জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি/ ইতিবাচকভাবেই দেখছেন কর্মীরা

বিশেষ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে জেলার বয়োজ্যেষ্ঠ নেতারা। নতুন কমিটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে, ‘এই কমিটি নিয়ে যুদ্ধে জয় পাওয়া যাবে’ এ ধরণের মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের কর্মীরা।
শনিবার বিকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের পুরাতন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।
কমিটি ঘোষণার পর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমনের সমর্থকদের মধ্যে হতাশার চাপ থাকলেও জেলা আওয়ামী লীগের নয়া সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট ও সাধারণ সম্পাদক নোমান বখ্ত পলিনের কর্মীদের মধ্যে উল্লাস দেখা যায়।
নতুন কমিটির সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আশি’র দশকে প্রয়াত জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ, যুগ্ম সম্পাদক, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সমর্থন না পেলেও দলের প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দুইবারই জেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন তিনি।
সাধারণ সম্পাদক নোমান বখ্ত পলিন বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেন বখতের কনিষ্টপুত্র। তাঁর প্রয়াত বড় ভাই আয়ুব বখ্ত জগলুল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছিলেন। আরেক ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার বখ্ত নেক সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। পলিন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সর্বশেষ আয়ুব বখত জগলুলের মৃত্যুর পর জেলা কমিটিতে জগলুলের সহসভাপতি পদে তাকে কোঅপ্ট করা হয়েছিল।
সম্মেলনের একদিন পর রোববার জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে, দোয়ারাবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিছ আলী বীরপ্রতীক বললেন, দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে কমিটি হয়েছে। সেটি মানতে হবে সকলকে। নতুন সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট ও সাধারণ সম্পাদক নোমান বখ্ত পলিনের নেতৃত্বে দল নতুন উদ্যোমে সংগঠিত হবে আশা করছি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি বয়োজ্যেষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা অবনী মোহন দাস বললেন, ‘এই কমিটি দিয়ে জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী হওয়া যাবে। সারাদেশের জেলাগুলোয় এভাবে কমিটি হলে যেকোন যুদ্ধেই জয় পাওয়া সম্ভব। সভানেত্রীর নির্দেশে সাধারণ সম্পাদক যে কমিটি বাতিল করেছেন, সেটি জীর্ণশীর্ণ ছিল। এখনকার বলিষ্ট নেতৃত্বে কর্মীরা উচ্ছসিত হবে। প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলমিন চৌধুরী বললেন, দলের ভালোর জন্যই হয়তো সভানেত্রী এমন কমিটি করেছেন। এই কমিটির নেতৃত্বেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে দলকে শক্তিশালী করতে হবে।
প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. আলী আমজাদ বললেন, আট বছর আগে বিগত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার পর, আমরা ওবায়দুল কাদেরের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছিলাম, কমিটি গঠনে স্বজনপ্রীতিসহ নানা বিতর্ক ছিল। তারা যে সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল, এখনকার নতুন সভাপতি ও সম্পাদক সেখান থেকেই শিক্ষা নিতে হবে।
বিদায়ী কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান বললেন, দলের দায়িত্বশীল নেতৃত্ব সবকিছু বুঝে শুনেই নতুন কমিটি করেছেন। ওবায়দুল কাদের কমিটি ঘোষণার সময় আমাকে দলের উপদেষ্টা করা হয়েছে জানিয়ে বলেছেন, জ্যেষ্ঠ এই নেতাকে ‘আপগ্রেড’ করে নেত্রী উপদেষ্টা করেছেন। দলের ভালো’র জন্যই এটি করা হয়েছে। আগে আমার গঠনতান্ত্রিক দায়িত্ব ছিল। এখন যা করবো, অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন হবে সেটি।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট বললেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হবে ছাত্রলীগ, যুবলীগ হয়ে যারা আওয়ামী লীগে এসেছে। কারো প্রতি স্বজনপ্রীতি বা বিরাগভাজন নয়, ত্যাগি, যোগ্যরা কমিটিতে স্থান পাবে। গঠনতন্ত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী ৪৫ দিনের মধ্যেই হবে কমিটি।