তাহিরপুর সীমান্ত দিয়ে পাহাড়ি ঢলের পানি দিয়ে ভেসে আসা ৫ হাজার ৮০০ টন কয়লা নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। গত ৩১ অক্টোবর টেকেরঘাট পরিদর্শন বাংলোয় উন্মুক্ত নিলাম ডাকের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু নিলাম ডাকের পূর্ব মুহূর্তে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের কারণে নিলাম ডাক বন্ধ হয়ে যায়। পরে এই কয়লা একটি চোরচক্র সংঘবদ্ধভাবে প্রকাশ্যে হ্যান্ড ট্রলির মাধ্যমে লুণ্ঠন শুরু করে আংশিক কয়লা নিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছে বলে ১৯ নভেম্বর ২০২২ তারিখের দৈনিক সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক খবর থেকে জানা যায়। সংবাদে কয়েকজন চোরাকারবারির নামও উল্লেখ করা হয়েছে। সবচাইতে আশ্চর্যের বিষয় হলোÑএই কয়লা পাচারের খবরটি দায়িত্বশীল প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কারও নজরে আসেনি। স্থানীয় সাংবাদিকদের বিষয়টি থানা পুলিশকে জানাতে হয়েছে। সাংবাদিকদের নিকট থেকে খবর পাওয়ার পর পুলিশি তৎপরতায় কলাগাঁও মাইজহাটি গ্রাম থেকে এক ট্রলি কয়লা জব্দ করা হয়। তবে কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। বিষয়টি হাস্যস্কর বটে। সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার অপরাধ প্রবণতা ঠেকাতে নিয়োজিত বিজিবির নজরে বিষয়টি না আসাও আরেক আশ্চর্যজনক ঘটনা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেন মজুদ কয়লার নিরাপত্তা বিধান করলেন না, এই প্রশ্নটিও সংগত কারণেই করা যেতে পারে।
সংবাদভাষ্য অনুসারে উজান থেকে ভেসে আসা কয়লার পরিমাণ ৫ হাজার আটশত টন। প্রতিটন কয়লার মূল্য ৩০ হাজার টাকা ধরলে এই পরিমাণ কয়লার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে সতের কোটি টাকা। টাকার অংকে এই পরিমাণ অর্থ নেহায়েৎ কম কিছু নয়। এত বিশাল পরিমাণ অর্থমূল্যের কয়লাকে অরক্ষিত রেখে লুটপাটের সুযোগ তৈরি করে দেয়া দুর্ভাগ্যজনক। সীমান্ত এলাকায় কারা এরকম কাজ করতে পারে সংশ্লিষ্ট বাহিনী ও কর্তৃপক্ষের তা অজানা থাকার কথা নয়। সাধারণ কোনো চোর এরকম কা- ঘটাতে পারে না। চিহ্নিত অপরাধীরাই কেবল এমন কাজ করতে পারে। সংবাদভাষ্য অনুসারে বুধবার সকাল বেলা ২০-২৫টি হ্যান্ডট্রলির মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশে কয়লা চুরির কাজ চলেছে বলে জানা যায়। এসময় লুণ্ঠনকারীরা প্রায় দেড় শ’ টনের মতো কয়লা সরিয়েছে। দিনের বেলা প্রকাশ্যে চলমান এই লুণ্ঠনযজ্ঞ কেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের নজরে পড়ল না তাও আরেক রহস্য বটে। এই কর্মকা-ের পিছনে দায়িত্বশীল কারও প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিল কিনা তাও প্রশ্নসাপেক্ষ। কারণ চোরাকারবারী বা অপরাধী যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদের কারোরই প্রকাশ্যে সরকারি সম্পদ লুট করে নেয়ার মত সাহস হবে না। তার মানে দায়িত্বশীল কেউ না কেউ এই কাজে সহায়তা করেছেন। এরা কারা? এই মদদদানকারীদের তথ্য সামনে আসা উচিৎ।
প্রাকৃতিকভাবে প্রবাহিত হয়ে আসা কয়লার মজুদ যাতে চুরি কিংবা অন্যভাবে বিলীন হয়ে যেতে না পারে সেজন্য যথেষ্ট নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা তৈরি করা উচিৎ বলে আমরা মনে করি। যে মামলার কারণে নিলাম ডাক বন্ধ করতে হয়েছে সেই মামলাটি প্রলম্বিত হয়ে যাতে মজুদ কয়লাভা-ারকে নষ্ট না করে দেয় সেজন্য দ্রুত মামলার নিষ্পত্তিকল্পে উপযুক্ত আইনানুগ কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সাথে সীমান্তে নিয়োজিত বিজিবি ও তাহিরপুর থানা পুলিশকে যথেষ্ট তৎপর থাকতে হবে কয়লা চোরচক্রের তৎপরতা নিবারণের জন্য। উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণে বহু সরকারি সম্পদের অপচয় আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় দেখে থাকি। আলোচ্য ক্ষেত্রে অনুরূপ অবস্থা হোক তা আমরা চাই না। এছাড়া যে চোরচক্র এখান থেকে কয়লা সরিয়ে নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করাও বাঞ্ছনীয়। নতুবা যে কয়লা এখনও রয়েছে সেটুকুও লুপাট হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হবে।
- তারেক রহমানের দেশে ফেরার ইঙ্গিত দিলেন ফখরুল
- দড়ি টানা ড্রামের ভেলায় নদী পারাপার