নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গে

অধ্যক্ষ মোঃ ইদ্রিস আলী বীর প্রতীক
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৭ খ্রি: ৩০মে থেকে ৬ জুন পর্যন্ত ‘‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সমূহের ব্যবস্থাপনা ও সুশাসন’’ শীর্ষক ৮ দিনের একটি প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা সফরে  (৪র্থ ব্যাচ) বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ২৫টি উপজেলার নির্বাচিত চেয়ারম্যান/ ভাইস চেয়ারম্যান এর সঙ্গে লেখক অংশগ্রহণ করেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের মহাপরিচালক জনাব এ এস এম মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের ১টি কর্মকর্তা গ্রুপ সফরকারী টিমের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত পশ্চিমের দেশ নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গ সফরসূচীর অন্তর্ভূক্ত ছিল।
মে ২৯, সোমবার  ভোররাত ২.৩০ মি. হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিমানে দলটির যাত্রা শুরু হয়। টিম লিডার মাহবুবুল আলম, যুগ্ম সচিব মেসবাহ উদ্দিন, উপসচিব মাহবুবুর রহমান, অ্যাসিসটেন্ট চীফ খোন্দকার মোদ্দাছির বিন আলী ও হিসাব রক্ষণ অফিসার মোঃ আব্দুল হাই টিমের সদস্যদের বিমান বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে আন্তরিক সহযোগিতা দান করেন। কাতারের দোহা বিমান বন্দরে কয়েক ঘন্টার যাত্রা বিরতির পর নেদারল্যান্ডের রাজধানী আমস্টারডামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে ঐ দেশের সময়ানুযায়ী সন্ধ্যার পুর্বে বিমানটি গন্তব্যে পৌঁছে। একজন মালয়েশিয়ান ট্রাভেল গাইড এবং ঐ দেশের আর একজন গাইড সকলকে একটি ভলভো বাসে চড়িয়ে পূর্ব নির্ধারিত হোটেলে নিয়ে আসেন। রুমমেট হিসাবে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান (বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য) কে পেয়ে লেখক খুবই প্রীত হন এবং দুজন মিলে মোবাইলে এ দেশীয় সিম ক্রয় করেন।

মে ৩০, মঙ্গলবার  সকালে প্রস্তুত হয়ে পুরো টিম ভলভো বাসযোগে মাস্ট্রিখ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ম্যানেজমেন্টে পৌঁছান। মাস্ট্রিখ্ট শহরটিতে অনুষ্ঠিত সভায় গৃহীত চুক্তির ভিত্তিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা লাভ করায় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাস্ট্রিখ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ও বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের অন্যতম। সকালের অধিবেশনে পুরো টিম একটি গ্যালারী কক্ষে অংশগ্রহণ করেন। রিসোর্স পারসন ইংরেজীতে অধিবেশন পরিচালনা করলেও প্রতিটি  বক্তব্য অঙ্গভঙ্গি দ্বারা সফরকারীদর কাছে সহজবোধ্য করে তোলেন। প্রথম অধিবেশন সমাপ্তির পর রিসোর্স পারসনের হাতে বাংলাদেশের উপহার তুলে দেন টিম লিডার মাহবুবুল আলম, যুগ্ম সচিব মেসবাহ উদ্দিন ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মোঃ ইদ্রিস আলী বীর প্রতীক।
মধাহ্ন বিরতির পর পুরো টিমকে ২ ভাগে বিভক্ত করে বৈকালিক অধিবেশনগুলো পরিচালিত হয়। নেদারল্যান্ড এর উন্নয়ন এবং উন্নয়নের জন্য দফায় দফায় সূচিত যুগোপযোগী পরিবর্তনের বিষয়াদি বিস্তারিত ভাবে আলোচিত হয়। কয়লা ভিত্তিক শিল্পের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠিত আধুনিক শিল্প এবং  তারও পরে বর্তমানে আই টি ভিত্তিক ব্যবস্থাপনার প্রসার গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়। পালের নৌকা, উইন্ডমিল ইত্যাদি বর্তমানে সচল না থাকলেও বিভিন্ন স্থানে সেগুলো অতীত গৌরবের সাক্ষ্য হিসাবে রয়ে গেছে।

দ্বিতীয় দিন, ৩১ মে, বুধবার দলটি বিশ্ববিখ্যাত ভ্যানগগ মিউজিয়াম ও বিখ্যাত হীরা ব্যবসা কেন্দ্র  “এঅঝঝঅঘ উওঅগঙঘউঝ” পরিদর্শন ও কেনাকাটা করেন এবং বিকালে বোটে চড়ে বিভিন্ন নদী ও খাল ঘুরে ঘুরে দেখেন।

তৃতীয় দিন ১ জুন, বৃহস্পতিবার সাগর পারের ডাইক পরিদর্শনে গেলে অন্যান্য বিষয়ের সাথে ডাইক নির্মাণের কৌশলী একটি মুভি প্রদর্শনের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের আন্তরিকতাপূর্ণ কার্যক্রম অবলোকনের দ্বারা সফরকারীগণকে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়া হয়। অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বলতে হয় যে, নেদারল্যান্ড দেশটি সাগর জলের সর্বোচ্চ সীমা থেকে ১৬ মিটার নীচে  (পঞ্চাশ ফুট) অবস্থিত যা এই ডাইক দ্বারা বেষ্টিত। অসংখ্য নদী খাল দেশটিতে আছে যার সবই রাস্তার পাশে। মানুষ সড়ক পথে, জলপথে, রেলপথে চলাচল করে। খালের পাশে পাশে বাড়ীগুলো খুবই দৃষ্টিনন্দন।  একই দিনে দুগ্ধজাত পণ্যের কারখানা ও জেলে পল্লী পরিদর্শন করে সফরকারীগণ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। ঐ দিন রাতে মৌলবীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ভাই ব্রাসেলস প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা  ফারুক আহমদের আমন্ত্রণে তার রেস্টুরেন্টে কয়েকজন সফরকারীসহ নৈশ ভোজে অংশগ্রহণ করেন।
চতুর্থ দিন ২ জুন শুক্রবার, আন্তর্জাতিক আদালতের জন্য বিখ্যাত হেগ শহরের একটি মসজিদে সফরকারী মুসলিম সদস্যগণ পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করেন। জুমার পর মসজিদ চত্বরে একটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ও বিকালে সেখানকার জেলখানা, আন্তর্জাতিক আদালত ভবন, বাংলাদেশ দূতাবাস এবং সবশেষে সমুদ্র সৈকত পরিদর্শনের পর সবাই আমস্টারডামে ফিরে আসেন।
পঞ্চম দিন ৩ জুন শনিবার, টিম লিডার সকলকে নিয়ে আমস্টারডাম থেকে ভলভো বাস যোগে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে আসেন। এখানে আবারো বেলজিয়ামের মোবাইল সিম সংগ্রহ করে নেন সবাই।

ষষ্ঠ দিন ৪ জুন রবিবার, সকালে লেখকের ব্রাসেলস প্রবাসী ছাত্রী এলিজা বেগম ও তার স্বামী এসে সাক্ষাৎ করে বাসায় আমন্ত্রণ জানান। ছুটির কারণে ঐ দিন কোন কর্মসূচি না হওয়ায় সবাই দৃশ্য দেখে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পান।

সপ্তম দিন ৫ জুন সোমবার, বিশ্বের সর্বোচ্চ মাথাপিছু গড় আয়ের দেশ লুক্সেমবার্গ (বাংলাদেশের বড় ১টি উপজেলার সম আয়তন বিশিষ্ট) সফর করে দলের সদস্যগণ সমৃদ্ধ হন। লেখকের ছাত্রী এলিজা বেগমের আমন্ত্রণ রক্ষা করে ঐ দিন ইফতার ও ডিনার সারতে হল তাদের বাসায়। ওর ২ মেয়ে তাদের নানাকে পেয়ে বেজায় খুশী। নানাকে বিদায় দিতে তাদের খুবই কষ্ট হয়েছে।
অষ্টম দিন ৬ জুন মঙ্গলবার, ভোর থেকেই বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাস বইতে থাকায় সবাই গরম কাপড় পরে নেপোলিয়নের পরাজয়ের যুদ্ধক্ষেত্র ‘‘ওয়াটার লু’’ পরিদর্শনে গিয়ে মুভির মাধ্যমে ওয়াটার লু যুদ্ধ দেখেন। সবাই মুগ্ধ হন এবং অধ্যাপক রফিকুর রহমান মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর অনুরূপ মুভি নির্মাণ ও প্রদর্শনের জন্য সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ভিডিও বক্তৃতার মাধ্যমে আহবান জানান। এ দিন বিকালে বেলজিয়ামের  বাংলাদেশ দূতাবাস অফিসে ঐ দেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে মাননীয় রাষ্ট্রদূত মহোদয় সফরকারীগণকে সুষ্পষ্ট ধারণা দেন। প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে সবাই  নিজ কৌতুহলী জিজ্ঞাসার সমাধান জেনে নেন।
জুনের ৭ তারিখ বুধবার কোন প্রোগ্রাম না থাকলেও বেলজিয়ামের রাজপ্রাসাদ দেখে লাঞ্চ সেরে ব্রাসেলস বিমান বন্দরে এসে সফরকারী দলটি দোহার উদ্দেশ্যে কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিমানে করে রওয়ানা হন। দোহার যাত্রা বিরতি শেষে  বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে  ৮ জুন বৃহস্পতিবার সকালে যাত্রা করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বিকাল ৫ টায় পৌঁছে টিমের ভ্রমনসূচী সমাপ্ত হয়। টিম লিডারসহ কর্মকর্তাগণ সফরকারী জন প্রতিনিধিগণকে বিদায় জানান।

সফরকালে দৃষ্ট উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয়:-
১।     নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ ৩টি দেশেই সড়কের আপ-ডাউন রুট সম্পূর্ণ পৃথক।
২।    প্রতিটি রাস্তার পাশে সাইকেল চলার পৃথক রাস্তা রয়েছে এবং সেটিও আপ-ডাউন আলাদা।
৩।    রাস্তার দুপাশে নদী-খাল এবং এর পাশে সুদৃশ্য বাড়ী। প্রত্যেক বাড়ীতে জল-স্থলের উভয় প্রকার যান আছে।
৪।    কোন রাস্তায় কোন গাড়ী দাঁড়ায় না। নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে পার্কিং করতে হয়।
৫।    ক্রেডিট কার্ড দ্বারা পার্কিং করা সাইকেল নিয়ে  যে কেউ ভ্রমণ করতে পারে। আবার অন্য কোন পার্কিং এ
    রেখে যেতে পারে।
৬।    গাছপালা দ্বারা সবুজ বেষ্টনী করা হয়েছে।
৭।    গৃহপালিত প্রাণী খামারে এবং নির্দিষ্ট ঘাসের ক্ষেত্রে থাকে।
৮।    প্রতিটি রাস্তার শোল্ডারের মাটি ধরে রাখার জন্য ফাঁক ফাঁক করে তৈরী পাকা ফ্রেম ব্যবহৃত হয়েছে।
৯।    সকল রাস্তায় ডাস্টবিন রয়েছে এবং মানুষ সেগুলো যথারীতি ব্যবহার করে।
১০।    অতীত ঐতিহ্যবাহী উইন্ডমিল, পালের নৌকা ইত্যাদি মানুষের দেখার জন্য রেখে দেয়া হয়েছে।
১১।    বিদ্যুৎ বিহীন কোন মুহূর্ত পাওয়া যায় নাই।
১২।    বিভিন্ন নদী ও খালের ওপর ঝুলন্ত ব্রিজ রয়েছে।
১৩।    প্রতিটি নির্মাণ কাজ টেকসই বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
১৪।    বন্যা প্রবণ নেদারল্যান্ড টেকসই ডাইক নির্মাণ করে দেশটিকে বন্যামুক্ত রেখেছে।
১৫।    দেশের সীমান্তে কোন বেড়া দেয়া হয়নি।
১৬। ইতিবাচক পরিবর্তনকে কল্যাণমূলক ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
১৭। বেলজিয়ামের কমিউন গুলো স্থানীয় প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরী করে এবং অনুমোদন ও বরাদ্দ পাওয়ার পর বাস্তবায়ন করে।
১৮। নিজ নিজ ধর্মীয় কার্যাবলী সম্পন্ন করার স্বাধীন সুযোগ রয়েছে।
লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, দোয়ারাবাজার।
নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গে
 অধ্যক্ষ মোঃ ইদ্রিস আলী বীর প্রতীক

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৭ খ্রি: ৩০মে থেকে ৬ জুন পর্যন্ত ‘‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সমূহের ব্যবস্থাপনা ও সুশাসন’’ শীর্ষক ৮ দিনের একটি প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা সফরে  (৪র্থ ব্যাচ) বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ২৫টি উপজেলার নির্বাচিত চেয়ারম্যান/ ভাইস চেয়ারম্যান এর সঙ্গে লেখক অংশগ্রহণ করেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের মহাপরিচালক জনাব এ এস এম মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের ১টি কর্মকর্তা গ্রুপ সফরকারী টিমের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত পশ্চিমের দেশ নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গ সফরসূচীর অন্তর্ভূক্ত ছিল।
মে ২৯, সোমবার  ভোররাত ২.৩০ মি. হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিমানে দলটির যাত্রা শুরু হয়। টিম লিডার মাহবুবুল আলম, যুগ্ম সচিব মেসবাহ উদ্দিন, উপসচিব মাহবুবুর রহমান, অ্যাসিসটেন্ট চীফ খোন্দকার মোদ্দাছির বিন আলী ও হিসাব রক্ষণ অফিসার মোঃ আব্দুল হাই টিমের সদস্যদের বিমান বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে আন্তরিক সহযোগিতা দান করেন। কাতারের দোহা বিমান বন্দরে কয়েক ঘন্টার যাত্রা বিরতির পর নেদারল্যান্ডের রাজধানী আমস্টারডামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে ঐ দেশের সময়ানুযায়ী সন্ধ্যার পুর্বে বিমানটি গন্তব্যে পৌঁছে। একজন মালয়েশিয়ান ট্রাভেল গাইড এবং ঐ দেশের আর একজন গাইড সকলকে একটি ভলভো বাসে চড়িয়ে পূর্ব নির্ধারিত হোটেলে নিয়ে আসেন। রুমমেট হিসাবে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান (বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য) কে পেয়ে লেখক খুবই প্রীত হন এবং দুজন মিলে মোবাইলে এ দেশীয় সিম ক্রয় করেন।

মে ৩০, মঙ্গলবার  সকালে প্রস্তুত হয়ে পুরো টিম ভলভো বাসযোগে মাস্ট্রিখ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ম্যানেজমেন্টে পৌঁছান। মাস্ট্রিখ্ট শহরটিতে অনুষ্ঠিত সভায় গৃহীত চুক্তির ভিত্তিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা লাভ করায় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাস্ট্রিখ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ও বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের অন্যতম। সকালের অধিবেশনে পুরো টিম একটি গ্যালারী কক্ষে অংশগ্রহণ করেন। রিসোর্স পারসন ইংরেজীতে অধিবেশন পরিচালনা করলেও প্রতিটি  বক্তব্য অঙ্গভঙ্গি দ্বারা সফরকারীদর কাছে সহজবোধ্য করে তোলেন। প্রথম অধিবেশন সমাপ্তির পর রিসোর্স পারসনের হাতে বাংলাদেশের উপহার তুলে দেন টিম লিডার মাহবুবুল আলম, যুগ্ম সচিব মেসবাহ উদ্দিন ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মোঃ ইদ্রিস আলী বীর প্রতীক।
মধাহ্ন বিরতির পর পুরো টিমকে ২ ভাগে বিভক্ত করে বৈকালিক অধিবেশনগুলো পরিচালিত হয়। নেদারল্যান্ড এর উন্নয়ন এবং উন্নয়নের জন্য দফায় দফায় সূচিত যুগোপযোগী পরিবর্তনের বিষয়াদি বিস্তারিত ভাবে আলোচিত হয়। কয়লা ভিত্তিক শিল্পের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠিত আধুনিক শিল্প এবং  তারও পরে বর্তমানে আই টি ভিত্তিক ব্যবস্থাপনার প্রসার গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়। পালের নৌকা, উইন্ডমিল ইত্যাদি বর্তমানে সচল না থাকলেও বিভিন্ন স্থানে সেগুলো অতীত গৌরবের সাক্ষ্য হিসাবে রয়ে গেছে।

দ্বিতীয় দিন, ৩১ মে, বুধবার দলটি বিশ্ববিখ্যাত ভ্যানগগ মিউজিয়াম ও বিখ্যাত হীরা ব্যবসা কেন্দ্র  “এঅঝঝঅঘ উওঅগঙঘউঝ” পরিদর্শন ও কেনাকাটা করেন এবং বিকালে বোটে চড়ে বিভিন্ন নদী ও খাল ঘুরে ঘুরে দেখেন।

তৃতীয় দিন ১ জুন, বৃহস্পতিবার সাগর পারের ডাইক পরিদর্শনে গেলে অন্যান্য বিষয়ের সাথে ডাইক নির্মাণের কৌশলী একটি মুভি প্রদর্শনের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের আন্তরিকতাপূর্ণ কার্যক্রম অবলোকনের দ্বারা সফরকারীগণকে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়া হয়। অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বলতে হয় যে, নেদারল্যান্ড দেশটি সাগর জলের সর্বোচ্চ সীমা থেকে ১৬ মিটার নীচে  (পঞ্চাশ ফুট) অবস্থিত যা এই ডাইক দ্বারা বেষ্টিত। অসংখ্য নদী খাল দেশটিতে আছে যার সবই রাস্তার পাশে। মানুষ সড়ক পথে, জলপথে, রেলপথে চলাচল করে। খালের পাশে পাশে বাড়ীগুলো খুবই দৃষ্টিনন্দন।  একই দিনে দুগ্ধজাত পণ্যের কারখানা ও জেলে পল্লী পরিদর্শন করে সফরকারীগণ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। ঐ দিন রাতে মৌলবীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ভাই ব্রাসেলস প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা  ফারুক আহমদের আমন্ত্রণে তার রেস্টুরেন্টে কয়েকজন সফরকারীসহ নৈশ ভোজে অংশগ্রহণ করেন।
চতুর্থ দিন ২ জুন শুক্রবার, আন্তর্জাতিক আদালতের জন্য বিখ্যাত হেগ শহরের একটি মসজিদে সফরকারী মুসলিম সদস্যগণ পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করেন। জুমার পর মসজিদ চত্বরে একটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ও বিকালে সেখানকার জেলখানা, আন্তর্জাতিক আদালত ভবন, বাংলাদেশ দূতাবাস এবং সবশেষে সমুদ্র সৈকত পরিদর্শনের পর সবাই আমস্টারডামে ফিরে আসেন।
পঞ্চম দিন ৩ জুন শনিবার, টিম লিডার সকলকে নিয়ে আমস্টারডাম থেকে ভলভো বাস যোগে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে আসেন। এখানে আবারো বেলজিয়ামের মোবাইল সিম সংগ্রহ করে নেন সবাই।

ষষ্ঠ দিন ৪ জুন রবিবার, সকালে লেখকের ব্রাসেলস প্রবাসী ছাত্রী এলিজা বেগম ও তার স্বামী এসে সাক্ষাৎ করে বাসায় আমন্ত্রণ জানান। ছুটির কারণে ঐ দিন কোন কর্মসূচি না হওয়ায় সবাই দৃশ্য দেখে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পান।

সপ্তম দিন ৫ জুন সোমবার, বিশ্বের সর্বোচ্চ মাথাপিছু গড় আয়ের দেশ লুক্সেমবার্গ (বাংলাদেশের বড় ১টি উপজেলার সম আয়তন বিশিষ্ট) সফর করে দলের সদস্যগণ সমৃদ্ধ হন। লেখকের ছাত্রী এলিজা বেগমের আমন্ত্রণ রক্ষা করে ঐ দিন ইফতার ও ডিনার সারতে হল তাদের বাসায়। ওর ২ মেয়ে তাদের নানাকে পেয়ে বেজায় খুশী। নানাকে বিদায় দিতে তাদের খুবই কষ্ট হয়েছে।
অষ্টম দিন ৬ জুন মঙ্গলবার, ভোর থেকেই বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাস বইতে থাকায় সবাই গরম কাপড় পরে নেপোলিয়নের পরাজয়ের যুদ্ধক্ষেত্র ‘‘ওয়াটার লু’’ পরিদর্শনে গিয়ে মুভির মাধ্যমে ওয়াটার লু যুদ্ধ দেখেন। সবাই মুগ্ধ হন এবং অধ্যাপক রফিকুর রহমান মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর অনুরূপ মুভি নির্মাণ ও প্রদর্শনের জন্য সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ভিডিও বক্তৃতার মাধ্যমে আহবান জানান। এ দিন বিকালে বেলজিয়ামের  বাংলাদেশ দূতাবাস অফিসে ঐ দেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে মাননীয় রাষ্ট্রদূত মহোদয় সফরকারীগণকে সুষ্পষ্ট ধারণা দেন। প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে সবাই  নিজ কৌতুহলী জিজ্ঞাসার সমাধান জেনে নেন।
জুনের ৭ তারিখ বুধবার কোন প্রোগ্রাম না থাকলেও বেলজিয়ামের রাজপ্রাসাদ দেখে লাঞ্চ সেরে ব্রাসেলস বিমান বন্দরে এসে সফরকারী দলটি দোহার উদ্দেশ্যে কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিমানে করে রওয়ানা হন। দোহার যাত্রা বিরতি শেষে  বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে  ৮ জুন বৃহস্পতিবার সকালে যাত্রা করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বিকাল ৫ টায় পৌঁছে টিমের ভ্রমনসূচী সমাপ্ত হয়। টিম লিডারসহ কর্মকর্তাগণ সফরকারী জন প্রতিনিধিগণকে বিদায় জানান।

সফরকালে দৃষ্ট উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয়:-
১।     নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ ৩টি দেশেই সড়কের আপ-ডাউন রুট সম্পূর্ণ পৃথক।
২।    প্রতিটি রাস্তার পাশে সাইকেল চলার পৃথক রাস্তা রয়েছে এবং সেটিও আপ-ডাউন আলাদা।
৩।    রাস্তার দুপাশে নদী-খাল এবং এর পাশে সুদৃশ্য বাড়ী। প্রত্যেক বাড়ীতে জল-স্থলের উভয় প্রকার যান আছে।
৪।    কোন রাস্তায় কোন গাড়ী দাঁড়ায় না। নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে পার্কিং করতে হয়।
৫।    ক্রেডিট কার্ড দ্বারা পার্কিং করা সাইকেল নিয়ে  যে কেউ ভ্রমণ করতে পারে। আবার অন্য কোন পার্কিং এ
    রেখে যেতে পারে।
৬।    গাছপালা দ্বারা সবুজ বেষ্টনী করা হয়েছে।
৭।    গৃহপালিত প্রাণী খামারে এবং নির্দিষ্ট ঘাসের ক্ষেত্রে থাকে।
৮।    প্রতিটি রাস্তার শোল্ডারের মাটি ধরে রাখার জন্য ফাঁক ফাঁক করে তৈরী পাকা ফ্রেম ব্যবহৃত হয়েছে।
৯।    সকল রাস্তায় ডাস্টবিন রয়েছে এবং মানুষ সেগুলো যথারীতি ব্যবহার করে।
১০।    অতীত ঐতিহ্যবাহী উইন্ডমিল, পালের নৌকা ইত্যাদি মানুষের দেখার জন্য রেখে দেয়া হয়েছে।
১১।    বিদ্যুৎ বিহীন কোন মুহূর্ত পাওয়া যায় নাই।
১২।    বিভিন্ন নদী ও খালের ওপর ঝুলন্ত ব্রিজ রয়েছে।
১৩।    প্রতিটি নির্মাণ কাজ টেকসই বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
১৪।    বন্যা প্রবণ নেদারল্যান্ড টেকসই ডাইক নির্মাণ করে দেশটিকে বন্যামুক্ত রেখেছে।
১৫।    দেশের সীমান্তে কোন বেড়া দেয়া হয়নি।
১৬। ইতিবাচক পরিবর্তনকে কল্যাণমূলক ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
১৭। বেলজিয়ামের কমিউন গুলো স্থানীয় প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরী করে এবং অনুমোদন ও বরাদ্দ পাওয়ার পর বাস্তবায়ন করে।
১৮। নিজ নিজ ধর্মীয় কার্যাবলী সম্পন্ন করার স্বাধীন সুযোগ রয়েছে।
লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, দোয়ারাবাজার।