পাহাড়ি ঢলে লন্ডভন্ড তাহিরপুরের সীমান্ত এলাকা

তাহিরপুর প্রতিনিধি
তাহিরপুর সীমান্ত এলাকা পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ওপার থেকে ঢলের সঙ্গে বালি এসে বাড়ি ঘর এখন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। সীমান্ত এলাকার শতাধিক পুকুর ডুবে গেছে। চলে গেছে লাখ লাখ টাকার মাছ। পাহাড়ি ছড়া পাড়ের লোকজন বাড়ি ঘর ও পুকুর হারিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। সীমান্ত এলাকা সহ উপজেলা জুড়ে এখন চরম খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। তবে পানি কিছুটা কমায় আশার আলো দেখা দিয়েছে। আকাশে রোদের মিলেছে। ফলে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা কেউ কেউ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। বন্যা কবলিত এলাকায় বসতঘর থেকে পানি নীচে নামলেও, বাড়ির উঠনে এখনও হাঁটু পানি রিয়েছে। আশ্রয় কেন্দগুলোত্রে কিছু ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ঘরের লোকজন তা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
তাহিরপুর সীমান্তের বীরেন্দ্রনগর থেকে লামাকাটা, জঙ্গলবাড়ী, কলাগাও, চারাগাঁও, বাসতলা, লালঘাট, ট্যাকেরঘাট, বড়ছড়া, রজনী লাইন, চাঁনপুর সহ লাউড়েরগড় পর্যন্ত প্রায় ১৭টি পাহাড়ি ছড়া রয়েছে। ওপারে মেঘালয় পাহাড়। বৃষ্টি হলেই এসব পাহাড়ী চড়া দিয়ে প্রবল বেগে পানি এসে সীমান্তের বাড়ি ঘরে তান্ডব শুরু করে থাকে। বাড়িঘর রক্ষায় সীমান্তের লোকজন এখন লড়াই করছেন। ঢলের সঙ্গে চড়া দিয়ে বালি এসে ফসলী জমি, পুকুর ও বাড়ীঘর ভরে গেছে। সীমান্তের রাস্তাঘাট ক্ষণে ক্ষণে ভেঙ্গে খালে পরিণত হয়েছে।
গত দুইদিনে বন্যার পানি একটু কমলেও এখনও উজান থেকে আসছে প্রবল ঢল। ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে যাদুকাটা, পাটলাই ও রক্তি নদীর তীরবর্তী এলাকার বাড়িঘর। হুমকিতে পড়েছে লাউড়েরগড় বিজিবি ক্যাম্প, স্কুল, মাদ্রাসা, বাজার সহ বিভিন্ন স্থাপনা। উপজেলাবাসী গত এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি হয়ে আছেন। একজনের সঙ্গে আরেকজনের জনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। কিছু অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও পুরো উপজেলা গত এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ নেই। মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। এক দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন উপজেলাবাসী।
সীমান্তবর্তী লালঘাট গ্রামের সরাফত আলী জানায়, পাহাড়ী ঢলে সীমান্ত এলাকা তছনছ হয়ে গেছে। যেখানে কোনদিন পানি উঠেনি এবারের বন্যায় সেখানে পানি উঠেছে। শত শত পুকুর ভেঙ্গে ও ডুবে মাছ হাওরে চলে গেছে। পানি একটু কমলেও দুর্ভোগ কমছে না। সীমান্ত এলাকায় খাবার, বিশুদ্ধ পানি, মমবাতি, ও সিলিন্ডার গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। বাজারে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।
চাড়াগাঁও গ্রামের সাবেক মেম্বার হাসান মিয়া জানান, একদিকে ভয়াবহ বন্যা, অপরদিকে পাহাড়ি ঢলে সীমান্তের লোকজনকে শেষ করে দিয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী কিছু বিতরণ করা হলেও বন্যায় আক্রান্ত সীমান্তের লোকজন বঞিত হচ্ছেন।
লাকমা গ্রামের সাফিল মেম্বার জানান, তাহিরপুর সীমান্তবর্তী এলাকার বাড়ি ঘর পাহাড়ি ঢলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় পুকুর ডুবে মাছ চলে গেছে এবং পুকুরগুলো বালিতে ভরে গেছে। ট্যাকেরঘাট স্কুল এন্ড কলেজে বন্যা কবলিত, লাকমা, দুধের আউটা, পুটিয়া, জামালপুর, ভোরাঘাট, মদনপুর সহ বেশ কয়েকটি বন্যা কবলিত গ্রামের ৭-৮শ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তারা এক কাপড়ে কোনরকম এখানে এসে জীবন বাঁচিয়েছেন। তারা এখন খাবার সংকট ভোগছেন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, এ জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় সুরমা নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার কমেছে। বর্তমানে সুরমা নদীর পানি সমতল ৭.৯২ মিটার, যা বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রায়হান কবির বলেন, সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্রেসহ উপজেলা জুড়ে ৫টি টিম খাবার বিতরণ করছে। সরকারি ভাবে ত্রাণ সামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমান আসতে শুরু করেছে। পর্যায়েক্রমে সীমান্ত এলাকা সহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ্যদের ত্রাণসামগ্রী দেয়া হবে। তিনি এই দুর্যোগে মুহূর্তে দেশ বিদেশের সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন।