বিশেষ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারণ করা জমি কমমূল্যে কিনে সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করতে তৎপর হয়েছে একটি পক্ষ। বিষয়টি অনুধাবন করে সোমবার সুনামগঞ্জ সদর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার সাব রেজিস্টারকে চিঠি দিয়ে সুনামগঞ্জ সদরের কাঠইর ও শান্তিগঞ্জের জয়কলস মৌজায় উচ্চ মূল্যে জমি রেজিস্ট্রি করতে চিঠি দিয়ে নিষেধ করেছেন জেলা প্রশাসক।
গেল ১৭ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা মন্ত্রীসহ জেলার সংসদ সদস্যগণ সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের কাঠইর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের জয়কলস মৌজায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি নির্ধারণ করেছেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে জেলা প্রশাসক জমি বাছাই করে সংসদ সদস্যদের অবহিত করেন।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের কাঠইর মৌজায় তিন বছর আগে প্রায় ৩৫ একর জমি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়। ওখানে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাস নির্মাণ কাজ শেষের পথে। সম্প্রতি একই মৌজা ও পাশের জয়কলস মৌজায় সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের জমি চূড়ান্ত হওয়ায় এই এলাকার জমির মূল্য বেড়ে গেছে। বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য ওই দুই মৌজার ৭৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে।
জমি অধিগ্রহণের এই খবর শুনে সরকারের সঙ্গে জমির ব্যবসা করতে তৎপর হয়ে ওঠেছে একটি পক্ষ। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পছন্দ করা জমি কম মূল্যে কিনে সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করতে চাইছে। বিষয়টি জেনে জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন সোমবার সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সাব রেজিস্টার ও শান্তিগঞ্জের সাব রেজিস্টারকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে জেলা প্রশাসক উল্লেখ করেছেন, যেহেতু এই দুই মৌজায় সরকারের পক্ষ থেকে সহসাই জমি অধিগ্রহণ করা হবে। ওখানে উচ্চ মূল্যে কোন জমি রেজিস্ট্রি করা যাবে না।
রেজিস্ট্রি অফিসের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কাঠইর মৌজায় সরকারের নির্ধারণ করা জমির মূল্য হচ্ছে, প্রতি শতাংশে বোরো জমি চার হাজার একশ ৬২ টাকা, আমন জমি ১৪ হাজার তিনশ’ টাকা, বাড়ী-পুকুর ৮৫ হাজার দুইশ ৮১ টাকা, চারা নয় হাজার চারশ ৩৮ টাকা এবং ডোবা পনের হাজার টাকা।
জয়কলস মৌজায় বাড়ী-পুকুর ৩৬ হাজার একশ ৪১ টাকা, চারা বিশ হাজার তিনশ ৬৭ টাকা, আমন ৫২ হাজার একশ ২৬ টাকা ও লায়েক পতিত ১২৭৯ টাকা।
সরকারের নির্ধারণ করা এই মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে জমি রেজিস্ট্রি দেখিয়ে সরকারের কাছ থেকে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ আদায় করার চেষ্টা করছে একটি মহল।
স্থানীয় লক্ষণশ্রী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল ওদুদ বললেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের জমি অধিগ্রহণের সময়ও এই ধরণের চেষ্টা হয়েছে। এবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণের খবর শুনেই এক শ্রেণির কিছু মানুষ তৎপর হয়েছে।
জেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি প্রদীপ পাল নিতাই বললেন, জেলা প্রশাসকের চিঠির উধৃতি দিয়ে সোমবার আমাদেরকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে, আমরা যাতে এই বিষয়ে সতর্ক থাকি।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূর আলম বললেন, জয়কলস মৌজায় উচ্চ মূল্যে জমির দলিল না দেখানোর জন্য সোমবার রেজিস্টারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বললেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য ৭৫ একর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা আরও বেশি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করেছি। নির্দেশনা পেলে বেশি অধিগ্রহণ হবে, না হয় দ্রুতই ৭৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে কেউ যাতে ব্যবসা না করতে পারে, সেজন্য রেজিস্টারদের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে উচ্চ মূল্যে জমি রেজিস্ট্রি করতে নিষেধ করা হয়েছে। তারা সরকারের স্বার্থ সংরক্ষণ করতেই এই নির্দেশনা মানতে হবে।
- নারী ফুটবলারদের সাফ জয় অদম্য নারী শক্তির পথ ধরে
- বীরোচিত সংবর্ধনা পেল সাফ জয়ী নারী ফুটবল দল