‘এরকম বন্যায় থাকে না কিছুই’

স্টাফ রিপোর্টার
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সুনামগঞ্জ- সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখলাম। খবর দেখতে দেখতে তড়িৎ গতিতে অবনতি হয়েছিল বন্যার। এরকম বন্যায় কিছুই থাকে না, এখানেও তাই হয়েছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে বন্যা মোকাবেলায় দেশের সকলবাহিনী কাজ করেছে। সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ কোস্টগার্ড দ্রুত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ত্রাণ সরকার দিচ্ছে। সারাদেশের হৃদয়বান লোকজনরাও বন্যার্তদের পাশে ত্রাণ নিয়ে আসছেন। এখন ঘরবাড়ি নির্মাণ প্রয়োজন। তিনি বলেন, দুর্গতদের পুনর্বাসনের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। নষ্ট হওয়া বইও শিক্ষার্থীরা পাবে।
মঙ্গলবার বেলা দুইটায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বন্যা পরবর্তী আইন-শৃঙ্খলা, ত্রাণ কার্যক্রমসহ সার্বিক বিষয়ে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, পুনর্বাসনের কাজে যতদিন সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন ততদিন সেনাবাহিনী এখানে থাকবে।
মন্ত্রী বলেন, সকলের প্রচেষ্টায় করোনা মোকাবেলা সফলতায় সারা বিশে^ পঞ্চম স্থানে ছিল বাংলাদেশ, এই দুর্যোগও সকলে মিলে মোকাবেলা করবো। মন্ত্রী বলেন, হাওরাঞ্চলে যত্রতত্র সড়ক হচ্ছে, সেটি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। সুনামগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধের দাবির যৌক্তিকতা আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, দুটি আশ্রয় কেন্দ্রে ডাকাতির ঘটনা একজন সংসদ সদস্য জানানোর পর সিলেটের ডিআইজিকে তড়িৎ ব্যবস্থা নেবার নির্দেশ দিয়েছিলাম। এরপর আর এ ধরণের ঘটনার খবর পাই নি।
ত্রাণ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েস্বর চন্দ্র রায় এর মন্তব্যের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা দিবাস্বপ্ন দেখছে। সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যার খবরে প্রধানমন্ত্রী রাতে ঘুমোতে পারেন নি, আমাদেরকে দ্রুত দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় যা যা করা প্রয়োজন সবকিছু করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সেভাবেই করেছি। এখনো মানুষের পাশেই আছে সরকারের সকল শক্তি। তারা মানুষের পাশে আসে না, সমালোচনা করে, এজন্যই মানুষ তাদের প্রত্যাখান করেছে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন প্রথমে দুর্গতদের ত্রাণ, পরে দ্রত ক্ষতিগ্রস্ত গৃহ ও সড়ক নির্মাণ। নিজের ভিটায় যেতে পারছেন না হাজারো পরিবার। এসব মানুষদের ছোট ছোট বসতঘর নির্মাণ করে দিতে হবে। গত ৩০ বছরের নির্মাণকৃত গ্রামীণ সড়ক একেবারে নিশ্চিহৃ হয়ে গেছে, এগুলো চলাচলের উপযোগী করতে হবে। সড়ক যেখানে ভেঙেছে, ওখানে সড়ক নয়, সেতু হবে। ফসল মৌসুমের আগেই কৃষকদের ত্রাণের প্যাকেটের মত সার বীজের প্যাকেট দিতে হবে।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং পরিকল্পনা মন্ত্রী একসঙ্গে আসার একটা গুরুত্ব আছে, সকলের নজর এইদিকে পড়বে। সুনামগঞ্জের দিকে দেশের মানুষের নজর আছে, এই বন্যায় দুর্গত সুনামগঞ্জের পরিচিতি আরও বেড়েছে। তিনি বলেন, আনন্দের বিষয় হচ্ছে- সহযোগিতায় মানুষের অংশগ্রহণ বেড়েছে, মানুষের আয় বেড়েছে। গত ১২ বছরের একটানা কর্মের ফলে মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত হয়েছে, এজন্য দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে অন্যরা সহায়তা করতে পেরেছে।
তিনি সরকার, রাজনৈতিক কর্মী, সুশীল সমাজের লোকজন সকলে দুর্যোগ মোকাবেলার টিম হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান।
এসময় সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শওকত ওসমান, এডিশনাল ডিআইজি নুরুল ইসলাম, র‌্যাব এর অতিরিক্ত পরিচালক কামরুল হাসান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট হায়দার চৌধুরী লিটন, সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুর রহমান সিরাজ, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রজত কান্তি সোম, পিপি খায়রুল কবির রুমেন, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামছুল আবেদীন, জেল সুপার নূরশেদ আলম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম, সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
পরে দুই মন্ত্রী শহরের সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় এবং শহরতলির গৌরারং ইউনিয়নের সোনাপুর বেদে পল্লীর বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।