পাগলায় ভোটযুদ্ধ আজ

ইয়াকুব শাহরিয়ার, শান্তিগঞ্জ
শান্তিগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পাগলা বাজারের ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির প্রস্তাবিত কমিটির নির্বাচন আজ। সকাল ৯টা থেকে শুরু করে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ। ৯ পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ৩০ প্রার্থী। তাদের মধ্য থেকে সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ-সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, প্রচার সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক পদে একজন করে ও সদস্য পদে চারজনসহ মোট ১২ জন প্রার্থী নির্বাচিত হবেন। ৬শ ৭৫ ভোটারের ভোট গ্রহণ করা হবে পাগলা সরকারি মডেল হাইস্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে। আজ রাতেই কেন্দ্র থেকে প্রকাশ করা হবে নির্বাচনের ফলাফল। একমাত্র কেন্দ্রের তিনটি কক্ষে ৯ বুথে গ্রহণ করা হবে ভোট। পাগলা বাজারের প্রথমবারের মতো হতে যাওয়া এ নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইনগত প্রস্তুতিসহ সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে থাকা শান্তিগঞ্জ উপজেলা সমাবায় অফিস ও নির্বাচন বাস্তবায়ন পরিষদ (স্টেয়ারিং কমিটি)। এদিকে, ঐতিহ্যবাহী এ বাজারের নির্বাচন অনুষ্ঠানকে উৎসবমুখর ও আড়ম্বরপূর্ণ করে তুলতে পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের অভিভাবকখ্যাত আট বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রার্থীদের সমন্বয়ে সমস্ত বাজারের বাসস্ট্যান্ড এলাকাকে দু’দিন ধরে করা হয়েছে লাইটিং। স্টেয়ারিং কমিটির পক্ষ থেকে ভোটকেন্দ্রের আশপাশে এলাকাজুরে টানানো হয়েছে রঙবেরঙে ফ্ল্যাগ। ভোটকেন্দ্রের প্রধান ফটক থেকে কক্ষ পর্যন্ত বিশাল জায়গায় প্রবেশ পথ ও বহির্গমণ পথ তৈরি করা হয়েছেন অত্যন্ত সুন্দরভাবে।
এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের মতে বাজারটির বয়স হবে প্রায় দুইশো বছর। এযাবৎকালের বাজারে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কোনো নির্বাচিত ব্যবসায়ী সমিতি বা কমিটি ছিলো না। তাই আজকের এ কমিটি গঠনের নির্বাচন সমস্ত পাগলাবাসীর জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে এসব আয়োজনে নিরঙ্কুশ সমর্থন আছে এলাকার সকল মানুষের। বাজারের এ নির্বাচন বাস্তবায়নে শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ, সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল হেকিম, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আনছার উদ্দিন, পশ্চিম পাগলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জগলুল হায়দার, সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল আলম নিক্কু, নূরুল হক ও আওয়ামীলীগ নেতা তেরাব আলীসহ এলাকার প্রবীণ মুরব্বি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ীগণ সার্বক্ষণিক নজরদারি করেন।
জানা যায়, আজকের এ নির্বাচনে সভাপতি পদে মাঠে আছেন তিন হেভিওয়েট প্রার্থী। তারা হলেন- আউয়াল ডেকোরেটার্সের স্বত্বাধিকারী ও ২নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আউয়াল উদ্দিন (চেয়ার), তারেক মিউজিক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন (ঘোড়া) ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা তাঁতীলীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা (আনারস)। সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী হয়েছেন ৪ জন। তারা হলেন- মহিবুর রহমান (কুড়াল), আতর আলী (দোয়াত-কলম), আবদুল লতিফ (তালাচাবি) ও সাঞ্জব আলী সাঞ্জু (মই)। সাধারণ সম্পাদক পদে তরুণ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মিজানের (তালগাছ) সাথে একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছেন সাবেক ইউপি সদস্য হাজি কমর উদ্দিন (ফুটবল)। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হয়েছেন ৪ জন। তারা হলেন- ছেরাগ আলী (অটোরিকশা), দিপক দে (মোবাইল ফোন), মো. সিরাজ মিয়া (টেবিল) ও জহিরুল ইসলাম সোনা মিয়া (উটপাখি)। সাংগঠনিক সম্পাদক পদের দৌঁড়ে মাঠে আছেন ৩ জন। তারা হলেন- গণমাধ্যমকর্মী জামিউল ইসলাম তুরান (রিকশা), মাস্টার শফিকুল ইসলাম (চাকা) ও বিমল দাস (কাঁঠাল)। কোষাধ্যক্ষ পদে রয়েছেন- মো. কামাল হোসেন (মোমবাতি), মো. হাফিজ উদ্দিন (আম) ও রংগেস পাল (ফ্যান)। প্রচার সম্পাদক পদপ্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন মকবুল হোসেন (গরুর গাড়ি) ও আরছব আলী (টিউবওয়েল)। দপ্তর সম্পাদক পদে সাইদুর রহমানের (চশমা) সাথে একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছেন মিজানুর রহমান (টেবিল ফ্যান)। সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ৭ জন। তারা হলেন- কমর আলী (লাটিম), মো. শাহীন মিয়া (মাইক), জয়নাল আবেদীন (হাঁস), ইমরান আহমদ (মোরগ), নাছির আলী (মাছ), তুয়েল মিয়া (বাঘ) ও রাজিব চন্দ (ঘুড়ি)।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আনছার উদ্দিন ও পশ্চিম পাগলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জগলুল হায়দার বলেন, আমাদের এলাকার ১১ তরুণদের সার্বিক প্রচেষ্টায় বাজারে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাদরকে ধন্যবাদ। আমরা বিষয়টি শুধু মনিটরিং করছি। আমাদের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে। আমরা তাদের উৎসাহিত করছি। প্রার্থীরা অত্যন্ত আন্তরিক। বেশ কিছু দিন ধরে তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা আমাদের চোখে পড়েনি বা কেউ আমাদের বলেনও নি। বরঞ্চ আমরা তাদের সম্প্রীতিমূলক কর্মকা- দেখেছি। আশা করছি তারা শেষ পর্যন্তও ভালো কিছু উপহার দেবেন আমাদের। আমরা আগামীকাল (আজ) সারাদিন পাগলাতেই অবস্থান করবো।
স্টেয়ারিং কমিটির সভাপতি মনছুর উদ্দিন ও সদস্য সচিব মো. আজাদ হোসেন বলেন, আমাদের উপদেষ্ঠাগণ ও সমবায় অফিসের দিক নির্দেশনায় কাজ করে যাচ্ছি আমরা। প্রার্থীদের সকল গতিবিধি আমরা লক্ষ করছি। আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন। আগামীকাল (আজ) আমাদের কর্মতৎপরতা থাকবে সবচেয়ে বেশি। স্টেয়ারিং কমিটির ৯জন সদস্যই খুব তৎপর। আমরা নির্বাচন কমিশনের (সমবায় অফিসের) নির্দেশনা মেনে সব কাজ করবো। ভোট গ্রহণের জন্য আমরা সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।
নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বে থাকা সমবায় কর্মকর্তা মো. মাসুদ আহমদ বলেন, পাগলা বাজারের এ নির্বাচন অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমাদের সব প্রস্তুতি আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, উপজেলা প্রশাসনসহ সবাই অবগত আছেন। যে কোনো ধরণের আপত্তিকর ঘটনা এড়াতেও আমরা প্রস্তুত। আশা করছি এমন কিছু ঘটবে না।