গণপরিবহনে কর্মবিরতির আলটিমেটাম/ নির্ধারিত তারিখের আগেই সমাধান হোক

জেলার পরিবহন শ্রমিক মালিকরা এবার বেশ আগে থেকেই তাদের দাবি দাওয়া কর্তৃপক্ষের নিকট জানিয়ে আসছেন। এর আগে গত ৩ মে থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দিলেও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দাবি মানার আশ্বাস ও চলমান এসএসসি পরীক্ষার কথা বিবেচনা করে সে দফা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়। গতকাল প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের দাবি বিষয়ে পুনরায় আলটিমেটাম ঘোষণা করেন এবং দাবি মানা না হলে আগামী ২৯ মে থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দাবি মানার ঘোষণা দেয়ার পরও তা না মানার অভিযোগ আনেন। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা মামলাসহ আরও একটি মামলা প্রত্যাহার, সুনামগঞ্জ-সিলেট রুটে চাঁদাবাজি ও শ্রমিক মারধর বন্ধ করা ইত্যাদি। একটি বিষয় ইতিবাচক যে, পরিবহন নেতৃবৃন্দ হুটহাট করে ধর্মঘট ডেকে বসেননি যেরকম এর আগে আমরা বহুবার দেখেছি। শ্রমিক সংগঠনের ধর্মঘট ডাকার আইনি অধিকার আছে। ন্যায্য দাবি-দাওয়া নিয়ে দরকষাকষির সুযোগ রয়েছে তাদের। অনেক সময় এই সুযোগের নামে পরিবহন সেক্টরে বহু অনৈতিক দাবি নিয়ে সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করার ঘটনা সকলে প্রত্যক্ষ করেছেন। এই সময়ে নেতৃবৃন্দ যেসব দাবি তোলেছেন তার মধ্যে, আমাদের বিবেচনায়- মামলা প্রত্যাহার করার বিষয়টিই প্রধান দাবি। বলাবাহুল্য যে, পরিবহন সেক্টরে ড্রাইভার বা মালিকদের কোনো অবহেলাজনিত অপরাধের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে গেলেই তারা কর্মবিরতির মতো কঠোর ও যাত্রী হয়রানিমূলক কর্মসূচির ডাক দিয়ে বসেন। যে মামলা প্রত্যাহারের কথা তারা বলছেন সেই মামলা কেন তারা আইনি পন্থায় মোকাবিলা করছেন না? সাধারণ মানুষের মনে এই প্রশ্নটিই বেশি ঘোরপাক খায়। আইনি প্রক্রিয়াকে নিজেদের সংঘশক্তির জোরে ব্যাহত করা কোনো বৈধ কর্মকা- হিসাবে বিবেচিত হতে পারে না। হ্যাঁ, তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি থাকলে আইন সংগত উপায়েই তারা সেটির মিমাংসা করতে পারেন। আমরাও চাইব আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই আইনের মধ্যে থেকে তাদের দাবিগুলো নিষ্পত্তি করা হোক। কোনোভাবেই এ কারণে যাত্রীদের চলাচলের অধিকারকে ব্যাহত করা সঠিক কাজ হবে না।
প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের নিকট আমাদের অনুরোধ, পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দের দাবি-দাওয়া নিয়ে জরুরিভিত্তিতে তাদের সাথে বৈঠকের ব্যবস্থা করুন। আইনের আওতায় উত্থাপিত দাবিগুলো নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিন। তবে কোনো অবস্থাতেই চাপের কারণে অনৈতিক দাবি মেনে নেয়া সমীচীন হবে না। পরিবহন সেক্টরের মালিক শ্রমিকরা এই দেশেরই নাগরিক। আমরা চাইব তারাও দেশের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে যথাযথ কর্তব্যবোধের পরিচয় দিবেন। তারা নিশ্চয়ই এমন দাবি করবেন না আদৌ যা মানা সম্ভব নয়। শ্রমিক সংগঠনগুলো কী নিয়ে আন্দোলন করতে পারে আর কী ধরনের দাবি পেশ করতে পারে না তা সুনির্দিষ্ট আছে। আমরা চাইব তারা আইন নির্ধারিত গ-ির মধ্যেই অবস্থান করুন। কোনোভাবেই যেন যাত্রীদের জিম্মি করা না হয়। পরিবহন শ্রমিকরা চাঁদাবাজি ও শ্রমিক হয়রানির যে অভিযোগ এনেছেন তা গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করা উচিৎ। পরিবহন মালিক শ্রমিকদের গণপরিবহন চলাচলের তথা সড়কের আইন ও নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আইনানুগ আচরণ করা কাম্য। নতুবা সড়কে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে বাধ্য।
সবশেষে প্রশাসন ও পরিবহন নেতৃবৃন্দের প্রতি আমাদের আবারও একান্ত অনুরোধ, যাত্রীদের বিষয়টি সকল পক্ষ কার্যকর বিবেচনায় নিয়ে কর্মবিরতির আগেই এ সমস্যার সমাধান করুন।