ঘোড়দৌঁড় প্রতিযোগিতা/ দ্বিতীয় দিনে মাঠ কাঁপালো ‘সোনারপুতুল’

বিশেষ প্রতিনিধি
‘সোনারপুতুল’ মাঠ কাঁপিয়েছে। হাজার হাজার দর্শকের মনোযোগ ছিল এই ঘোড়াকে ঘিরে। দ্রুতগতির এই ঘোড়ার দৌঁড় দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলেন হাজার হাজার দর্শক। সুনামগঞ্জ শহরতলির মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের তিন দিনের ঘোড়দৌঁড় প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় দিনের প্রধান আকর্ষণ ছিল সোনারপুতুল। সোমবার বিকালে সর্বশেষ রাউন্ডে ‘সোনার মেডেল’ ও ‘সোনার হরিণ কে হারিয়েছে সোনারপুতুল।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার শ্রীনাথপুর গ্রামের বড় কৃষক রফিকুল ইসলাম সৌখিন ঘোড়া পালক। তিনবছর আগে এক লাখ টাকা মূল্যে তাহিরপুরের লাউড়েরগড় থেকে ঘোড়াটি কিনেন তিনি। বাড়িতে এনে পরিবারের সকলের সিদ্ধান্তে ঘোড়াটির নাম রাখা হয় সোনারপুতুল। বছরখানেক নিজের মত করে যতœ করেছেন সোনারপুতুলকে।
রফিকুল ইসলাম বললেন, সোনারপুতুল আমার মান সম্মান বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্তত ৩০ দফায় ঘোড়দৌঁড় প্রতিযোগিতায় বিজয় ছিনিয়ে এনেছে সোনারপুতুল। প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করলেই সেরা হচ্ছে সে। এই পর্যন্ত ১১ টি গরুসহ টেলিভিশন, খাসি-ছাগল পুরস্কার নিয়ে বাড়ি ফিরেছে আমার সোনারপুতুল।
বললেন, মাঠে গেলে সোনারপুতুলের সঙ্গে আমাকে দেখতে আসে মানুষ। জিজ্ঞেস করে সোনারপুতুলের মালিক কে। আমার তখন গর্ববোধ হয়।
ঘোড়দৌঁড় দেখতে আসা সুনামগঞ্জ শহরতলির আব্দুল মুহিত বললেন, সোমবার বিকালে সোনারপুতুল মাঠে আসার পর মাঠজুড়ে উল্লাস চলছিল, সকলে সমস্বরে ‘সোনারপুতুল- সোনারপুতুল’ বলে স্লোগান দিচ্ছিল।
হাছনবাহারের আব্দুল কাহার বললেন, সোনারপুতুল যেন সৃষ্টিকর্তার তৈরি, প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিজয়ী হয় এই ঘোড়া।
গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে ও নতুন প্রজন্মকে ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতায় পরিচিত করা এবং বোরো চাষাবাদ মৌসুমে কৃষকদের উৎসাহিত করতে সুনামগঞ্জে তিন দিনব্যাপি ঘোড়দৌঁড় প্রতিযোগিতা চলছে। শহরতলির মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের বেতগঞ্জ বাজারের পাশের জালালপুর ও লালপুরের মধ্যবর্তী মাঠে দুই গ্রামবাসীর আয়োজনে এই উৎসব হচ্ছে।
রবিবার বিকাল থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতা চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত। দ্বিতীয় দিন সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতা। সমীর বাংলা, অচিনপাখি, পাগলা মিজান, সোনার হরিণ, পাখির বাচ্চা, আলিম বাদশা, সোনার মুকুট, সোনার পুতুল, সোনার মেডেল, বাঘরাজ ও আমিন রাজাসহ শতাধিক ঘোড়া নিয়ে মাঠে নেমেছেন সওয়ারগণ। আয়োজকরা তিনটি করে ঘোড়াকে প্রতিযোগিতায় নামাচ্ছেন। বিজয়ী ঘোড়া পরের রাউন্ডের প্রতিযোগিতায় থাকবে। অন্যগুলো বিদায় নিচ্ছে। এর আগে প্রথম দিন রবিবার সওয়ারগণ নিজ নিজ ঘোড়াকে মাঠ প্রদক্ষিণ (ফেরী করানোর) করিয়েছেন। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এবার প্রায় দেড়শ ঘোড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, বাহুবল, বানিয়াচঙ, সিলেটের বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জের সকল উপজেলা থেকেই সওয়ারসহ ঘোড়া নিয়ে এসেছেন সৌখিনরা। এসেছেন হাজারো সৌখিন দর্শকও।
ঘোড় দৌঁড় আয়োজক কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান জানালেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা, সকলকে বিনোদন দেওয়ার জন্যই এই আয়োজন। তৃতীয় দিনে (মঙ্গলবার) দর্শক সমাগম আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তারা। সোমবার যারা বিজয়ী হয়েছে, তারাই মঙ্গলবারের প্রতিযোগিতায় থাকবে।
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বললেন, গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্যকে তুলে ধরা এবং সকলকে বিনোদন দেবার জন্যই ঘোড় দৌঁড়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।