বিশেষ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের পাগনার হাওরপাড়ের মানুষের দুঃখ ঘুচবে তো। জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবেন তো তারা? এই হাওরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল খননের জন্য সরকার তিন কোটি ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলেও কাজের গতি দেখে এমন প্রশ্নই সামনে এসেছে হাওরপাড়ের শতাধিক গ্রামের মানুষের মনে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বুধবার খনন এলাকা ঘুরেও একই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
দক্ষিণে নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরির চাকুয়া ও সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের রফিনগর ইউনিয়ন, উত্তরে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ সদর উত্তর, পূর্বে ভীমখালী এবং পশ্চিমে ফেনারবাক ইউনিয়ন নিয়ে পাগনার হাওর। বৃহৎ এ হাওরের ভেতর ছয়হারা ভান্ডা বিল, ভান্ডা মল্লিকপুর, রাজাবাজ, কুরাইল্লার, বিনাজুরা, দিরাই বিল, ছয়হারা পিঠাইল্লা, বাঘেরকোনা, ডাবাছোড়া. গজারিয়া, ধনারকোনাসহ অসংখ্য ছোট ছোট বিল রয়েছে। হাওরের বেশিরভাগ জমি জামালগঞ্জের ফেনারবাক ইউনিয়নের কৃষকদের। অন্য ইউনিয়নগুলোর কৃষকদেরও জমি রয়েছে। জমি রয়েছে প্রায় ১১ হাজার হেক্টর। ২০ বছর ধরে পলিমাটি পড়তে পড়তে এই হাওরের অভ্যন্তরের কানাইখালী, গজারিয়া ও কালীবাড়ি খাল ভরাট হয়ে গেছে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত পাওয়ার পাম্প কাজে লাগিয়ে হাওরের অর্ধেকেরও বেশি জমি আবাদ করেছেন কৃষকরা। গত কয়েক বছর হয় জলাবদ্ধতা বেশি হওয়ায় ৬০ শতাংশেরও বেশি জমি অনাবাদি থাকে।
হাওরপাড়ের মানুষের দুঃখ ঘুচাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবছর তিন কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে বুথিয়ারপুর হতে লক্ষীপুর বাজারের পাশের ছয়হারা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার অংশে খাল খননের উদ্যোগ নিয়েছে। এই খাল খনন হলে জলাবদ্ধতার পানি খাল হয়ে সুরমা নদীতে পড়ে ভাটিতে চলে যাবে।
গেল ১৩ জানুয়ারি খাল খননের কাজ উদ্বোধন হয়েছে। রাজধানীর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গুডম্যান এন্টারপ্রাইজ খাল খননের কাজ পেয়েছে। গুডম্যানের পক্ষ থেকে খাল খননের সাব ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে নেত্রকোণার সারোয়ার আহমদ নামের একজন ঠিকাদারকে। তিনি সাব ঠিকাদার নিয়োগ করেছেন স্থানীয় আরও তিনজনকে।
পাগনার হাওরপাড়ের শরিফপুর গ্রামের নুরু মিয়া বললেন, মাত্র দুটি এক্সকেভেটর দিয়ে সাড়ে ছয় কিলোমিটারের খাল কোনভাবেই বৃষ্টির আগে শেষ করা যাবে না। গত কয়েকদিনের কাজের হিসাবে আমাদের অনুমান হয়েছে ২৪ ঘণ্টা দুই এক্সকেভটর চালালেও অর্ধেক খালও খনন করা যাবে না। বৃষ্টি পড়লেই খাল খনন বন্ধ হয়ে যাবে। তাতে সরকারি টাকার অপচয় হবে। মানুষের কোন কাজ হবে না। টাকা লোপাটের ধান্দায় এমনটা হচ্ছে বলে মন্তব্য তাঁর।
বুথিয়ারপুরের ইউপি সদস্য আলমগীর কবির বললেন, কাজ ধীর গতিতে হচ্ছে, আমরা ঠিকাদারের লোকজনকে বলেছি, আমাদের কথা কে শুনে। এই বছরও জমি করা যায় নি। কাজ শেষ না করলে আগামী বছরেও হয়তো ফসল করা যাবে না। অভাবে মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে। তিনি জানান, আধা কিলোমিটার অংশে দায়সারাভাবে খাল খনন হয়েছে। বাকীটা কখন হবে জানি না।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বললেন, গতকাল (বুধবার) ওখানে খনন কাজ দেখতে গিয়ে আমারও মনে হয়েছে ৩০ জুনের মধ্যে (কাজের মেয়াদকাল) এরা কাজ শেষ করতে পারবে না। গুডম্যান এন্টারপ্রাইজের সাব ঠিকাদার সারোয়ার আহমেদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আরও এক্সকেভেটর লাগাবে বলেছে। তারা জানিয়েছে, এক্সকেভেটর পথেই আছে। আমরা তাগাদা দিচ্ছি। আমরা গুরুত্ব দিয়ে এই কাজ নজরে রাখবো। যতটুকু কাজ করবে ততটুকু বিল নেবে, এটা ভাবলে হবে না, কাজ শেষ অবশ্যই করতে হবে। না হয় এই খাল কোন কাজে আসবে না। কাজ শেষ করা ছাড়া অন্য কোন পথ নেই ঠিকাদার বা আমাদের। তার দাবি এক দশমিক এক কিলোমিটার অংশে খনন ছুঁয়েছে। তবে পুরো কাজ নির্দেশনা মোতাবেক হয় নি।
- ফসলরক্ষা বাঁধের তথ্যে বিভ্রান্তি
- আলফাত আহমেদ রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন স্মৃতি ট্রাস্টের শীতবস্ত্র বিতরণ