বৃহস্পতিবার গাজিপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ এবং অভিযোগহীন পরিবেশে শেষ হয়েছে। এদিন জেলার জগন্নাথপুর পৌরসভার নির্বাচনও একই ধরনের স্বস্তিদায়ক পরিবেশে সম্পন্ন হয়। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থী ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো অভিযোগ তোলেননি। এবং ফলাফল ঘোষণা নিয়েও শেষ পর্যন্ত কারও কোনো আপত্তি পাওয়া যায়নি। নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান গাজিপুর সিটি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য কয়েকটি পৌরসভার নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ করার কৃতিত্ব দেখাল। এজন্য তাঁদের অভিনন্দন। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন টালমাটাল। এ অবস্থা গত বছরাধিককাল যাবৎ রাজনৈতিক পরিবেশকে বেশ উত্তপ্ত করে রেখেছে। সর্বশেষ এই নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দানকারী ব্যক্তিদের ওই দেশের ভিসা প্রদান না করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাথে এই বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেছেন। অনেকদিন ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে আসছিল, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। তাদের আগ্রহ হলো অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এটি কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা নয় বরং দেশের প্রতিটি মানুষের অভিপ্রায়। সরকার অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ নিয়ে বিশেষ চিন্তিত নয়। সরকারের বিভিন্ন প্রতিনিধিবৃন্দ বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন তাদেরও একই ধরনের অভিপ্রায় সুষ্টু নির্বাচন নিয়ে। সরকার পক্ষ বেশ জোরের সাথেই ভালো নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে নিজেদের বিশ্বাসের কথা জানিয়ে চলেছেন। বৃহস্পতিবারের স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ আগের কয়েকটি নির্বাচন সুষ্ঠু, দৃঢ় ও সুন্দরভাবে আয়োজনের মধ্য দিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশনও নিজেদের অবস্থান সকলের কাছে পরিস্কার করছে।
তবে সমস্যা হলো অন্যতম বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের এইসব আশ্বাসের উপর আস্থা রাখতে পারছে না। তারা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবির প্রতি এখনও অটল রয়েছে এবং সেই লক্ষ হাসিল করতে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালনের মধ্যে রয়েছে। এতে আগামী দিনে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর ঠিক এই জায়গায়ই সাধারণ মানুষ রয়েছেন চরম আতঙ্কের মধ্যে। সাধারণ মানুষ এখন আর রাজনৈতিক কারণে দেশে কোনো অস্থিতিশীলতা, সহিংসতা, উত্তেজনা দেখতে চায় না। তারা কাজকর্ম করে নিরাপদে জীবন যাপন করতেই আগ্রহী। সমস্যা হলোÑ দেশের মানুষের এই মনোভাব রাজনৈতিক পক্ষগুলো অনুধাবন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জনগণ, সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের যে পরস্পর বিপরীতমুখী অবস্থান তার সমাধান হওয়া একান্ত কাম্য। নতুবা তিলে তিলে এই দেশের যে উন্নয়ন অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তা ভ-ুল হওয়ার উপক্রম হবে।
নির্বাচন নিয়ে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশের নানাজন নানা ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন। বিদেশিরা তো অহরহই দিচ্ছেন। এইসব পরামর্শ এখন পর্যন্ত কার্যকর মধ্যস্ততায় পরিণত হতে পারছে না, সমস্যা এটাই। আমরা চাই, দেশের ভিতর থেকে একটি শক্তিশালী মধ্যস্ততাকারী গ্রুপ যারা সকলের নিকট আস্থা ও বিশ্বাসভাজন, তারা সক্রিয় হয়ে উঠুন। এরকম সংকটে দেশের বিশিষ্ট ও মান্যবর ব্যক্তিরাই সাহস, ধৈর্য, কুশলতা ও দূরদর্শিতা নিয়ে এগিয়ে আসেন। অতীতে এরকম আমরা দেখেছি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এরকম মধ্যস্ততা হরদম হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ার অনুপস্থিতি প্রমাণ করবে দেশে সেই অর্থে দলবহির্ভূত কোনো শক্তিশালী নাগরিককেন্দ্র গড়ে উঠেনি।
আমরা শান্তিতে বসবাস করতে চাই। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতার পালাবদল দেখতে চাই। কোনো সহিংসতা বা অনিশ্চয়তা নয়। এই দেশ শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাক, সকলের সাথে আমাদেরও এই কামনা।
- নীতিমালা ভঙ্গ করে শিক্ষক বদলি
- ভালো মানুষের পরিচিতি ও দলীয় ঐক্যের ফল