ছিলো শাসক শ্রেণির দূরবর্তী ভাবার কারণ নেই। করিম এখানে ছিলেন কদিনের নাইটস্কুল পাশ, শ্রেণি ও রাজনীতি সচেতন শ্রমিক, গণসংগীত শিল্পী এবং প্রতিবাদী। তিনি তাঁর সমাজ-স্বাস্থ্যের প্রতিক্রিয়াশীল দিকটা ভালোই চিনতে পেরে গিয়েছিলেন। বল্লালীয় কৌলিন্য যেখানে বিজয় সরকারকে গ্রাম ছাড়া করেছিলো, কিন্তু করিম থেকে যেতে পেরেছিলেন উজানধল, মোল্লাতন্ত্র ব্যর্থই হয়েছিলো। তাঁকে যেতে হয়নি ভাঙাঢর। সেটা এতো সহজ ছিলো না, এজন্য তাঁকে বেশ লড়তে হয়েছিলো। আমরা তাঁর সমাজ-মনস্ক চিন্তা ও সাংস্কৃতিক লড়াই-সংগ্রাম বাদ দিলে কতটা আর করিমকে পাবো?
এখন এরকম একটা সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের প্রশ্ন যদি থাকে, তবে তাঁর দর্শনহীন শিল্পীসত্তা নির্মাণের বিরুদ্ধে আমাদের দাঁড়াতে হবে। এসব নক-দন্তহীন করিমচর্চায় নিয়ে আসতে হবে সেই উজানের প্রতিবাদী করিমকে। এখানে আমরা পাবো প্রকৃত শাহ আবদুল করিম, গণ-মানুষের করিমকে। আমাদের দায়টা হবে এখানে কেবল তাঁর ভালবাসায় এই পৃথিবীটাকে বদলে নেওয়া। পৃথিবীটা বাউলের হবেই।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, শাহজালাল মহাবিদ্যালয়, জগন্নাথপুর।
১৪/০২/২০২৩