খরায় বিবর্ণ ধানের চারা/ দুশ্চিন্তায় কৃষক, হাওরে দোয়া

জামালগঞ্জ প্রতিনিধি
খরার তীব্রতায় বোর জমির চারা লালচে হয়ে যাচ্ছে। ধানের গোড়ায় পাম্প মেশিনে পানি দিলেও আগায় পানি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে খরায় ৬টি ছোট বড় হাওরের উপজেলা জামালগঞ্জের ৪৫০টি পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। এছাড়াও সুরমা, পিয়াই, কাল্যানী নদীর পানির স্তর নেমে গেছে। এতে দেখা দিয়েছে তীব্র পানির সংকট। দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন কৃষকরা।
সোমবার দুপুরে সরজমিনে হালির হাওরে ঘুরে দেখা যায়, লম্বাবাক ফুটবল খেলার মাঠে কয়েকশ’ কৃষক আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টির জন্য দোয়া করছেন। দোয়া পরিচালনা করেন লম্বাবাক জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাও. ইয়াহিয়া আহমদ জুয়েল। দোয়া মাহফিলে থাকা গ্রামের মুরব্বি মো. সবর আলী জানান, অন্য বছর এমন সময় বেশ কয়েকবার বৃষ্টি হতো। কিন্তু এবার আকাশে মাঝে মাঝে মেঘ দেখা গেলেও বৃষ্টির খবর নেই। খরায় ধানের জমি খা খা করছে।
কৃষক বলছেন, ফাল্গুনে বৃষ্টি কম হলেও আগে কখনও প্রকৃতির এমন বিরূপ আচরন দেখা যায়নি। এবছর এমনিতেই খরার ভাব। হাওরের কোথাও পানি নেই। নদী থেকে সেলু মেশিনে পানি দিলেও তা কিছুক্ষণ পরই শুকিয়ে যায়। এখন ধানের থুর গজানোর সময়। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে থুর অঙ্কুরেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই বৃষ্টির জন্য আমরা হাওরে দোয়া পড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি।
এবার ধান গাছ যেভাবে বেড়ে উঠেছিল তাতে উৎপাদন বেশী হতো। আমাদের হিসাবে প্রতি একরে ৫০ থেকে ৫৫ মন ধান উৎপাদন হওয়ায় কথা। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে ধান গাছ মিইয়ে পড়ছে। এতে উৎপাদন কমে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
কৃষক শাহেদ আলী তালুকদার বলেন, আমি ২০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। জমি তৈরি, ধান রোপন, আগাছা পরিষ্কার ও একদফা সার কীটনাশক দিয়েছি। ধানের চারাও তর তর করে বেড়ে উঠেছিল। আশা ছিল প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ২২ মন ধান হবে। কিন্তু বৃষ্টি ও পানির অভাবে ধানের চারার বেড়ে উঠা থমকে গেছে।
তিনি বলেন, অন্য বছর এই সময়ে জমিতে হাল্কা বৃষ্টির পানি থাকে। কিন্তু এবার বৃষ্টি না হওয়ায় নদী থেকে অনেক টাকা খরচ করে পানি দিতে হচ্ছে। ৩ থেকে ৪ দিন পর পর পানি দিয়েও জমি ভিজিয়ে রাখা যাচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কায়ছার আহমেদ বলেন, জামালগঞ্জে ২৪,৪৭০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার বেশি ফলনের আশা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে কিছু ফলন কম হতে পারে। তবে আবাহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে- আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি হলে ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে।