সোহানুর রহমান সোহান
এবার ধানে বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়েছেন ধান। ইতোমধ্যে হাওরে শতভাগ ধান কাটাও সম্পন্ন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নির্বিঘেœ সোনালী ধান গোলায় তুলেছেন কৃষক। কয়েক বছর পর শঙ্কাহীনভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে বোরো ধান উত্তোলন করেছেন জেলার পৌঁনে চার লাখ কৃষক। এর আগে জেলার বহু কৃষক এমন সোনার বৈশাখ দেখেননি। রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া থাকায় ধান শুকানো শেষ করে গৃহপালিত পশুর প্রধান খাদ্য খড় শুকিয়ে গাদায় তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা। কাঁচা ঘাস কম উৎপাদন হওয়ায় শুকনো খড়ের উপর নির্ভরশীল জেলার সাড়ে ৭ লক্ষের অধিক গরু-মহিষ। শতভাগ বোরো ধানের পাশাপাশি এবছর ১৬০ কোটি টাকার ২ লক্ষ মে.টন শুকনো খড় উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলার প্রাণি সম্পদ দপ্তরের দায়িত্বশীলরা।
প্রাণী সম্পদ দপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, সুনামগঞ্জে মোট ধান উৎপাদনের অর্ধেক কাঁচা খড় উৎপাদন হয়। যা থেকে শুকানোর পর এক চতুর্থাংশ গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত শুকনো খড় পাওয়া যায়। জেলায় এই বছর কাঁচা খড় শুকানোর পর দুই লক্ষ মে.টন অর্থাৎ ২০ কোটি কেজি শুকনো খড় উৎপাদিত হয়েছে। প্রত্যেক কেজি খড়ের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ৮ টাকা দরে দুই লক্ষ মে.টন খড়ের মূল্য ১৬০ কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে জেল প্রাণীসম্পদ বিভাগ।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামের কৃষক ফজর আলী বলেন, মানুষের জন্য যেভাবে ধান প্রয়োজন, গরু-বাছুরের জন্য তেমনি প্রয়োজন খড়। ধান শুকানো শেষ। এখন খড় শুকিয়ে বাড়িতে নিচ্ছি।
গোবিন্দপুর গ্রামের আব্দুল আলীম বলেন, ‘মানুষের ক্ষিধা লাগলে যে কোনো ভাবে তার ক্ষিধা মিটিয়ে নিতে পারে। অন্য কাউকে বলতে পারে। কাজ কাম করতে পারে। কিন্তু গরুর ক্ষিধা লাগলে খাবার না পেলে সে কিছুই বলতে পারে না। তার খাবার আমাদের খাবারের আগে যোগান রাখতে হয়।’
ইউনিয়নের বড় কৃষক মুরাদ মিয়া বললেন, ‘বন্যার কারণে গত বছর খড় তুলতে পারি নাই। খুব কষ্ট হয়েছে গরু পালতে। শেষে এক হাজার টাকা মন দরে খড় কিনে গরুকে কোনোমতে খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখছি। এবছর আল্লাহ আমাদের বাম্পার ফলন দিছেন, সাথে খড়ও দিছেন। গ্রামের সবাই ধানের সাথে খড় ঘরে তুলতে পেরেছে।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান বললেন, সুনামগঞ্জ জেলায় সাত লক্ষ ৬০ হাজারের উপর গরু-মহিষ রয়েছে। হাওর অধ্যুষিত এই জেলা বছরের অর্ধেক সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকে, তাই এখানে কাঁচা ঘাস কম পাওয়া যায়। যার কারণে এখানে শুকনো খড় প্রধান গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবহাওয়া ভালো থাকায় এই বছর বোরো মৌসুমে দুই লক্ষ মে.টন খড় উৎপাদন হয়েছে। যা সুনামগঞ্জের গবাদি পশুর চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্যমতে, এ বছর জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৯৫ হেক্টর বেশি। সম্ভাব্য ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৩ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অতিক্রম করে ১৩ লাখ ৫৯ হাজার মেট্টিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়ে গেছে। কাটার বাকি আছে আরও ২শ’ হেক্টর জমির ধান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, আমাদের শতভাগ বোরো ধান কাটা প্রায় শেষের পথে। রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া থাকায় কৃষকরা সুন্দর ভাবে ধান ঘরে তুলছেন। একই সাথে গবাদিপশুর প্রধান খাবার খড় হাওরেই শুকাতে পারছেন।
- আলফাত উদ্দিন আহমদ’র মৃত্যুবার্ষিকী আজ
- বঙ্গবন্ধুর ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক