নারী ও শিশু নির্যাতন কি চলতে থাকবে ?

রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু
১৭ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জের আলফাত স্কয়ারে ৬ বছর বয়সী শিশুকে ধর্ষণের প্রতিবাদে মানবন্ধন হয়। সুনামগঞ্জের পাশেই লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের এক ৫০ উর্ধ্ব লোক এই শিশুটিকে ধর্ষণ করে। রক্তাক্ত অবস্থায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের ডাক্তার তড়িঘড়ি পরীক্ষা করে ধর্ষণের কোন আলামত পায়নি বলে রিপোর্ট দিয়ে দেয়। দেশে যেখানে মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা মেডিকেল ও ডি.এন.এ প্রতিবেদনের রিপোর্ট নিতে ঘুরতে ঘুরতে জুতার তলা ক্ষয় হয়ে যায়। তখন ডাক্তার অল্প সময়ে রিপোর্ট দিয়ে মেয়েটিকে ডিসচার্জ দিয়ে দেয়। শোনা যায় প্রভাবশালীদের চাপে এই দুর্নীতির কাজটি হয়েছে। বর্তমানে শিশুটির যন্ত্রণা ও অসুস্থতার কারণে তাকে পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখনো সে হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন আছে। যারা তাকে দেখতে গিয়েছিলেন, তারা প্রত্যক্ষ করেছেন তার মায়ের অশ্রুসিক্ত কান্না। মানববন্ধনে শিশুটির পিতা হাউমাউ করে কেঁদে বলেছেন,‘আমার এই অবলা শিশুটির ধর্ষণের বিচার চাই।’ তিনি কান্নার জন্য আর কিছুই বলতে পারেন নাই। শোনলাম এই ধর্ষক শিশুটির পাশের বাড়িতেই থাকে। তারও পরিবার আছে। মেয়ে ছেলে আছে। কি করে এই পাষন্ডের মন চাইল এই জঘন্য নির্মম কাজটি করার? এই জঘন্য কাজ করে আবার ধামাচাপা দেয়ার জন্য সে ও যারা জড়িত তাদের কি মা-বোন, ছেলে-মেয়ে নেই? তারা কিভাবে এই অনৈতিক কাজে সহযোগিতা করে? যে ডাক্তার এই কাজ করেছেন- মানববন্ধনের প্রতিবাদের পর তো উচিৎ ছিল সিভিল সার্জন সাহেব এই ঘটনার সত্যতা যাচাই করা ও এই দুর্নীতির জন্য শাস্তি প্রদান করা।
আমরা কি এইভাবে সমাজকে এই অনৈতিক কাজ থেকে মুক্ত করবো, না! অনৈতিক কাজের জন্য উৎসাহ দেবো? সারা দেশে এবছর (গত জুন পর্যন্ত) শিশু ও নারী নির্যাতন মামলা হয়েছে ১,৭৮,২৩১ টি। এর মধ্যে ৫ বছর মেয়াদী বিচারাধীন মামলা ৪৩,১১৪ টি। সিলেট বিভাগে বিচারাধীন মামলা আছে ৩,৬০৮ টি।
ভূক্তভোগী মামলা করার পর মেডিকেল সনদ, ডি.এন.এ প্রতিবেদন পেতে দেরি হয় অথবা সঠিক প্রতিবেদন দেওয়া হয় না। স্বাক্ষী হাজির হয় না। অনেক সময় বিচার দীর্ঘায়িত হয়। ভূক্তভোগী সময় ও অর্থের দিক থেকে ক্লান্ত হয়ে যায়। তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটে। ফলে অপরাধী পার পেয়ে যায় এবং সমাজে অপরাধ প্রবণতা কমার বদলে বরঞ্চ অপরাধ বাড়ার জন্য উৎসাহিত হয়।
যেসব কারণে এভাবে ঘটনা ঘটেছে তার অন্যতম কারণ হলো বিচারহীনতা, দুর্নীতি এবং দায়িত্বে অবহেলা। এই অবুঝ শিশু কি ভবিষ্যতে আর স্বাভাবিক জীবন নিয়ে বাঁচতে পারবে? তার মনে যে আতঙ্ক বাসা বেঁধেছে সে কি তার মন থেকে তা দূর করতে পারবে? তার মনে প্রাণের চাঞ্চল্য কি ফিরে পাবে?
আমরা এমন এক সমাজে বাস করছি যে সমাজ দিনদিন ঘুনপোকার আক্রমণে ক্যান্সারের মতো নিঃশেষ করে দিচ্ছে। আমরা হারিয়ে ফেলেছি সামাজিক বন্ধন, মানবতা, মূল্যবোধ। আমরা অনেকেই ধর্ম নিয়ে দল পাকাই। কোন ধর্মই তো এমন অনৈতিক কাজ সমর্থন করে না। তবে আমরা কেন পারি না? এইসব অনৈতিক কাজে যারা জড়িত তাদের শায়েস্তা করতে? আমরা এসব চলতে দেবো? উৎসাহিত করবো এই অনৈতিক কাজকর্ম?