দোয়ারায় সমবায় সমিতির নাম ভাঙ্গিয়ে সুদের ব্যবসা

আমাদের দেশে সমবায় পদ্ধতির মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে কাক্সিক্ষত ফলাফল না পাওয়ার একটি প্রধান কারণ হলো সমবায় নীতির যথাযথ চর্চার অভাব। সমবায় পদ্ধতি চর্চার নামে জায়গায় জায়গায় গড়ে উঠেছিলো দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়মের কেন্দ্র। আমাদের পবিত্র সংবিধানে সম্পদের উপর সমবায় মালিকানার স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে সমবায় পদ্ধতি চর্চার যে অভূতপূর্ব সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়েছিলো সেটি আমরা গ্রহণ করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছি। দোয়ারাবাজার উপজেলার সনাতন শ্রমজীবী সমবায় সমিতি নামের তথাকথিত সমবায় সংগঠনটি এই ধারারই প্রতিনিধি। সংগঠনটির সভাপতি ব্যক্তিবিশেষকে ঋণজালে ফাঁসিয়ে একসময় মূল টাকার আড়াই গুণ বেশি টাকা দাবি করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের বদলে সর্বনাশ ঘটিয়ে চলেছেন বলে গতকাল দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা যায়। প্রকাশিত সংবাদতথ্য অনুসারে এক নিরূপায় নারী ওই সমিতি থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন মাসিক শতকরা সাত টাকা সুদে। ঋণ দেয়ার সময় তার হাতে দেয়া হয় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ২০ হাজার টাকা নাকি তার নামে সঞ্চয় হিসাবে জমা থাকবে। ঋণগ্রহীতা নারী দুই লাখ টাকার মধ্যে এক লাখ টাকা সুদসহ পরিশোধ করার পর সমিতির সভাপতি পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন দাবি করে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন। ঋণ দেয়ার সময় ঋণগ্রহীতার নিকট থেকে দুইটি স্বাক্ষরিত শূন্য চেক রাখা হয়। পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নেয়ার মিথ্য্ াদাবির কথা শুনে ওই মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার মেয়ে বিষয়টির সুরাহা চেয়ে দোয়ারাবাজারের উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট প্রতিকার প্রার্থনা করেছেন। উপজেলা সমবায় অফিসার প্রাথমিক তদন্ত শেষে ওই নারীর পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নেয়ার সমর্থনে পর্যাপ্ত ডকুমেন্ট সমিতিতে পাননি বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে জেলা সমবায় কর্মকর্তা বলেছেন, সমিতির নামে দাদন ব্যবসার কোনো বৈধতা নেই।
অথচ এই সমিতিটি নাকি শ্রেষ্ঠ সমবায় সমিতির পুরষ্কার পেয়েছে। এমনই দাবি করেছেন সভাপতি। তিনি নিজের মহত্ত্ব প্রমাণ করতে বিনা সুদে পাঁচ লাখ টাকা দেয়ার দাবিও করে ফেলেছেন অবলীলায়। অথচ ওই সমিতির সাথে সময়ে সময়ে জড়িত একাধিক সদস্য সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তারা সমিতির নীতিবিরোধী কার্যক্রম তথা সুদের ব্যবসার কারণে ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে সমিতি ছেড়ে দিয়েছেন। স্থানীয় বেশ কিছু মানুষও ওই সমিতির বিরুদ্ধে ছলচাতুরির অভিযোগ করেছেন। সনাতন শ্রমজীবী সমবায় সমিতি গঠন করা হয়েছিলো সনাতন ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর কল্যাণের জন্য। প্রতিষ্ঠাকালীন অনেক সদস্য জানিয়েছেন, কন্যাদায়গ্রস্ত অভিভাবককে সহায়তা দান, অসহায় পরিবারকে সহায়তা দান ইত্যাদি ছিলো সমিতি গঠনের উদ্দেশ্য। কিন্তু সমিতি এ জাতীয় কল্যাণমূলক কোনো কাজ করেছে বলে কেউই বলেননি। স্পষ্টতই বুঝা যায় এই সমিতি ও সমিতির সভাপতি রিংকু দেব সমিতির নামকে ব্যবহার করে এর ছদ্মাবরণে গলাকাটা হারে সুদের ব্যবসাই করে যাচ্ছেন। অভিযোগকারী নারীকে মাসিক শতকরা ৭ টাকা সুদে তিনি টাকা দিয়েছেন। এমন গলাকাটা সুদহার বাংলাদেশ বা বিশ্বের কোথাও আছে কি? এই দানবকে এখনই থামানো এবং তার অপকর্মের সাজা দেয়ার সময় এসেছে। আইনের জটিল ঘোড়প্যাঁচে তাকে সহায়তা করে কেউ যাতে অমানবিকতার নোংরা কাদায় নিজের শরীর ময়লা না করেন সেই অনুরোধ আমাদের।
কথিত সভাপতি রিংকু দেব কত বছর ধরে এই সমিতির ঘোষিত অঘোষিত সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন এই তথ্য জানা দরকার। সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা, খাতাপত্র, নিরীক্ষা, ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন, ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা, বাজেট, মুনাফা বণ্টন, কার্যক্রম পরিচালনায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ; প্রভৃতি বিষয় সমবায় আইন ও বিধি অনুসারে প্রকৃতপক্ষে পরিচালিত হয় কিনা তা সবিশেষভাবে খতিয়ে দেখে অভিযুক্ত সভাপতির বিরুদ্ধে ওই অসহায় ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগের আলোকে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানাই।