জমা আদায় হয় ৪০ লাখ টাকারও বেশি/ কর্তৃপক্ষ পায় খুব সামান্য টাকা

বিশেষ প্রতিনিধি
অদ্বৈত জন্মধাম পণতীর্থে মেলা ও শাহ্ আরেফিন (র.)’এর ওরস আগামী ১৯ মার্চ থেকে। সুনামগঞ্জ সীমান্তের হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় এই উৎসবকে ঘিরে তিন দিনব্যাপী মেলা হয় জাদুকাটা নদীর চরে ও শাহ্ আরেফিন (র.) মাজার প্রাঙ্গণে। এই দুই মেলায় বসা দোকানপাট থেকে প্রতিবছর জমা বা অনুদান আদায় হয় কমপক্ষে ৪০ লাখ টাকা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আদায়কৃত টাকার অর্ধেকও পায় না। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রশাসন উদ্যোগী হলে বড় দুই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মেলার আয় থেকে বঞ্চিত হত না।
দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হয় তাহিরপুর সীমান্তে। একইসঙ্গে দুই উৎসব হওয়ায় সম্প্রীতিও ছড়ায় এলাকাজুড়ে। পণতীর্থের গঙ্গাস্নান এবং শাহ্ আরেফিন (র.) ওররসকে ঘিরে লাখো মানুষের সমাগম হয় জাদুকাটা নদীর পাড়ে। এবার ১৯ মার্চ রবিবার গঙ্গ¯œান। ঐ দিন রাত ৯টা ১৪ মিনিট ১৫ সেকেন্ড থেকে ৪ টা ৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ড পর্যন্ত মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে (মহাবারুণী) সীমান্ত নদী জাদুকাটায় গঙ্গাস্নান ও অদ্বৈত বাড়ির পাশের মাঠ ও জাদুকাটা নদীর বালু চরে মেলা বসবে। অন্যদিকে ১৮ মার্চ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত একই সীমান্তের রাজারগাঁওয়ের নিকটবর্তী লাউড়েরগড় এলাকায় শাহ আরেফিনের মোকামে হযরত শাহজালাল (র.)’এর সঙ্গী হযরত শাহ আরেফিনের (র.)’এর বার্ষিক ওরস হবে। এই দুই উৎসবকে নির্বিগ্ন করার জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। গেল সোমবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই উপলক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সম্প্রতি শ্রী শ্রী অদ্বৈত মন্দির পরিচালনা কমিটি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বারুণি ¯œান উপলক্ষে হওয়া মেলায় বসা দোকানীদের কাছ থেকে অনুদান বা জমা আদায়ের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগে প্রকাশ্যে মেলার তিনদিন জমা বা অনুদান আদায়ের জন্য নিলাম আহ্বান করার অনুরোধ জানান। জেলা প্রশাসক এই বিষয়টি ভেবে দেখার আশ^াস দেন।
শ্রী শ্রী অদ্বৈত মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অদ্বৈত রায় জানালেন, গেল বছর মেলার দোকানীদের কাছ থেকে অনুদান বা জমা বাবদ দুই লাখ ৪৯ হাজার টাকা পেয়েছেন তারা। প্রকাশ্যে নিলাম ডেকে আদায়কারী নিয়োগ করা হলে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা পাওয়া যেত। এর আগের বছরগুলোতে মন্দির কমিটি উল্লেখ করার মত কোন টাকাই পায় নি বলে জানান তিনি।
অদ্বৈত রায় জানান, শ্রী শ্রী অদ্বৈত মন্দির পরিচালনায় বছরে সাত আট লাখ টাকার প্রয়োজন। এই টাকার কোন উৎস্য নেই। মেলা নিলাম দিয়ে অর্থ আদায় হলে এবং সেই অর্থ মন্দির কমিটির হিসাবে জমা হলে এটি সকলের জানা থাকবে। হিসাবেও স্বচ্ছতা আসবে।
এদিকে, শাহ আরেফিন (র.) ওরস স্থলেও একইভাবে স্থানীয় উদ্যোগে অর্থ আদায় হয়। ওখানে লাখো মানুষের সমাগম হয়। দুই দিন মেলা বসে। সেটিও প্রকাশ্যে নিলামের পক্ষে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে।
শাহ্ আরেফিন (র.)’এর মাজারের পাশের ঘাগটিয়ার বাসিন্দা মোশারফ হোসেন বললেন, নিলামের মাধ্যমে টাকা আদায় হলে সকলে জানা থাকবে। টাকাও বেশি আদায় হবে। এই ক্ষেত্রে আদায়ের পরিমাণ কোন দোকানের কাছ থেকে কত টাকা নির্ধারণ করে সাইনবোর্ড টাঙাতে হবে। আদায়কৃত টাকা যাতে মাজার বা মন্দিরের পরিচালনা কমিটির হিসাবে জমা সেই ব্যবস্থা করতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলাম দিলেও টাকা যাতে মাার কমিটির হিসাবে আসে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। নিলামের টাকা রাজস্ব খাতে জমা হয়ে গেলে ‘আম-ছালা’ দুটিই যাবে।
শাহ আরেফিন (র.) পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলম সাব্বির অবশ্য বর্তমান পদ্ধতিতে আদায়ের পক্ষে। তার মতে বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি এবং কমিটির ৫০-৬০ জন লোক নিয়োগ করা হয় অনুদান আদায়ের জন্য। এরা একইসঙ্গে শৃঙ্খলাও রক্ষা করে। বিনিময়ে তারা কিছু আর্থিক সুবিধা পায়। প্রকাশ্যে নিলাম দিয়ে আদায়কারী নিয়োগ করলে শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য আলাদা লোক নিয়োগ করতে হবে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বললেন, বিষয়টি আইনানুগ প্রক্রিয়ায় করা গেলে খারাপ হয় না। আমরা স্থানীয়ভাবে বোঝাপড়া করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।
শ্রী শ্রী অদ্বৈত মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বললেন, ব্যাপকভাবে প্রচার দিয়ে, উন্মুক্ত নিলাম দিয়ে ইজারাদারের ন্যায় আদায়কারী নিয়োগ করা হলে জবাবদিহিতা থাকে। কত টাকা মন্দির পরিচালনা কমিটি বা বাজার কমিটি পেল সকলের জানা থাকবে। হিসাবে স্বচ্ছতা তৈরি হবে। এর আগেও একই পদ্ধতিতে আদায়কারী নিয়োগ করার রেকর্ড আছে বলে জানান তিনি।