তাহিরপুরে বাদামের বাম্পার ফলন

আমিনুল ইসলাম, তাহিরপুর
তাহিরপুর উপজেলায় এ বছর বাদামের ভালো ফলন হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন ব্যতীত বাকী ৬টি ইউনিয়নেই বাদাম চাষ হয়েছে। এ বছর উপজেলায় প্রায় ১৫’শ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষাবাদ করা হয়েছে। কৃষকরা তাদের জমিতে মাইজাচর, পি দানা, ঢাকা—১, ঝিঙ্গা, বারি—৪, ৫ জাতের বাদাম বীজ চাষাবাদ করেছেন। ৬টি ইউনিয়নে প্রায় তিন হাজার কৃষক তাঁদের জমিতে বাদামের চাষাবাদ করেন।
বাদাঘাট ইউনিয়নের গাজীপুর গ্রামের কৃষক আক্তার হোসেন জানান, এ বছর অনুকূল আবহাওয়ার কারণে বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি কিয়ার (৩০ শতকে এক কিয়ার) জমিতে ৮ থেকে ৯ মণ বাদাম হয়েছে। প্রতি মণ বাদাম ৩৮’শ থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। তিনি আরও জানান, বাদামের বাজার মূল্য ভালো থাকায় তিনি তার ৩ কিয়ার জমির বাদাম এক লক্ষ টাকায় বিক্রি করেছেন।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের বেলে মাটির জমিতে মাইজাচর, পি দানা, ঢাকা—১, ঝিঙ্গা, বারি—৪, ৫ জাতের বাদাম বীজ চাষাবাদ করেছে।
বাদাঘাট ইউনিয়নের ইউনূছপুর গ্রামের কৃষক ইউপি সদস্য দ্বীন ইসলাম বলেন, এ বছর তিনি ৫ কিয়ার (৩০ শতকে এক কিয়ার) জমিতে বাদাম চাষাবাদ করছিলেন। প্রতি কিয়ার জমিতে ৮ মণ করে বাদাম পেয়েছেন। প্রতি মণ বাদাম তিনি বিক্রি করছেন ৪ হাজার টাকায়। এতে করে তিনি প্রতি কিয়ার জমির বাদাম ৩২ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন এবং প্রতি কিয়ার জমিতে বাদাম রোপন ও আনুসাঙ্গিক ব্যয় হয়েছে সাড়ে সাত হাজার টাকা।
সম্প্রতি উপজেলার শান্তিপুর, চানপুর, মাহারাম, করপুলার হাওর ঘুরে দেখা যায়, বেলে জমিতে রাশি রাশি বাদামক্ষেত। সবুজ বাদাম খেতের সৌন্দর্যে্য ভরে গেছে গোটা সীমান্ত এলাকা। স্থানীয় কৃষকেরা ওই বাদামখেতের বাদাম উঠাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বাদাঘাট ইউনিয়নের ঘাগটিয়া গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গত নভেম্বরে ধার করে তাঁর আড়াই কিয়ার জমিতে শাক সবজির আবাদ করেন। গেল তিন দফা বৃষ্টিতে অধিকাংশ সবজিই নষ্ট হয়। এতে বড় লোকসানের মুখে পড়েন তিনি। হতাশা ঝেড়ে নতুন উদ্যমে আরও ৩ কিয়ার জমিতে বাদাম চাষাবাদ করে ২৫ মণ বাদাম তিনি উৎপাদন করেছেন।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের জামালগড় গ্রামের কৃষক সবুজ মিয়া বলেন, তার জমির উৎপাদিত বাদাম বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। উৎপাদন খরচ মিটিয়ে তিনি অনেক লাভ করছেন। বাদামই তাঁর মলিন মুখে হাসি এনে দিচ্ছে।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাসান—উদ—দৌলা বলেন, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ও রোগ—বালাইয়ের উপদ্রব তেমন না থাকায় এবার তাহিরপুরে বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাদামের দানাগুলোও বেশ পুষ্ট হয়েছে। কৃষকেরাও ভালো দামে বিক্রি করছেন সেগুলো। এতে ভবিষ্যতে আরও বেশিসংখ্যক কৃষক বাদাম চাষে আগ্রহী হবেন।