ডিজেলে ওজনে কারচুপি বন্ধ করতে হবে

বর্তমানে কৃষি ব্যবস্থা বহুলাংশে যন্ত্রনির্ভর। জমি তৈরি করা, সেচ, ধান কাটা ও মাড়াই প্রভৃতি সকল কাজেই কৃষিযন্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে। এজন্য কৃষকদের নিকট ডিজেলের চাহিদা ব্যাপক। এ বছর ডিজেলের দাম বৃদ্ধি ঘটেছে। ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে চাষাবাদের খরচ বেড়ে কৃষকদের উৎকণ্ঠা বাড়িয়েছে। গোদের উপর বিষফোড়ার মতো ডিজেল ওজনে কম দেয়ার সংবাদটি অতিমাত্রায় হতাশাজনক। গতকাল দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে ভাটি অঞ্চলে ডিজেল বিক্রির সময় ওজনে কম দেয়ার বিষয়টি একটি সংবাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজারে অবস্থিত পেট্রোবাংলার ভাসমান ডিপো যমুনা ওয়েল বার্জ ডিপো হাওরাঞ্চলের কৃষকদের ডিজেলের প্রধান উৎস। ৩০ জন ডিলার এই ডিপো থেকে ডিজেল নিয়ে সারা জেলায় সরবরাহ করেন। ডিজেলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও কৃষকরা ডিজেল ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ করেছেন। খোদ ডিপো থেকে এবং পরে ডিলার সকলেই ওজনে কম দেয়ার কাজ সারেন বলে জানিয়েছেন সরবরাহ চেইনের নানা ধাপের ব্যবসায়ীরা। ফলে একেবারে শেষ ধাপের ভোক্তা কৃষকরা ওজনে ঠকেন সবচাইতে বেশি। অভিযোগ উঠেছে ২০০ লিটারের ড্রামে ৫/৬ লিটার ডিজেল কম দেয়া হয়। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা গত বছরের ১১ আগস্ট কয়েকজন ডিলারকে ওজনে কম দেয়ার কারণে আর্থিক জরিমানা করেছেন। বিষয়টি এমন ওপেন সিক্রেট যে সকল ব্যবসায়ীই জেনে বুঝে এই কুকর্মটি করে থাকেন। একদম প্রথম ধাপ থেকে শেষ ধাপ পর্যন্ত ক্রমবর্ধিত হারে এই কম দেয়ার বিষয়টি চলতে থাকে। ওজনে কম দেয়া তেল নাকি পরে বিক্রি করে একটি সিন্ডিকেট ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়। ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারও নেই।
ডিপো ম্যানেজার ও কয়েকজন ডিলার ওজনে কম দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। কিন্তু ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর যখন সরেজমিনে কয়েকজন ডিলারের প্রতিষ্ঠানে যেয়ে ওজনে কম দেয়ার প্রমাণ পেলেন তখন তাঁদের এই অস্বীকার যে কেবল নিজেদের দায় মোচনের চেষ্টা তা বুঝতে কারও বাকি থাকে না। বিক্রেতারা কৃষকদের নিকট ডিজেল বিক্রি করতে বিএসটিআই অনুমোদিত মাপযন্ত্র ব্যবহার করেন না। এটি সরাসরি সরকারি বিধান লংঘনের শামিল। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ ব্যবস্থার মূলে ওজনে কম দেয়া বন্ধ না করা গেলে তারও নিরূপায়। এরকম এক দুষ্টচক্রের শিকার হয়ে যাবতীয় দায় নীরবে বহন করে চলেছেন হাওরাঞ্চলের কৃষকরা। এই অবস্থার অবসান হওয়া উচিৎ।
ডিপো এবং ডিলার পর্যায়ে ওজনে কারচুপির বিষয়টি সর্বাগ্রে বন্ধ করতে হবে। তাহলে খুচরা বিক্রেতা পর্যায়কে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। বুঝাই যায়, ডিপোর অসৎ কর্মচারিরা এই অসাধু কাজে সহায়তা করছেন। এদের কঠোর হাতে নিবৃত্ত করতে হবে। ডিলার পর্যায়কে যাবতীয় রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে স্বাধীনভাবে ব্যবসা করতে দিতে হবে। এজন্য পেট্রোবাংলা, ভোক্তা অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনকে দায়িত্ব নিতে হবে। একই সাথে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বকেও দায়িত্বশীল ও কৃষকবান্ধব অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। এখন ডিপো, ডিলার ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা মিলে যে শক্ত সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন যেকোনো মূল্যে তাকে ভাঙতে হবে।
কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা বর্তমান সরকারের বিঘোষিত নীতি। এই নীতির বাস্তবায়ন আমরা দেখতে চাই মাঠ পর্যায়ে কার্যকরভাবে। সরকারের নীতি বাস্তবায়নের বিষয়টি দেখভাল করার কথা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতৃত্বের। ক্রমাগত ঠকতে ঠকতে কৃষকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। কৃষকরা নীরব বিক্ষোভে ভিতরে ভিতরে ফুঁসে উঠছেন। কৃষকদের প্রতি যাবতীয় বঞ্চনার অবসান ঘটানো না গেলে এর ফল সাংঘাতিক খারাপ হতে পারে। এছাড়া কৃষি উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কুপ্রভাব পড়বে আমাদের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায়। জাতীয়ক্ষেত্রে এর ফল হবে খুব বেশি নেতিবাচক।