পূর্ব আশঙ্কা এবং প্রতি বছরকার অভ্যাস মত এ বছরও উদ্বোধনের ৮ দিন পরও জেলার ৮ উপজেলায় সরকারিভাবে ধান ক্রয় করা শুরু হয়নি। এ জেলায় এবার বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ টন। সরকার ক্রয় করবে মাত্র সাড়ে ১৭ হাজার টন। অর্থাৎ উৎপাদিত ধানের শতকরা এক দশমিক চৌত্রিশ ভাগ ধান কেনা হবে সরকারি ব্যবস্থাপনায়। সরকারিভাবে যদিও উৎপাদনের যৎসামান্য ধান কেনা হচ্ছে, কৃষকদের ধারণা এই ক্রয় প্রক্রিয়া বজায় থাকলে বাজারে ধানের দামে ভারসাম্যতা বজায় থাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো সরকারি প্রতিষ্ঠান খাদ্য বিভাগের সময়োচিত পদক্ষেপের অভাবে গতানুগতিকভাবে এবারও সময়মতো ধান ক্রয় কার্যক্রম শুরু সম্ভব হলো না। এর অনিবার্য প্রভাব পড়েছে বাজারে ধানের দামে। কৃষকরা হাজার টাকার নিচে বাজারে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ক্রয় প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার পিছনে যদিও সরকারি প্রতিষ্ঠানটি নানাবিধ প্রক্রিয়াগত জটিলতার বিষয় সামনে এনেছে, কিন্তু কৃষকদের বিশ্বাস ক্রয় প্রক্রিয়াকে ইচ্ছা করেই বিলম্বিত করা হয়। নতুবা প্রতি বছরই কেন এমন বিলম্ব হয়ে থাকে?
গতকাল দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে জেলার সরকারিভাবে ধান কেনার সার্বিক অবস্থা নিয়ে যে খবর প্রকাশ করা হয় তাতে দেখা যায় কৃষি অ্যাপ ব্যবহার করে কৃষক তালিকাভুক্তির পর এবার ৭ উপজেলায় ধান কেনার সিদ্ধান্ত হয়। এই ৭ উপজেলায় এখনও কৃষক বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়নি। কৃষকের সুবিধা, স্বচ্ছতা ও গতি আনার জন্য যে প্রযুক্তি ব্যবহার সেই প্রযুক্তিই যদি বিলম্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন অশেষ দুঃখ হয় বৈকি। মূলত প্রযুক্তির কোন দোষ নেই। এর পিছনে কলকাঠি নাড়েন যারা সেই কর্মাধ্যক্ষরাই এজন্য দায়ী। দুঃখ হয়, জনগণের করের টাকায় যাঁরা জনসেবার জন্য নিয়োজিত হন তাঁরা কখনও দেশপ্রেম ও মানুষের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে পারদর্শিতা দেখাতে পারেন না। এই যে সরকারি গুদামে ধান কেনা দেরি হচ্ছে এতে বাজারে ধানের দাম কমে গেছে। প্রান্তিক কৃষকরা ধান তোলার পরই নানাবিধ প্রয়োজনে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন। বাজারে দাম না থাকায় কম দামেই তাঁরা বিক্রি করতে বাধ্য হন। অথচ কৃষি ও কৃষককে আমরা জাতির মেরুদ- হিসাবে বলে থাকি। বলা হয় কৃষক বাঁচলে বাঁচবে বাংলাদেশ। কিন্তু বাস্তবে কৃষকের দুঃখ দূর করতে সরকারি কর্মসূচিগুলোকে কখনও প্রকৃত কৃষকের কাছে সহজলভ্য করে তোলা যায়নি।
আরেকটি বড় অভিযোগ, সরকারি ক্রয়কেন্দ্র ধান বিক্রি করতে প্রকৃত কৃষকরা বিভিন্ন ভোগান্তির শিকার হন। তাঁদের বাড়ি থেকে ক্রয়কেন্দ্রে ধান নিয়ে আসা থেকে শুরু করে বিক্রির টাকা পেতে বেশ লম্বা সময় লেগে যায়। অনেক কৃষক ধানের সঠিক আর্দ্রতা না থাকায় ধান বিক্রি করতে পারেন না। রয়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। তাই এই সহজ সরল প্রান্তিক কৃষকরা তুলনামূলক অনেক কম দামেই খোলা বাজারে ধান বিক্রি করেন। মূলত সরকারি ক্রয়কেন্দ্রের সুবিধা পেয়ে থাকে মধ্যসত্ত্বভোগী, দালাল, ফরিয়া, মিল মালিক প্রভৃতি গোষ্ঠী। অর্থাৎ অকৃষকরাই এই সরকারি কৃষক-বান্ধব কর্মসূচির সুবিধা নিজেদের পকেটে তোলে নেন।
প্রতি বছর এরকম সময়ে আমরা প্রকৃত কৃষকদের নিকট থেকে ধান কেনার জন্য পত্রিকায় সংবাদ ও সম্পাদকীয় মন্তব্য প্রকাশ করি। কিন্তু এসব চিৎকার অর্থহীন হিসাবে প্রতিভাত হয়। তবুও আমরা আমাদের কথা বলে যাব নিজেদের দায়বোধ ও বিবেকের জায়গা থেকে। এবারও তাই আবারও বলি, সরকারি ক্রয়কেন্দ্রগুলোতে যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে এবং দালাল ও মধ্যসত্ত্বভোগী ছাড়া প্রকৃত কৃষকদের নিকট থেকেই ধান কেনা হয়। এটি হলো দেশের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ খাত কৃষি ও কৃষককে বাঁচিয়ে রাখার তথা তাঁদের ভিত্তি শক্ত করার ইচ্ছাপ্রসূত আকাক্সক্ষা। আমরা চাই সরকারি দায়িত্বশীলরা একই ধরনের আকাক্সক্ষা পোষণ করুন।
- আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধ যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা
- জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাচন/ দুই মেরু এক মোহনায়