চারিদিকে এতো অনাচার রোধিবে তা সাধ্য কার?

আজব সব কাজ কারবারের খবর পাওয়া যায় হরহামেশাই। এগুলো অকাজের কাজ নয়। বরং অতিরিক্ত কেজো ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণের সরেস দক্ষতার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকতে পারে। এমত দৃষ্টান্ত সামনে এনে এ জাতির সৃজনশীল কুম্ভীলকবৃত্তির কথাও চাউড় করা যেতে পারে। চারিদিকে তখন মারহাবা মারহাবা ধ্বনির রোল উঠার সমূহ সম্ভাবনা। দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর গতকাল দুইখানা এতদসদৃশ্য খবর পাঠকের দরবারে হাজির করেছে। প্রথমটিতে ‘উদ্দীপন’ নামের এক এনজিও’র ঋণ নিয়ে কেরদানির খবর দেয়া আছে অন্যটিতে জেলার বৃহত্তর দেখার হাওরের একটি বাঁধের ভাঙনের কারণ হিসাবে যথেচ্ছাচার করে বাঁধ পার্শ্বস্থ নদী ও কান্দা কেটে মাটি ও ভিট বালু আহরণের লুণ্ঠনোৎসবকে দায়ী করা হয়েছে। এই দুই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হলেও তা কারও দায়িত্ববোধের জং ধরা শরীরে শানযন্ত্র হয়ে জং সরানোর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি। তবে কুম্ভীলকদের যে পোয়াবারো অবস্থা তা আমরা অধমগণের বুঝতে অসুবিধা হয় না।
ধর্মপাশার রূপালী দাস নিতান্তই এক আটপৌরে গ্রামীণ গৃহিনী। উদ্দীপন থেকে দুই বারে ৪০ ও ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে যথারীতি পরিশোধ করে ঝাড়া হাত পা হয়ে আয়েশে ছিলেন। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত হঠাৎ শুনতে পেলেন তৃতীয় বারে নাকি তিনি আরও ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন যা শোধ হয়নি। কিস্তির তাগিদ আসতে থাকে রূপালীর বাড়িতে। দিশেহারা রূপালী এখানে ওখানে দৌঁড়ান, একে ওকে ধরেন, এ কী হলো তার, ঋণ না নিয়েও ঋণী তিনি। অফিসের কাগজে পত্রে নাকি রূপালীরই সই মিলেছে। যাহোক শেষ পর্যন্ত ভাগ্য কিঞ্চিৎ সহায় হয়েছে তার। খোঁজ মিলেছে, রূপালীর নাম ভাঙিয়ে চৌদ্দকা- প্রতারণা করে ওই ৬০ হাজার টাকা উঠিয়েছিলেন উদ্দীপনেরই উদ্দীপ্ত এক কর্মচারি, জুঁই রায় যার নাম। ফুলের নামে নাম হলেও স্বভাবে চরিত্রে যে তিনি মোটেই পবিত্র ও সুন্দর নন তা জানা গেলো। অবশ্য উদ্দীপনের সংশ্লিষ্ট অফিস প্রধানের স্বাক্ষ্যের পরও জুঁই নিজের দোষ স্বীকার করছেন না। নির্দোষ রূপালীর কপালে কী আছে কে জানে।
দ্বিতীয় সংবাদটি আরও মারাত্মক। দেখার হাওরের একটি বাঁধের নাম ‘ছাইয়া কিত্তা বাঁধ’। ৩০১ মিটার দীর্ঘ এই বাঁধের পার্শ্ববর্তী মহাশিং নদী ও বাঁধের পশ্চিম পাশের কান্দা থেকে গত বছর কতিপয় ব্যক্তি অবৈধভাবে মাটি, বালু ও ভিটবালু খনন করে তুলে ফেলে। খননের ফলে বাঁধের নীচে বিশাল গর্ত তৈরি হয়। এখন মূল বাঁধ ধসে পড়া শুরু হয়েছে। হুমকিতে পড়েছে হাওরের ফসল। কারা এই অবৈধ খনন করেছে সংবাদে তাদের ফিরিস্তি দেয়া হয়নি। দেয়া দরকার ছিলো। প্রশাসনের উচিৎ এই দুর্বৃত্তদের ধরে এনে বাঁধের ধস আটকানোর ক্ষতিপূরণ আদায় করা। এমনটি করা গেলে একটা উদাহরণ তৈরি হত যে অন্যায় করলে সাজা পেতে হয়। কিন্তু তা তো হওয়ার নয়। নতুবা যখন অবৈধ খনন চলছিলো তখনই তো তা প্রতিহত করা স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্ব ছিলো। তখন যখন চোখে ঠুলি পড়া ছিলো এখন আর তা খোলে চক্ষুষ্মান হওয়ার আশা করাটা বাতুলতাই হবে। আমরা কেবল চাই এই ধস আটকানো হোক যাতে দেখার হাওরের ১২ হাজার হেক্টর জমি অন্তত এই ধসের কারণে ঝুঁকিতে না পড়ে।
উল্লেখিত দুইটি ঘটনার বর্ণনা নেহায়েৎ আকষ্মিক কিংবা দুর্ঘটনা নয় বরং চলমান অন্ধ ও সর্বনাশা সমাজ বাস্তবতার অতিস্বাভাবিক কিঞ্চিৎ করণকণিকা মাত্র। আমাদের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা একেবারে দুর্বিনীত হয়ে গেছে। প্রতিদিনকার সংবাদপত্র পাঠ করলে তা স্পষ্ট হয়। তারপরেও অশুভ প্রবণতার বিরুদ্ধে চিৎকার জারি রাখতে হবে। শুভবোধের আকুতি ও সংগ্রাম ভিন্ন এহেন অবস্থা থেকে পরিত্রাণের আর কোনো পথ নেই।