ইয়াকুব শাহরিয়ার, শান্তিগঞ্জ
সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পাশে প্রায় দুইশ বছর আগে গড়ে ওঠেছিল পাগলা বাজার। শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের এই বাজার উপজেলার সবচেয়ে জমজমাট হাট হিসাবেই পরিচিত। এই বাজারের পাশের সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়কের বাসস্টেন্ডে পথসভা বা সমাবেশ সুনামগঞ্জে আসা জাতীয় নেতাদের অনেকেই করেছেন।
প্রাচীনতম এই বাজারের ক্রেতা বিক্রেতা শান্তিগঞ্জ উপজেলাবাসী কেবল নয়। জগন্নাথপুর, ছাতক ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কিছু অংশের বাসিন্দাদেরও হাট এটি। সাধারণ ব্যবসায়ীদের ভোটে নির্বাচিত কোনো ব্যবসায়ী কমিটি এই বাজারে এর আগে কখনো হয় নি। এলাকার নেতৃস্থানীয়রা সমঝোতার মাধ্যমে বাজার পরিচালনা কমিটি করে আসছেন।
আগামী শনিবার (চার মার্চ) প্রথমবারের মতো ভোটের মাধ্যমে গঠন হতে যাচ্ছে পাগলা বাজারের ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি। এতে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে পুরো বাজারে। ৩০ প্রার্থীর পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে বাজারের অলিগলি। বাজারের প্রতিটি চায়ের দোকানসহ সবখানেই একটাই আলোচনা কারা আসছেন এই বাজারের ব্যাবসায়ীদের নেতৃত্ব? কে হতে যাচ্ছেন বাজারের প্রথম নির্বাচনের ইতিহাস?
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শেষ মূহুর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। রাত-দিন এক করে বাজারের প্রতিটি দোকানে দোকানে সময় কাটাচ্ছেন তারা। বাজারের প্রচারণায় তৃপ্তি মিলছে না কোন কোন প্রার্থীর, ছুটছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি। প্রত্যেক প্রার্থীই বাজারসহ অলিগলিতে টানিয়েছেন পোস্টার আর ব্যানার। সমস্ত পাগলা যেনো সেজেছে পোস্টারে ব্যানারে।
এদিকে, নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন নির্বাচন কমিশন (শান্তিগঞ্জ উডজেলা সমবায় কার্যালয়), উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে নির্বাচনী সকল প্রস্তুতি শেষ করেছেন তারা।
উপজেলা সমবায় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নয় পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ৩০ প্রার্থী। বিজয়ী হবেন ১২ জন। প্রতি পদে ১ জন করে ও সদস্য পদে ৪ জন নির্বাচিত হবেন। পাগলা সরকারি মডেল হাইস্কুল এন্ড কলেজে কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত ৬৭৩ জন ভোটার ভোট প্রদান করবেন।
নির্বাচনে সভাপতি পদে মাঠে আছেন তিন প্রার্থী হয়েছেন ৩ জন। তারা হলেন- আউয়াল ডেকোরেটার্সের স্বত্বাধিকারী ও ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আউয়াল উদ্দিন (চেয়ার), তারেক মিউজিক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন (ঘোড়া) ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা তাঁতীলীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা (আনারস)। সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী হয়েছেন ৪ জন। তারা হলেন- মহিবুর রহমান (কুড়াল), আতর আলী (দোয়াত-কলম), আবদুল লতিফ (তালাচাবি) ও সাঞ্জব আলী সাঞ্জু (মই)।
সাধারণ সম্পাদক পদে তরুণ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মিজানের (তালগাছ) সাথে একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছেন সাবেক ইউপি সদস্য হাজি কমর উদ্দিন (ফুটবল)। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হয়েছেন ৪ জন। তারা হলেন- ছেরাগ আলী (অটোরিকশা), দিপক দে (মোবাইল ফোন), মো. সিরাজ মিয়া (টেবিল) ও জহিরুল ইসলাম সোনা মিয়া (উটপাখি)।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রার্থ ৩ জন। তারা হলেন- গণমাধ্যমকর্মী জামিউল ইসলাম তুরান (রিকশা), মাস্টার শফিকুল ইসলাম (চাকা) ও বিমল দাস (কাঁঠাল)। কোষাধ্যক্ষ পদে রয়েছেন- মো. কামাল হোসেন (মোমবাতি), মো. হাফিজ উদ্দিন (আম) ও রংগেস পাল (ফ্যান)। প্রচার সম্পাদক পদে মকবুল হোসেন (গরুর গাড়ি) ও আরছব আলী (টিউবওয়েল)। দপ্তর সম্পাদক পদে সাইদুর রহমানের (চশমা) ও মিজানুর রহমান (টেবিল ফ্যান)। স
দস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ৭ জন। তারা হলেন- কমর আলী (লাটিম), মো. শাহীন মিয়া (মাইক), জয়নাল আবেদীন (হাঁস), ইমরান আহমদ (মোরগ), নাছির আলী (মাছ), তুয়েল মিয়া (বাঘ) ও রাজিব চন্দ (ঘুড়ি)।
বাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী আবদুর রাজ্জাক বললেন, বাজারে ইলেকশন হচ্ছে দেখে আমাদের ভালো লাগছে। নানা সমস্যা নির্বাচিত কমিটির কাছে জানাতে পারবো। একই ধরণের মন্তব্য করলেন, নৈশপ্রহরী প্রসন্ন কুমার দাস ওরফে পটল বাবু ও রফিকুর ইসলাম (মিরা ভাই)।
ডিম ব্যবসায়ী তাজুদ আলী ও ফল বিক্রেতা মো. সাদেক মিয়া বললেন, নির্বাচনে কার্যকর কমিটি বাজারের নেতৃত্বে আসবে এবং বাজারের উন্নয়ন করবে। আমরা যোগ্য ব্যক্তিকেই ভোট দেবো।
দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কর্মকর্তা (উপজেলা সমবায় অফিসার) মো. মাসুদ আহমদ বলেন, পাগলা বাজারের নির্বাচন খুবই জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সবকিছু ঠিকটাক আছে। আমরা বার বার উপদেষ্ঠা, স্টিয়ারিং কমিটি ও প্রার্থীদের সাথে কথা বলেছি। পাগলা সরকারি মডেল হাইস্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। সবকিছু প্রস্তুত। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আমরা সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। সকলের সহযোগিতা থাকলে উৎসবমূখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ হবে।
- প্রবাসীদের অর্জন আমাদেরকে গৌরবান্বিত করে- সিলেট সিটি মেয়র
- বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেন বখত’র মৃত্যুবার্ষিকীর আজ