বিশ্বজিত রায়, হাওর থেকে ফিরে
হাওর রক্ষা বাঁধের কাজে তথ্য লুকোচুরির ছলচাতুরী আছে। একেবারে বাঁধের গোড়া থেকে প্রশাসনের ওয়েব পোর্টাল পর্যন্ত চলে তথ্য গোপনের খেলা। প্রকল্প এলাকায় সুনির্দিষ্ট তথ্য সম্বলিত বিলবোর্ড প্রদর্শন ও ওয়েব পোর্টালে প্রকল্পের যাবতীয় তথ্য উন্মুক্ত করার কথা থাকলেও তাতে লুকোচুরি রয়েছে। মূলত গণমাধ্যম কর্মী ও কৃষকদের দৃষ্টি এড়াতে বাঁধের কাজ সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন না করে সবকিছু ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলে। এতে বাঁধের কাজের সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত জানতে বেগ পেতে হচ্ছে হাওর সচেতন মানুষদের। তবে ভুলক্রমে দেওয়া হয় নি বলছেন পাউবো সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা প্রশাসনের ওয়েব পোর্টালে ঢু মেরে দেখা যায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত কাবিটা নীতিমালা ২০১৭ অনুযায়ী জামালগঞ্জ উপজেলাধীন ডুবন্ত বাঁধের ভাঙ্গা বন্ধকরণ ও মেরামত কাজের পিআইসির চূড়ান্ত তালিকা রয়েছে। যেটি কেবলমাত্র দায় এড়ানোর চেষ্টা বৈকি। যেখানে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যথা-পিআইসির পূর্ণাঙ্গ পরিচয় ও বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ বেশ যতন করে চাটাই করা হয়েছে।
২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরের পিআইসির চূড়ান্ত তালিকায় পিআইসির পিতার নাম, গ্রাম, সম্ভাব্য বরাদ্দের পরিমাণ সন্নিবেশিত করা ছিল। কিন্তু দুই বছর ধরে এগুলো বাদ দিয়ে অসম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে কার স্বার্থে? বাঁধের কাজের শুরুতে উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথাবার্তা সেরে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু কাজের সময়সীমা প্রায় শেষপর্যায়ে পৌঁছলেও ওয়েবসাইটে এখন পর্যন্ত অসম্পূর্ণ তালিকাই রয়ে গেছে। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় নিয়ম মেনে সঠিক সময়ে কাজের তথ্য সম্বলিত নির্দেশিকা বোর্ড সাটানো হয়নি। যদিও শেষ সময়ে এসে বিলবোর্ড সাটানো হয়েছে। সম্প্রতি হাওর পরিদর্শনে গিয়ে অনেক বাঁধেই বিলবোর্ড পাওয়া যায় নি।
কাবিটা নীতিমালা ২০১৭ ঘেঁটে দেখা যায়, নীতিমালার ৪ দশমিক ০ অনুচ্ছেদের ৪ দশমিক ১০ ধারা মতে প্রতিটি স্কীমের কাজের বিবরণ, বরাদ্দকৃত অর্থ, পিআইসিসহ যাবতীয় তথ্য উপজেলা ও ইউনিয়ন ওয়েব পোর্টালে কাজ শুরুর পূর্বেই সন্নিবেশিত করার কথা বলা আছে। এছাড়া ৫ দশমিক ০ অনুচ্ছেদের ৫ দশমিক ২ অনুযায়ী প্রকল্প এলাকায় স্কীমের নাম, দৈর্ঘ্য, বরাদ্দের পরিমাণ, বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতির নাম ইত্যাদি তথ্য সম্বলিত বিলবোর্ড স্থাপন করতে হবে। বাঁধের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে এসব নির্দেশনা ছাড়াও নীতিমালায় নানা নিয়ম-নীতির কথা বলা হলেও কাজ চলছে নিয়মবহির্ভূতভাবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে বিদ্যমান আছে তথ্য গোপনের নানা কৌশল। এভাবে তথ্য গোপন করে প্রকৃত সত্য আড়ালের চেষ্টা করছে সংশ্লিষ্টরা।
হালি হাওর পারের হাওড়িয়া আলীপুর গ্রামের (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) এক বড় গৃহস্থ বলেন, ‘পিআইসি হয় চ্যানেলে। চ্যানেল ভালা হইলেই পিআইসি পাওয়া যায়। আর তথ্যমথ্য যে হেরা দিত চায় না, এইডার মধ্যে একটা বড় পারসেলিটি আছে। না হইলে তথ্য দিত না কেনে?’
কেন্দ্রীয় হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, আসল তথ্য প্রকাশ না করার বড় কারণ হচ্ছে দুর্নীতি। যদি পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করা হয় তাহলে দুর্নীতি অনেকটা প্রকাশ পেয়ে যাবে। মূলত দুর্নীতিকে ধামাচাপা দিতেই তথ্য লুকানোর চেষ্টা করা হয়। কৃষকের স্বার্থে এগুলোতে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
সুনামগঞ্জ জেলা সিপিবির সাবেক সভাপতি হাওরের কৃষি ও কৃষক বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, তথ্য গোপনের মূল কারণ হচ্ছে লুটপাট। সঠিক তথ্য তুলে ধরলে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার বিষয়টি মানুষ জেনে যাবে। প্রতি উপজেলায়ই লুটেরা সিন্ডিকেট আছে। সিন্ডিকেটধারীরা কীভাবে কী করতে হবে সেটা ভালো জানে।
সুনামগঞ্জ বাপাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বললেন, এটা আসলে তথ্য আড়ালের চেষ্টা নয়, ভুলক্রমে হয়তো দেওয়া হয় নি। এটা দেওয়ার নিময় আছে বা আমরা দেব। আমি দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতেছি।
- শহরে বেড়েছে মশার উপদ্রপ
- সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক/ সদরপুরে সেতুর এ্যাপ্রোচে ধস, ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল