একে অপরকে বিষোদগার করে বক্তব্য দিচ্ছেন পদ প্রত্যাশীরা

বিশেষ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আর দুই দিন পর অনুষ্ঠিত হবে (১১ জানুয়ারি, শনিবার)। সম্মেলনকে ঘিরে চাঙা আওয়ামী লীগ। উপজেলায় উপজেলায় কর্মীসভা হচ্ছে। নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা রাজধানীতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তদবির শেষে ফিরেছেন জেলা শহরে। সম্মেলনকে সামনে রেখে সকলেই নিজ নিজ পক্ষের কর্মী জমায়েত বাড়ানোর জন্য চেষ্টায় নেমেছেন। প্রস্তুতির শেষ সময়ে নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা একে অপরকে বিষোদগারও শুরু করছেন।
২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি মতিউর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন। পরে ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছিল। প্রায় আট বছর পর হওয়া সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে সভাপতি ও সম্পাদক হতে আলোচনায় রয়েছেন ১৬ জন। তিন সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রার্থী আছেন ১৪ জন।
সভাপতি পদে পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মতিউর রহমান, সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুহিবুর রহমান মানিক এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট, জেলা মহিলঅ আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহানা রব্বানী, বর্তমান যুগ্মসম্পাদক অ্যাড. নান্টু রায়, যুগ্মসম্পাদক অ্যাড. হায়দার চৌধুরী লিটনের নাম রয়েছে আলোচনায়।
সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখ্ত, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সহ-সভাপতি নোমান বখ্ত পলিন, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক খায়রুল হুদা চপল, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক শংকর চন্দ্র দাস ও জুনেদ আহমদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাড. আক্তারুজ্জামান সেলিমের নাম কর্মীদের আলোচনায়।
সম্মেলন প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে এসে দলীয় নেতারা পরস্পরকে দোষারোপ করে সভা-সমাবেশ প্রচরণায় বক্তব্য দেওয়া শুরু করায় উত্তেজনাও কিছু বেড়েছে।
সাধারণ সম্পাদক হতে আগ্রহী সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখ্ত বুধবার বলেছেন, বর্তমান কমিটি এককথায় ব্যার্থ। তারা সুনামগঞ্জে সরকারের হাজার কোটি টাকার উন্নয়নের কোন প্রচার সাধারণ মানুষের কাছে উপস্থাপন করতে পারে নি। অসুস্থ্য ও বিদেশীদের দিয়ে হওয়া কমিটিতে জাসদ, বাসদ ও ছাত্রইউনিয় থেকে আগতরাই গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছিল। ১২ টি উপজেলার একটিতেও আট বছরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারে নি তারা। এমন নেতৃত্ব বদলাতে হবে। নিশ্চয়ই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের ত্যাগী, যোগ্যদের দিয়ে এবার জেলা কমিটি করবেন।
সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে আগ্রহী বর্তমান কৃষি বিষয়ক সম্পাদক করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বললেন, রাজনীতি ছাড়া অন্য কিছুই করি না আমি। পরিবারের চার ভাই দলের জন্য জেল কেটেছি। পদ দিলেও করবো, না দিলেও দলের জন্য করবো। দীর্ঘদিন ধরে যারা মাঠে রাজনীতি করছেন। কর্মীদের সঙ্গে যাদের নিবির যোগাযোগ আছে, সুখে দুঃখে কর্মীর পাশে থাকে, সেই ধরণের নেতৃত্ব খুঁজলে নিশ্চয়ই বঞ্চিত হব না।
সভাপতি পদ পেতে আগ্রহী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট বললেন, প্রায় আট বছর আগে হওয়া জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঢাকায়ই থেকেছেন পুরো সময়কাল। কালেভদ্রে সুনামগঞ্জে অতিথির মত এসেছেন তারা। কোন উপজেলায় সাংগঠনিক কোন কাজে তারা যান নি। সমাবেশও করেন নি। সামনে কঠিন দিন দুর্বল নেতৃত্ব দিয়ে বিরোধীদের মোকাবেলা করা যাবে না। আশাকরছি শক্তিশালী বলিষ্ট নেতৃত্বের হাতেই দলের দায়িত্ব দেবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
সভাপতি পদ পেতে আগ্রহী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুহিবুর রহমান মানিক এমপি বললেন, টানা ২৬ বছর দলের জেলা কমিটির একইপদে অর্থাৎ সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যেখানেই দায়িত্ব দেবেন, নিষ্টার সঙ্গে পালন করবো।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন বললেন, জীবন জীবিকার জন্য হাইকোর্টে প্র্যাক্টিস করছি। সিংহভাগ সময় সুনামগঞ্জেই কাটাই। বন্যা, করোনা, দিরাইয়ে সংখ্যালঘু গ্রামে হামলাসহ গত আট বছরে সুনামগঞ্জের মানুষের এমন কোন দুর্যোগ নেই যেখানে ছিলাম না। মুজিববর্ষ যেভাবে আমরা করেছি, দেশের কম জেলায় সেভাবে পালন হয়েছে। যারা বড় বড় কথা বলেন, তাদের অনেকে ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্মা জানাতে আসেন না। দায়িত্ব পালনকালে চারটি বর্ধিত সভা সফলভাবে করেছি। এর আগে বর্ধিতসভাই করা যায় নি।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বললেন, দলে ঐক্য ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। বিগত সময়ের কার্যকলাপ বিবেচনায় নিয়েই কেন্দ্রীয় নির্দেশনা তৈরি হবে। ঢাকায় থাকলে দলের ক্ষতি হয় না, কেন্দ্র থেকেই সারা দেশে দল পরিচালিত হয়। মাসে মাসে সভা হয়েছে দলের । এমন কোন জাতীয় কর্মসূচি নেই, যেটি এই সময়ে পালন হয় নি। দলের কাজ আমরাই চালিয়েছি অন্য কেউ নয়।
এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাংগঠনিক সম্পাদকের তিন পদ পেতে আগ্রহী রয়েছেন ১৪ সাবেক ছাত্রনেতা।
এরা হচ্ছেন, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি অ্যাড. বোরহান উদ্দিন দোলন ও অ্যাড. মনিষ কান্তি দে মিন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. আজাদুল ইসলাম রতন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অ্যাড. নূরে আলম সিদ্দিকী উজ্জ্বল, সাবেক ছাত্রনেতা জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ সম্পাদক সীতেশ তালুকদার মঞ্জু, বর্তমান প্রচার সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা গোলাম সাবেরীন সাবু, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অ্যাড. আব্দুল আজাদ রোমান, অ্যাড. হাসান মাহবুব সাদী, অ্যাড. ছায়াদুর রহমান, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা সেলিম আহমদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদ চৌধুরী প্রমুখের নাম আলোচনায় রয়েছে এই পদে।
বর্তমান কমিটিতে থাকা তিন সাংগঠনিক সম্পাদক শংকর চন্দ্র দাস, সিরাজুর রহমান সিরাজ এবং জুনেদ আহমদও শেষ পর্যন্ত এই পদে বহাল থাকতে পারেন জেলা নেতাদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে।