বিশ্ব ক্যানসার দিবস উপলক্ষে জাতীয় গণমাধ্যমসমূহ দেশের ক্যানসার চিকিৎসা সুবিধা নিয়ে হতাশাজনক খবর পরিবেশন করেছে। দেশের কোথাও ক্যানসার চিকিৎসার সুব্যবস্থা নেই উল্লেখ করে খবরগুলিতে সামর্থবান রোগীদের বিদেশ গমন প্রবণতা বৃদ্ধি ও অসমর্থদের বিনা চিকিৎসায় যন্ত্রণা ভোগ করার তথ্য উঠে এসেছে। বর্তমানে সারা বিশ্বের মতোই বাংলাদেশে ক্যানসার একটি বড় প্রাণঘাতী অসুখের নাম। প্রায় শতাধিক ধরনের ক্যানসার মানবশরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গে বাসা বাঁধে এবং একসময় রোগীর প্রাণ নাশের কারণ হয়। ভেজালযুক্ত খাবার গ্রহণ, জলবায়ু পরিবর্তন, দূষিত বায়ুম-ল; প্রভৃতি মানবসৃষ্ট কারণে ক্যানসারের প্রাদুর্ভাব ক্রমাগত বাড়তে দেখা যায়। উদ্বেগজনক এই মরণব্যাধির শিকার হয়ে কত মানুষ অসহায়ভাবে যন্ত্রণা সইতে সইতে একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন সে হিসাব সরকারের কোনো দপ্তর রাখে না। এমনকি প্রতি বছর কী পরিমাণ লোক ক্যানসার আক্রান্ত হন সে হিসাবও পাওয়া যায় না কোথাও। এরকম এক হতাশাজনক বাস্তবতার মধ্য দিয়েই এবার পালিত হল বিশ্ব ক্যানসার দিবস। আরও হতাশার বিষয় হলো, ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানোর কোনো লক্ষণও দৃশ্যমান নয়।
ক্যানসার সনাক্তকরণ থেকে পরবর্তী চিকিৎসা ধাপগুলো অতিমাত্রায় ব্যয়বহুল। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ যারা পেটের অন্ন জোগাতেই হিমশিম খায় তাদের পরিবারের কেউ ক্যানসার আক্রান্ত হলে যে দুরবস্থার সম্মুখীন হন তা ভুক্তভোগী ছাড়া আর কারও পক্ষে বুঝা সম্ভব নয়। আমাদের চারপাশের বাস্তবতা লক্ষ্য করলেই বহু পরিবারের এমন অসহায় অবস্থার খবর দেখতে পাব। আমাদের সংবিধানে চিকিৎসবাকে মানুষের মৌলিক অধিকার পর্যায়ে রাখার বিষয়টি ¯্রফে কাগুজে প্রত্যয়। বাস্তবে অতি সাধারণ অসুখ বিসুখেও মানুষ তেমন করে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য সুবিধা পান না। ক্যানসার বা অন্য জটিল রোগ হলে তো আর কথাই নেই। ফলে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে সহায়সম্পদ বিক্রি করে বা ধারদেনা করে চিকিৎসা শুরু করেন কিন্তু তারা আর চিকিৎসা শেষ করতে পারেন না। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট পরিবারের সম্পদ হানি ঘটলেও রোগমুক্তি ঘটছে না। জনস্বাস্থ্যের এমন বিড়ম্বনাকর দৃশ্যকে সামনে রেখে একটি দেশের যেকোনো উন্নয়নই অর্থহীন হয়ে পড়তে বাধ্য।
ক্যানসারের মতো কিডনি রোগ, হার্ট, লিভার বা লাং এর চিকিৎসা প্রভৃতি ব্যয়বহুল প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য কাঠামোর অবস্থা শোচনীয়। মানুষ দেশে একটি গণমুখী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কামনা করেন এবং এই আকাক্সক্ষা আমাদের স্বাধীনতার মৌলিক আদর্শের সাথে সংগতিপূর্ণ। পৃথিবীর অনেক দেশেই নাগরিকদের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে চিকিৎসা দানের ব্যবস্থা আছে। এজন্য প্রতিটি নাগরিককে বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনা যেতে পারে। বীমা নিরাপত্তা থাকলে মানুষ সুস্থ অবস্থায় বীমার প্রিমিয়াম দিতে কখনও কার্পন্য করবেন না। সরকার সম্প্রতি বাধ্যতামূলক পেনসন ব্যবস্থা চালুর একটি চিন্তা শুরু করেছেন। এটিও আওতাভুক্ত জনগোষ্ঠীর নিকট থেকে দীর্ঘ মেয়াদে চাঁদা নিয়েই পরিচালিত হবে। এই সর্বজনীন পেনসন সুবিধার চাইতেও অধিক জরুরি হলো নাগরিকদের জটিল চিকিৎসার জন্য সরকারি সুবিধা নিশ্চিত করা। একটি গণবান্ধব সরকারের কাছে নাগরিকদের এমন প্রত্যাশাই থাকে।
দেশের প্রতিটি উপজেলা, জেলা ও বিভাগে আমরা একটি কার্যকর স্বাস্থ্যকাঠামো দেখতে চাই। যেখানে অন্তত প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ ন্যূনতম চিকিৎসাসেবা পেতে পারবেন। এজন্য নাগরিকদের আর্থিক সক্ষমতার স্তর অনুযায়ী স্বাস্থ্যকার্ড বিতরণের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এরকম হলে কেবল সামর্থহীনরাই বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে সরকারি চিকিৎসাসেবা পেতে পারবেন। মানুষ যখন নিজের স্বজনকে প্রায় বিনা চিকিৎসায় চোখের সামনে মরতে দেখে তখন তার ভিতর যে যন্ত্রণা ও ক্ষোভ তৈরি হয় সেটি রাষ্ট্রের মানবিক চেহারার অন্তসারশূন্যতাকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসে। আসুন নাগরিকদের এমন অসহায় কষ্টকর উপলব্ধিকে উপসম করার ব্যবস্থা করি।
- জেলা সম্মেলনের পর তিন ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি
- বেআইনি ইজারা বন্ধের দাবিতে আবেদন