চিকিৎসা সেবার জন্য নার্স পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নার্সকে আমরা বাংলায় সেবিকা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করি। কেন এই চিকিৎসা সহযোগির পদটিকে সেবিকা বলা হয় তা বোধ করি বলে বুঝানোর দরকার নেই। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক রোগিকে প্রয়োজন অনুসারে চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে যান। সেই পরামর্শ বাস্তবায়ন করেন নার্স। একজন চিকিৎসক এক রোগিকে হয়তো দিনে একবারই দেখেন কিন্তু একজন সেবিকাকে রোগির কাছে আসতে হয় বহুবার। ঔষধ খাওয়ানো, ইঞ্জেকশন দেয়া, ব্লাডপেসার মাপাসহ সেরে উঠার জন্য করণীয় দিক-নির্দেশনা দিয়ে থাকেন নার্সরা। নার্সিং পেশাকে খুব সংবেদনশীল ভাবা হয়। তাই নার্সদের ধৈর্যশীল, মনোসংযোগী, সেবাপরায়ণ, আন্তরিক ও সহনাভূতিশীল ভাবা হয়। বাস্তবে নার্সদের চিকিৎসা ভূমিকা যাই হোক না কেন বা তাদের বিরুদ্ধে অসংবেদনশীলতার যত অভিযোগই থাকুক না কেন সর্বাবস্থায় আমরা নার্সিং পেশাকে অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখতে চাই। কিন্তু অনেকটা অবস্থার কারণে অনেকটা কাজের অত্যধিক চাপের কারণে অথবা সেবাপরায়ণ মনোভাবের অভাবে আজ নার্সিং পেশা নিয়ে বেশ সমালোচনা শোনা যায়। এই সমালোচনা অনেকক্ষেত্রে যৌক্তিক কিন্তু এর পিছনের কারণ আমরা কেউ অনুসন্ধান করি না। গতকাল ছিলো আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। এই দিবসকে সামনে রেখে আমরা মহান পেশাটি নিয়ে কিছু আলোচনা করতে চাই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী চিকিৎসক ও নার্সের অনুপাত হওয়ার কথা ১ঃ৩। অর্থাৎ একজন চিকিৎসকের সাথে তিনজন নার্স থাকবেন। কিন্তু চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রগুলোতে নার্স পদগুলোর ব্যাপক শূন্যতা নিয়েই আমরা প্রত্যাশিত স্বাস্থ্যসেবা আশা করি যা আদৌ কখনও পূরণ হবার নয়। দেশে এখন যে সংখ্যক নার্স প্রয়োজন তার শতকরা ছিয়াত্তর ভাগ পদই শূন্য। এই শূন্যতার কারণে নার্সদের উপর কাজের চাপ পড়ে অত্যধিক। ফলে নার্সদের পক্ষে রোগিদের মানসম্মত সেবা দান করা সম্ভব হয় না।
অন্যদিকে নার্সিং পড়াশোনার কারিকুলামেও যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করে থাকেন। এই ঘাটতির বিষয়টিতে যেমন রয়েছে ট্যাকনিক্যাল ঘাটতি তেমনি রয়েছে সেবাপরায়ণ এই পেশাটির জন্য যথাযথ মন মানসিকতা তৈরির ঘাটতিও। এই ঘাটতির সাথে যুক্ত হয় দেশের সার্বিক আত্মস্বার্থপরায়ণতার দুষ্ট সংস্কৃতি। এইসব কিছুর সাথে ব্যাপক পদশূন্যতার কারণে সার্বিকভাবে আমরা বাংলাদেশে মানসম্পন্ন নার্স খুব বেশি দেখতে পাই না। এই পেশাকে প্রকৃত চরিত্রে ফিরিয়ে আনতে হলে বিদ্যমান সকল সমস্যার সমাধান জরুরি। এখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছে। বহু জটিল রোগব্যাধির নিরাময় সম্ভব। এক্ষেত্রে কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি বেশ জটিলও বটে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই অগ্রগতিকে কাজে লাগাতে হলে অবশ্যই দক্ষ চিকিৎসকদের সাথে উপযুক্ত সংখ্যক মানসম্পন্ন নার্সও প্রয়োজন। এই নার্সদের মানসিকতায় হতে হবে রোগীবান্ধব, দক্ষতায় হতে হবে পারঙ্গম এবং নিষ্ঠায় নিবেদিত। বিছানায় শায়িত রোগী নার্সের চোখে অভয়বানী দেখতে চায়। তার কথায় সে আশ্বাসের বিশ্বাস শুনতে চায়। কারণ চিকিৎসাসেবির মধ্যে সবচাইতে বেশি মুখোমুখি হয় নার্সের সাথেই রোগির। রোগি-নার্স এই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কটিকে কেবল ভাই-বোন বা পিতা-কন্যার সম্পর্কের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। বেদনার বিষয় হলো, আমরা যারা চিকিৎসাসেবার শরণাপন্ন হই তখন কেউই এমন স্বস্তিদায়ক বাস্তবতার সন্ধান পাই না।
বিশ্ব নার্স দিবসকে উপলক্ষ করে আমরা কেবল বলতে চাই, চিকিৎসা সেবার অন্যতম অনুষঙ্গ নার্সিং পেশার মহত্ত্ব স্থাপনে আসুন সম্মিলিত কর্মপ্রয়াস শুরু করি। এখন কিছু বেসরকারি নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোনো মানদ-ের তোয়াক্কা না করে দেদারছে ডিপ্লোমা বা অন্য সনদপত্র বিতরণ করে চলেছে। এই যথেচ্ছাচার বন্ধ করতে হবে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এই শিক্ষার আধুনিক কারিকুলাম তৈরি ও বাস্তবায়ন করতে হবে এবং চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ নার্স পদায়ন করতে হবে।
- যাদুকাটা নদীতে বালুভর্তি নৌকা চাপায় এক শ্রমিকের মৃত্যু
- সৃষ্টি থিয়েটারের আবৃত্তি ও নাটক প্রশিক্ষণ কর্মশালা