ধর্মপাশার সুখাইড়ে উত্তেজনা

বিশেষ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের বাবার নামের মাধ্যমিক স্কুল এবং কালীবাড়ি মন্দির কমিটির মধ্যে জায়গা নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সংসদ সদস্য স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে এসে মন্দিরের তৈরি আটটি দোকানকোঠা তার লোকজনকে দিয়ে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়ায় এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার আবার দোকানকোঠা ভাঙার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে খবরে এলাকায় দুইপক্ষ সংগঠিত হচ্ছে। সংসদ সদস্য অবশ্য বলেছেন, ‘সব কিছুই রটনা, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, মিথ্যাচার’।
এলাকাবাসীর জানান, ব্রিটিশ শাসনামলে সুখাইড়ের জমিদার মথুর চন্দ্র রায় বাহাদুর সুখাইড় কালি মন্দিরের নামে ৪৫ শতাংশ জমি লিখে দেন। মন্দিরের পাশে ১৯৪২ সালে একটি হাইস্কুলও প্রতিষ্ঠা হয়। ওখানে জমি ছিল ১৮ শতাংশ। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভক্তির সময় স্কুলের শিক্ষকরা এলাকা ছাড়লে, এই স্কুল বন্ধ হয়ে যায়।
২০০০ সালে আবার ওখানে স্কুল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তিন বছর পর সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। ২০১১ সালে মোয়াজ্জেম হোসেন রতন সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা-জামালগঞ্জ-তাহিরপুর ও মধ্যনগর) আসনের সংসদ সদস্য হবার পর ২০১৩ সালে সরকারি খাস জমিতে নিজের বাবার নামে আব্দুর রশিদ মেমোরিয়াল হাইস্কুল নামের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন । ওই স্কুলের ভবন নির্মাণের সময় মন্দিরের কিছু জমি স্কুল ভবনে ঢুকেছে বলে দাবি করেন স্থানীয় সনাতন ধর্মীরা। এখন আবার স্কুলের সিড়ি নির্মাণ মন্দিরের জমিতে করতে চাইলে, স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বাধা দেন। এই নিয়ে ক্ষুব্ধ হন স্থানীয় সংসদ সদস্য। বৃহস্পতিবার আব্দুর রশিদ মেমোরিয়াল হাইস্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণি অনুষ্ঠানে স্কুলের ভবন ও জমি নিয়ে কথা ওঠান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। এসময় তিনি মন্দিরের আটটি দোকানকোঠা স্থানীয় প্রশাসনকে ভাঙার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আপনারা না ভাঙলে আমার লোকজনই এটি ভাঙবে।’ এরপর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। মন্দির কমিটির লোকজন বলেছেন, আগামী মঙ্গলবার শুনেছি এটি ভাঙার চেষ্টা করা হবে। তারা তা প্রতিহত করবেন।
ধর্মপাশা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক ঝুটন দাস বললেন, জমিদারের দান করা জমি আছে ৬৩ শতাংশ, এরমধ্যে ৪৫ শতাংশ মন্দিরের জন্য। অন্যটুকু স্কুলের জন্য। এমপি সাহেব তাঁর বাবার নামে করা স্কুল তিনি নিজে জমি দিয়ে করলেই সুন্দর দেখাতো, তিনি তা করেন নি। এখন যেহেতু স্কুলের ভবনের জন্য জমি প্রয়োজন সুখাইড় জুনিয়র স্কুলের নামে যে জমি ছিল, সেই ১৮ শতাংশ দিতে সকলেই সম্মত হয়েছেন, কিন্তু মন্দিরের ৪৫ শতাংশ থেকে কেউ জমি দিতে রাজি নয়। তা ছাড়া মন্দিরের দোকানকোঠার আয় দিয়ে প্রতিদিনের পূজা অর্চনার খরচ মেঠানো হয়। এটি কিভাবে ভাঙার কথা বলা হয়। একই ধরণের মন্তব্য করলেন, গ্রামের তরুণ কামনা দাস ও পিযুষ কান্তি দাস।
গ্রামের বাসিন্দা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নবনী কান্ত দাস বললেন, ৬৪ ইংরেজির এসএ রেকর্ডে কালীমন্দিরের নামে ৪৫ শতাংশ জমি রেকর্ড হয়েছে। বর্তমান রেকর্ডে কিভাবে ২২ শতাংশ মন্দির এবং ২৩ শতাংশ এমপি সাহেবের বাবার নামে কিভাবে রেকর্ড হলো প্রশ্ন রেখে বললেন, স্কুলের একটি ভবনের কিছু অংশ মন্দিরের জমিতে করা হয়েছে। মন্দির কমিটি যেহেতু ওঠা হয়ে গেছে, সেটা না ভাঙারই পক্ষে, কিন্তু এখন আরও জমি ছেড়ে দেবার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে, এটা কেউ মানতে নারাজ। তাছাড়া পূজা অর্চনার খরচ মেঠানোর দোকানকোঠা গুলো ভাঙার কথা শুনায় সকলে ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ বিলকিস বললেন, সম্প্রীতি বজায় রেখে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেবার চেষ্টা করছি। আশাকরছি পারবো।
ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সীতেশ চন্দ্র সরকার বললেন, ‘মন্দিরের এবং স্কুলের জমি চিহিৃত করার পরই বলা যাবে, কার জমি কে দাবি করছে। এর আগে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। সংসদ সদস্য মহোদয় নির্দেশ দিয়েছিলেন, বিষয়টি দেখার জন্য, আমি বলেছি দুইপক্ষের কাগজপত্র দেখে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এমপি সাহেব নিজের লোক দিয়ে ভেঙে ফেলার কথা বলা প্রসঙ্গে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হন নি।
সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বললেন, আমি মন্দিরের স্থাপনা ভাঙার কথা বলি নি। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এর আগেও হয়েছে। এখনো হচ্ছে, সামনে নির্বাচন, যারা এই আসনে প্রার্থী হতে চায়, তারাই এসব ষড়যন্ত্র করে আমার বিরুদ্ধে মাঠ গরম করতে চায়। এটা কোন বিষয় নয়।