দিরাই-শাল্লার স্বপ্নের যোগাযোগ/ ৫২৫ কোটি টাকা ব্যয়ের সড়ক নির্মাণের কার্যাদেশ শীঘ্রই

বিশেষ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের সবচাইতে প্রত্যন্ত উপজেলা শাল্লাবাসী যোগাযোগ সড়কের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন। শাল্লার প্রায় দুই লাখ মানুষ গেল এক যুগ বছর ধরেই এই সড়ক নির্মাণের দাবি করে আসছিলেন। তিন মাস আগে ৫২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় সিলেট থেকে এই সড়কের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। শীঘ্রই দরপত্র মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুমোদন হবে। এই মাসের শেষ দিকে অথবা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হবে। কাজের মেয়াদ দুই বছর থাকলেও আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দৃশ্যমাণ কাজ শেষ করার তাগিদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক বিভাগের দয়িত্বশীলরা।
হাওরের তলানির উপজেলা শাল্লার প্রায় দুই লাখ মানুষের স্বপ্ন ছিল সারাদেশের সঙ্গে সড়ক পথে সংযুক্ত হবেন তারা। ২০১১ সালে সড়কের কাজও শুরু হয়েছিল। ২০১৭ সালে শেষ হবার কথা ছিল কাজ। অথচ নির্ধারিত সময়সীমার ছয় বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত এ সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হয় নি। এর আগে একবার সড়কের কিছু কাজ হয়েছিল। কিন্তু যান ও জন চলাচলের উপযুক্ত না হওয়ায় এই সড়ক মানুষের কোন কাজে আসে নি। সড়কের অনেক অংশ হাওরের আফালের ঢেউয়ে বিলীন হয়ে গেছে। এই সড়কে বর্তমান সরকারের সময়কালে কাজ শুরু হবে কী-না এই নিয়েও দুশ্চিন্তা ছিল স্থানীয়দের মধ্যে।
২০১০ সালে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের জনসভায় শাল্লাবাসীর বহুদিনের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে এই সড়ক নির্মাণের আশ^াস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১১ সালে সড়কের কাজ শুরু হলেও কাজে অনিয়ম এবং কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় ওই সময়ে সরকারের প্রায় ৯২ কোটি টাকা ভেস্তে যায়।
গেল দুই বছর ধরে কয়েক দফায় সরেজমিনে যাচাই করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উর্ধ্বতন প্রকৌশলীরা এই সড়কের প্রকল্প প্রস্তাবনা সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠান। পুরোনো অংশ অর্থাৎ আগের মতোই টেলিফোন বাজার ও আনন্দপুর হয়ে ৫৯৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকার প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। যাচাই-বাছাইসহ সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এটি দরপত্র প্রক্রিয়ায় যায়। তিন মাস আগে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সিলেটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় হতে ৫২৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এই সড়কের দরপত্র আহ্বান করা হয়।
চার গ্রুপে আহ্বানকৃত দরপত্রে রয়েছে, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের মদনপুর পয়েন্ট থেকে দিরাই পর্যন্ত পুরোনো সড়কের তিনটি বেইলি সেতু ভেঙে নতুন আরসিসি সেতু করা। এরমধ্যে কাঠইড়, বোগলাকাড়া ও দরগাহ্পুর সেতু রয়েছে। এছাড়া মদনপুর-দিরাই সড়কের মদনপুর পয়েন্ট, নোয়াখালী, গণিগঞ্জ, পাথারিয়া ও দিরাইয়ে বাসস্টোপেজ করা হবে। ওদিকে, দিরাই থেকে শাল্লাগামী (ঘুঙ্গিয়ারগাঁও) সড়কটি শাল্লা উপজেলা সদরের পাশের দাড়াইন নদীতে হওয়া সেতু পর্যন্ত গিয়ে শেষ হবে। শেষ মাথায়ও থাকবে বাসস্টোপেজ। সড়কের বাইরে আরও ২০ ফুট প্রশস্ত বাসস্টোপেজ হবে।
সড়ক ও জরপথ বিভাগের দায়িত্বশীলরা জানান, চারটি গ্রুপে আহ্বান করা দরপত্র প্রক্রিয়ায় নিয়োগকৃত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দ্রুত কাজ আদায়ের জন্য পৃথক পৃথকভাবে চার স্থানে কাজ করানো হবে। দিরাই থেকে শাল্লা পর্যন্ত ২৬ ফুট চওড়া সড়ক হবে। সড়কের উচ্চতা হবে সর্বশেষ বন্যার লেবেলেরও উপরে। পুরাতন সড়কের ব্যবহার উপযোগী ১৭ টি সেতুকে কাজে লাগানো হবে। নতুন আরও ১৪ টি সেতু কালভার্ট করা হবে। প্রত্যেকটি সেতুর নিচ দিয়ে নৌ-চলাচল সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। সর্বোচ্চ বন্যা লেভেলের চেয়েও ১৫ ফুট উঁচু হবে প্রত্যেক সেতু। সেতুর প্রশস্ততা হবে ফুটপাতসহ ৩৪ ফুট। ফুটপাত বাদে যানবাহন চলবে ২৪ ফুট সড়ক পথে।
সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রাং বললেন, দিরাই-শাল্লা সড়কের দরপত্র হয়েছে তিন মাস আগে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে। শীঘ্রই দরপত্র মূল্যায়ন প্রতিবেদন দেওয়া হবে। এই মাসের শেষ অথবা এপ্রিল মাসের শুরুতে কার্যাদেশ প্রদান করে কাজ শুরু করা হবে। কাজের মেয়াদ দুই বছর থাকলেও আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দৃশ্যমান কাজ আদায় করা হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. জয়া সেন গুপ্তা বললেন, আমি আশাবাদী মানুষ। অর্থনৈতিক ক্রান্তিকালেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর বদান্যতায় অফিসিয়েল কাজ অনেক এগিয়েছে। কাজটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত উৎকণ্ঠা থাকবে সকলের মত আমারও।