করোনাকালে ১৫% মেয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার
‘আর নয় বাল্য বিয়ে, এগিয়ে যাবো স্বপ্ন নিয়ে’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭, বিধিমালা-২০১৮ ও জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (২০১৫-২০৩০) বিষয়ক নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় সুনামগঞ্জ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে শহিদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ,জে,এম রেজাউল আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শেখ মহি উদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. শামছুন নাহার বেগম শাহানা রব্বানী, সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নূরুল মোমেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এফআইভিডিবির বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ প্রকল্পের সমন্বয়কারী মো. জাহেদ আহমদ।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাল্য বিবাহের কারণে করোনাকালীন প্রায় ১৫% মেয়ে শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে। নোটারী পাবলিক, স্থানীয় কাজী সাহেব, জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় এ ধরণের ঘটনা ঘটছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা ছাড়া বাল্য বিবাহ বন্ধ করা সম্ভব না। মানুষকে সচেতন করতে ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে এমনকি গ্রাম কমিটি গঠনের মাধ্যমে তা রোধ করতে হবে। তবে অযথা কাউকে হয়রানি করা যাবে না।
সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নূরুল মোমেন বলেন, বাল্য বিবাহ সমাজের জন্য একটি ব্যাধি। বাল্য বিবাহের কারণে মেয়েদের শরীরে নানান সমস্যা দেখা দেয়। দেশে আইন আছে কিন্তু সর্বত্র আইনের প্রয়োগ হচ্ছে না। অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়েদের কিছু অসাধু জনপ্রতিনিধিরা জন্ম নিবন্ধন তৈরী করে দিচ্ছে। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হলে বাল্য বিবাহ কমে আসবে।
সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড.শামছুন নাহার বেগম শাহানা রব্বানী বলেন, বাল্য বিবাহ রোধে সরকার খুবই কঠোর অবস্থানে থাকায় এখন বাল্য বিবাহ অনেকটাই কমে এসেছে। বাল্য বিবাহ রোধে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। সকলের সচেতনতায় এই দেশ বাল্য বিবাহমুক্ত হবে এমনটাই প্রত্যাশা করি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শেখ মহি উদ্দিন বলেন, মানুষের সচেতনতা ছাড়া মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সব কিছুর সমাধান করা সম্ভব না। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দুই বছর শাস্তি দেয়ার বিধান রয়েছে। তাছাড়া ১৮ বছরের নিচে হলে আমরা শাস্তি দিতে পারি না, তখন তাদের ঢাকা গাজীপুরে সংশোধানাগারে পাঠাতে হয়। বাল্য বিবাহ রোধে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি সক্রিয় থাকলেও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি ঠিক মতো কাজ করে না। অথচ বাল্য বিবাহের ক্ষেত্রে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত দন্ড দেয়ার বিধান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিশেষ ক্ষেত্রে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের আদালতের মাধ্যমে আবেদন করে অনুমতি সাপেক্ষে বিবাহের সুযোগ রয়েছে, কিন্তু এই আইন না মেনে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অনেকে অপরাধ কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। বাল্য বিবাহ প্রতিরোধকে সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিতে হবে। আমরা সবাই যেনো আইন ও বিধি মেনে চলি।
জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি, সমাজকর্মী, সংস্কৃতিকমী, নারী নেত্রীবৃন্দের অংশ গ্রহণে অনুষ্ঠিত সংলাপে আরো বক্তব্য রাখেন জেলা মহিলা পরিষদের সহসভাপতি সঞ্চিতা চৌধুরী, জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, হিন্দু বিবাহ নিবন্ধক সুবিমল চক্রবর্তী চন্দন প্রমুখ।