দেশীয় মাছের অভয়াশ্রম/ ৩০০ ফুটের আশেপাশে মাছ শিকার নিষিদ্ধ

জামালগঞ্জ প্রতিনিধি
জামালগঞ্জের হাওর জলাশয়গুলো এক সময় ছিল দেশীয় মাছের ভান্ডার। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবসৃষ্ট নানা অনিয়মের কারণে দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। জামালগঞ্জের বিভিন্ন হাটবাজারে এখন খামারের মাছের ছড়াছড়ি। তবে আশার কথা, দেশি প্রজাতির মাছের চাহিদা ও কদর আবারও সেসব মাছ ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা জাগিয়েছে। এমন অবস্থায় দেশীয় মাছের উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা মৎস্য অফিস। জামালগঞ্জের সদর ইউনিয়নের শাহপুর, গোলামীপুর সুরমা নদীর পয়েন্টে গড়ে তোলা হয়েছে দেশীয় মাছের অভয়াশ্রম। দেশিয় প্রজাতির মাছ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিস্তারের লক্ষ্যে জামালগঞ্জে এডিপির অর্থায়নে গড়ে তোলা হয়েছে এই অভয়াশ্রম। এতে সফলতা মিলবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। অভয়াশ্রমের ৩০০ ফুটের আশেপাশে সারা বছর মাছ শিকার নিষিদ্ধ থাকবে।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, শুষ্ক মৌসুমে উন্মুক্ত জলাশয়গুলো শুকিয়ে যায়। এতে মাছের অভয়াশ্রম দিন দিন কমে যাচ্ছে। এছাড়া প্রজনন মৌসুমে মাছ শিকার, হাওর বিল সেচে অবাধে মাছ ধরার কারণে কমে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। দেশিয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় মৎস্য অফিস এডিপির অর্থায়নে একটি প্রকল্প নিয়েছে। সদর ইউনিয়নের শাহপুর, গোলামীপুরে সুরমা নদীর বাকে ০.৬ হেক্টর জায়গাজুড়ে অভয়াশ্রমে সাড়া বছর বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ বংশ বিস্তার করবে। প্রতি বর্ষায় এই মাছ উন্মুক্ত জলাশয়ে বিচরণ করবে। এতে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুিপ্ত রোধ হবে এবং মাছের উৎপাদনও বাড়বে।
সরজমিনে শাহপুর, গোলামীপুর সুরমা নদীতে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশ ও কাঠ ও লাল পতাকা দিয়ে চার পাশ ঘিরে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে দেশিয় প্রজাতির মাছ সংগ্রহ করে অভয়াশ্রমে প্রজনন ঘটানো হচ্ছে। অভয়াশ্রমে কই, মাগুর, পাবদা, রিটা, বাচা, চিতল, বাউস, আইড় মাছ সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করে বংশ বিস্তার করা হবে।
এছাড়াও প্রকল্পের সাথে যুক্ত করা হচ্ছে এলাকার স্থায়ী বাসিন্দাদের। মাছের রক্ষণাবেক্ষণ কাজে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় মৎস্যজীবীরা। ১০০ জন মৎস্যজীবী নিয়ে গঠন করা হয়েছে অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনা কমিটি। এই কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে অভয়াশ্রম। অভয়াশ্রমের ৩০০ ফুটের আশেপাশে সারা বছরের জন্য মাছ শিকার নিষিদ্ধ থাকবে।
অভয়াশ্রমে থাকা মৎস্যজীবীগণ জানান, আমরা মৎস্য অফিসের উদ্যোগে দেশীয় মাছের বৃদ্ধি ও সংরক্ষণে অভয়াশ্রম গড়ে তুলেছি। আশা করি এতে মাছের প্রজনন বৃদ্ধি ও দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্ত মাছের বংশ বৃদ্ধি হবে।
গত মঙ্গলবার অভয়াশ্রম উদ্বোধন পূর্ববর্তী আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনন্দা রাণী মোদক। জামালগঞ্জ সদর ইউপি সচিব গোনেন্দ্র কুমার তালুকদারের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ভীমখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান তালুকদার, জামালগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মো. ওয়ালী উল্লাহ সরকার, জামালগঞ্জ সদর ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান মো. নুরুল হুদা, ভীমখালী ইউপি সদস্য মো. বাবুল মিয়া, জামালগঞ্জ সদর ইউপি সদস্য মো. আতিকুর রহমান আতিক।