পুকুরডুবি বড় নালাচান্দি হাওর/ বাঁধ কাটায় জড়িত ইজারাদারের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক

জেলা শহর সন্নিকটবর্তী ছোট্ট একটি হাওরের নামÑ পুকুরডুবি বড় নালাচান্দি হাওর। তিন শ’ একরের মতো বোরো জমি রয়েছে ওই হাওরে। আশপাশের গ্রামের লোকজন এই জমির মালিক। তারা জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করেন। হাওরে আছে একটি ছোট বিলও। বিলটি ইজারা দেয়া হয়। এবার পুকুরডুবি মৎস্য সমবায় সমিতি নামের একটি সংগঠন বিলটি ইজারা নিয়েছে। ইজারাদার হাওরের মাছ বিলে নামিয়ে আনার জন্য হাওরের বাঁধ কেটে দেন প্রতি বছর। এবারও কেটেছেন। এতে ফসলি জমির পানি শুকিয়ে গেছে এই অগ্রহায়ণ মাসেই। সময়ের অনেক আগে হাওরের পানি নেমে যাওয়ায় জমির মাটি শুকিয়ে শক্ত হয়ে গেছে। সম্ভব হবে না বোরো ধান চাষ করা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইজারাদার কর্তৃক জমির পানি শুকানোর কথা স্বীকার করে বলেছেন, এখনও যে পরিমাণ পানি হাওরে আছে তা যাতে শুকাতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী যখন বৈশ্বিক দুর্যোগ মোকাবিলায় অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন সে সময় এক কা-জ্ঞানহীন ইজারাদারের অবিমৃষ্যকারিতার কারণে একটি হাওরের জমি চাষাবাদের বাইরে থেকে যাওয়ার শংকা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি দুঃথজনক ও উদ্বেগের।
ইজারাদাররা জলাশয় ইজারা নিয়ে পুরো হাওরের জমিদার মনে করেন নিজেদের। তারা কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করেন না। হাওরের বাঁধ কাটার কোনো এক্তিয়ার তাদের নেই। বিলের বাইরের জলাশয়ের মাছের উপরও তার নেই কোনো অধিকার। অথচ সব জায়গায়ই ইজারাদাররা সময়ের আগেই প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া হাওরের বাঁধ কেটে পানি নামিয়ে দেন। এতে ফসল উৎপাদনে ঘটে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা। প্রশাসন এসব কা- সবসময় উপেক্ষা করে যান। কেউ প্রতিবাদী হয়ে অভিযোগ করলে লোক দেখানো কিছু কথাবার্তা বলাই তাদের কাজ। পুকুরডুবি বড় নালাচান্দি হাওরের বাঁধ কাটার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের সময়মত নজরে পড়া উচিৎ ছিলো। এই নজরদারির জন্য যেমন রয়েছে প্রশাসনিক নেটওয়ার্ক তেমনি আছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিবৃন্দ। কেউই সময়মত এই তথ্য গ্রাহ্য করেননি। এখন কৃষি কর্মকর্তা বলছেন হাওরে যেটুকু পানি আছে সেটুকু সংরক্ষণ করবেন। তিনি কী করবেন? যে ইজারাদার অবৈধভাবে বাঁধ কেটে দিয়েছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন?
গত বছরের আকষ্মিক ঢলে এই জেলার বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এবার কৃষকদের ঘুরে দাঁড়ানোর পালা। এই সময়ে সরকারের সব ধরনের সহায়তা পাওয়া কৃষকদের অধিকার। এই কি সহায়তার নমুনা? এটি তো ছোট একটি হাওর মাত্র। অন্য হাওরগুলোর খবর কী? সব হাওরেই জলাশয়-বিল আছে। সেখানেও অনেক ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটছে। আসলে হাওরের বাঁধ অসময়ে কাটার বিষয়টি শক্ত হাতে প্রতিহত করা দরকার। এজন্য বাঁধ কাটার তথ্য জানার ভালো ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রশাসনকে সর্বাগ্রে এই তথ্য প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। গ্রামের কৃষকদের অধিকাংশই প্রশাসনের দোরগোড়া পর্যন্ত আসার যোগ্যতা রাখেন না।
সরকার প্রধান এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী না রাখার জন্য বলেছেন। তিনি কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মাঠ পর্যায়ে এই আদেশ বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব যাদের উপর ন্যস্ত তাদের গা ঝাড়া দিয়ে উঠতে হবে। আয়েশিপনা আর ঢিলেমি ও নির্বিকার মনোভাব কাটিয়ে প্রশাসনের সকল স্তরের ব্যক্তিদের এখন কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। অসময়ে হাওর শুকানো থেকে শুরু করে বীজ, সার, সেচ ও বাঁধ নির্মাণ হয়ে ধান কাটা পর্যন্ত সবাইতে সজাগ সতর্ক, দায়িত্বশীল ও সৎ থাকতে হবে।
পুকুরডুবি বড় নালাচান্দি হাওরের ইজারাদার কর্তৃক হাওরের বাঁধ কাটার অপরাধের বিচার করা হোক দৃষ্টান্তমূলকভাবে। প্রয়োজনে তারা ইজারা বাতিল করা হোক।