বিশেষ প্রতিনিধি
আড়াই ফুট প্রস্ত ও দেড়ফুট উচ্চতার মাত্র ৫০০ ফুট বাঁধের কাজ করতে ৫০টিরও বেশি হিজল-করচ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ডাল-পালা কেটে ক্ষতি করা হয়েছে আরও কমপক্ষে ৫০ টি গাছের। অথচ. এই হিজল করচ বাগেই বর্ষায় পর্যটকরা এসে নৌকা ভিড়িয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকালে তাহিরপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) পুলিশসহ ঘটনাস্থলে যান। ওখানে বৃক্ষ নিধনকারী কাউকে না পেলেও এ ঘটনায় নিয়মিত মামলা দায়ের করছে তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন।
দেশের বিখ্যাত জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওরের পলিয়ার বিলের হিজল করচ বাগও সকলের কাছে পরিচিত। হাওরপাড়ের উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের বিনোদপুর ও মন্দিয়াতা গ্রামের নিকটবর্তী এই হিজলবাগটি পর্যটকদের ছায়া দেয়। পর্যটকরা এই বাগে সময় কাটান। বর্ষায় মাছের অভয়াশ্রম হয় এখানে, হেমন্তে পাখির আবাসস্থল থাকে এটি। গত সোম ও মঙ্গলবার ক্ষেতের আইলের মত ছোট মাটির বাঁধ করতে এক্সকেভেটর ঢোকায় কিছু দুর্বৃত্ত। এসময় এক্সকেভেটরের পথ করতে ৫০ টিরও বেশি গাছ কেটে ফেলা হয়। ডাল কাটা হয় আরও কমপক্ষে ৫০ টি গাছের।
পরে হাওরপাড়ের পরিবেশপ্রেমী ক্ষুব্ধ স্থানীয়রাই এদের রুখে দাঁড়ান।
হাওরপাড়ের মন্দিয়াতা গ্রামের খসরু মিয়া জানান, মশা মারতে কামান দাগানোর মত অবস্থা করেছে এরা। ছোট একটি বাঁধ করতে এক্সকেভেটর ঢুকিয়ে সর্বনাশ ঘটানো হয়েছে। তিনি বললেন, ছোট এই বাঁধে কয়েকজন শ্রমিক লাগালেই করা যেত। গাছও কাটার প্রয়োজন পড়তো না। এরা সর্বনাশ করেছে।
স্থানীয়রা গাছ কাটার জন্য উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের তেরঘর গ্রামের বাসিন্দা ইউসুফ মিয়া (৬২) ও গোলাপ নূর (৬০) কে দায়ী করলেন।
ইউসুফ মিয়া অবশ্য স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছেন, হাওরপাড়ের রতনপুর, মন্দিয়াতা, তেরঘর, কামনাপাড়া, কান্দাপাড়া ও বিনোদপুর গ্রামের কৃষকরা ‘এরাইল্যাকোনা’ হাওরে ধান রোপন করেছেন। হাওরের ফসলরক্ষায় হিজলবাগের ভেতর দিয়ে কৃষকরাই ছোট বাঁধ করেছেন।
তবে মন্দিয়াতা গ্রামের বাসিন্দা ও মন্দিয়াতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সানজু মিয়া বলেন, এখানে ফসলরক্ষা বাঁধ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তাই কখনই এ স্থানে ফসলরক্ষা বাঁধ দেওয়া হয় না। টাঙ্গুয়ার হাওরের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হিজলবাগ এটি। মাছ ও পাখির অভয়াশ্রম এ বাগের অর্ধশতাধিক হিজলগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। আরো অর্ধ শতাধিক গাছের ক্ষতি করা হয়েছে। বাঁধের নামে অন্য ধান্দা করছিল এরা।
তিনি বললেন, হিজলগাছগুলো মাছ ও পাখির আশ্রয়স্থল হিসাবে কাজ করে। মাছের প্রজনন ও খাদ্য যোগানেও হিজলগাছ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। এই হিজলবাগটি টাঙ্গুয়ার হাওরের মাছের নিরাপদ আবাসস্থল। হিজলগাছের পাতাতে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক জন্মায় যা মাছের খাদ্য হিসাবে কাজে লাগে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে ইজারাপ্রথা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এবং ২০০৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে হাওরটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রয়েছে জেলা প্রশাসন।
টাঙ্গুয়ার হাওরপারের জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা ও হাওরপারের ৪০টি গ্রাম নিয়ে গঠিত টাঙ্গুয়ার হাওর কেন্দ্রীয় গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ কবির জানান, ২০০৩ সালের পর হাওরটি পঞ্চাশ ভাগ করচগাছ, দশভাগ হিজলগাছ আর সত্তর ভাগ নলখাগড়া, গুইজ্জাকাটা, বনতুলসী, চাইল্যা, বউল্যা ও উকল উজাড় হয়ে গেছে। জ¦ালানীর জন্য হিজল স্থানীয়দের পছন্দ নয়, তাই এখনো অধিকাংশ হিজলগাছ টিকে আছে। তবে কান্দা আর গাছ কেটে ছোট এই বাঁধ করার কোন যুক্তিই গ্রহণযোগ্য নয়।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুপ্রভাত চাকমা বললেন, বিষয়টি জেনে বৃহস্পতিবার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে ওখানে পুলিশসহ ওখানে পাঠানো হয়েছিল। কাউকে পাওয়া যায় নি। পেলে গ্রেপ্তার করা হত। যে গাছগুলো কাটা হয়েছে এগুলো ৩০ বছর আগে লাগানো। গাছ কাটার জন্য নিয়মিত মামলা দায়ের করবো আমরা।
- সুনামগঞ্জের হাওরে নতুন প্রজাতির আইড় মাছের সন্ধান
- জেলা যুবদলের বিক্ষোভ