নকল ঔষধ তৈরি ও বিপণন দমন করা হোক

সম্প্রতি জরায়ু মুখে ক্যানসার প্রতিরোধে নকল ভ্যাকসিন (টিকা) তৈরি ও বিক্রির একটি চক্রের পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ভারত থেকে অবৈধ পথে হেপাটাইটিস বি’র আমদানি নিষিদ্ধ ভ্যাকসিন জেনেভ্যাকুবি এনে তা দিয়ে জরায়ু ক্যানসারের নকল ভ্যাকসিন বানিয়ে বিক্রি করে আসছিলো এই চক্র। এই চক্রকে সহায়তাকারী হিসাবে ডা. এফ. আর. খান ফাউন্ডেশন, আল নূর ফাউন্ডেশন ও পপুলার ভ্যাকসিনেশন এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সনাক্ত করা হয়। রাজধানী ঢাকায় এই নকল ভ্যাকসিন তৈরি ও বিক্রির মূল হোতা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা। বিভিন্ন নামের ভেজাল বা নকল ঔষধ তৈরির বিষয়টি বহুদিন ধরে জানা ছিলো। এবার এর সাথে যুক্ত হলো নকল ভ্যাকসিন বানানোর ভয়ংকর তথ্য। বিষয়গুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য কী মাত্রার ক্ষতিকারক তা ভাবলে যে কারও গা শিউড়ে উঠে। কিন্তু সমস্যা হলো, এই নকল ঔষধ ও ভ্যাকসিন বানানোর চক্রকে নির্মূল করতে পারছে না আমাদের দেশের কোনো প্রতিষ্ঠান।
মানুষ ঔষধ গ্রহণ করে সুস্থতা অর্জনের জন্য। কিন্তু নকল ঔষধ গ্রহণ করে মানুষ আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। মৃত্যুমুখেও ধাবিত হচ্ছেন অনেকে। নাম করা ব্র্যান্ডের দামি ঔষধ নকল করার প্রবণতা বহু দিনের পুরানো। এসব নকল ঔষধ কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করে অতিরিক্ত মুনাফা্ অর্জনের জন্য নানা স্তরে রয়েছে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। সাধারণত অপেক্ষাকৃত কম উন্নত এলাকাগুলোর ফার্মেসিতে এইসব নকল ঔষধের বিপণন বেশি হয়ে থাকে বলে জানা যায়। দেশের ঔষধের মাননিয়ন্ত্রণ ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনা মনিটরিংয়ের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর নামের একটি প্রতিষ্ঠান আছে। আছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশাল নেটওয়ার্ক। আছে ভোক্তা্ অধিদপ্তরসহ নানা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কার্যত এসব প্রতিষ্ঠান নকল ঔষধের বিশাল বাজারকে নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ফলে সাধারণ মানুষ টাকা দিয়ে নকল ঔষধ খেয়ে আরও বেশি স্বাস্থ্য ঝঁুকিতে পতিত হচ্ছে। কার্যত এসব নিয়ে তেমন মাথা ব্যথাও নেই কারও। এক ধরনের উপেক্ষার মনোভাব সর্বত্র। এই সুযোগে অসাধু চক্র আরও দুর্বিনীত হয়ে উঠছে।
আমরা সুনামগঞ্জের প্রেক্ষিতে দেখতে পাই, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ রাখার দায়ে জরিমানা আদায় করা হয়। কিন্তু কোথাও নকল ঔষধ রয়েছে কিনা তা উদঘাটিত হয়েছে এমন খবর আমরা কখনও পাইনি। এর মানে কি সুনামগঞ্জের জনপদগুলোতে যত ফার্মেসি রয়েছে সেগুলোর কোনোটিতে নকল ঔষধ বিক্রি হয় না? বাংলাদেশে নকল ঔষধের রমরমা বাজারের অবস্থা থেকে এরকম কথা হলফ করে বলার উপায় নেই। রাষ্ট্র ও সরকারের মৌলিক দায়িত্ব হলো জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সকল আয়োজনকে কঠোর হাতে দমন করা। কিন্তু এরকম খুব কমই হয়ে থাকে। ঢাকার নকল ভ্যাকসিন কাণ্ডটিও একজন ভোক্তভোগী টিকাগ্রহীতার অভিযোগের ভিত্তিতে উদঘাটিত হয়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণমূলক প্রতিষ্ঠানের কর্মকৌশলের পথ ধরে প্রাথমিক পর্যায়েই উদঘাটিত হওয়ার কথা ছিলো। নকল ভ্যাকসিন বিক্রি করে বহু টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর সচেতন ব্যক্তিটি প্রতিবাদী না হলে আরও বহুদিন চক্রটি যে অধরাই থেকে যেত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না্। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠা উচিৎ। বিশেষ করে যেখানে মানুষের জীবনের নিরপত্তার বিষয়টি জড়িত সেখানে তো কোনো ধরনের শিথিলতা দেখানোর সুযোগ থাকে না।
বাংলাদেশ থেকে নকল ও ভেজাল ঔষধ তৈরি ও বিপণন কঠোর হাতে দমন করা হোক, এ আমাদের একান্ত কামনা। রক্ষকদের অবশ্যই রক্ষাকর্তার ভূমিকায় থাকতে হবে। এর বদলে রক্ষক ও ভক্ষক এক কাতারে চলে আসলে যে ভয়ংকর বিপদাশঙ্কা থাকে এখন আমরা সেরকম এক অসহনীয় অবস্থায় আছি। এই অবস্থা থেকে সকলেই মুক্তি পেতে চায়।