জগন্নাথপুর অফিস
জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন মিলিয়ে একে একে দশমবারের মতো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন আতাউর রহমান আলতাব। গত নয়টি নির্বাচনে জয়ের দেখা পাননি। এবারের নির্বাচনে প্রচারণা শেষ হওয়ার আর চারদিন বাকি থাকলেও এখনো নামেননি প্রচারণায়। নির্বাচনী মাঠে নেই পোস্টার, লিফলেট কিংবা ব্যানার। নির্বাচন পাগলা হিসেবে পরিচিত আতাউর রহমান আলতাব এবার জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে উপ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করছেন। তাঁর কর্মকা-ে খোদ নেতাকর্মীরাও হতাশ।
উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা জানান, উপজেলায় জাতীয় পার্টির এক সময়ে উল্লেখযোগ্য ভোট ব্যাংক ছিল। জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে এই নির্বাচনী এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে জাতীয় পার্টি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। পরবর্তীতে তাঁর ভাই ফারুক রশীদ চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে জাতীয় পার্টি সরকারের অর্থ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও ১৯৮৫ সালে দেশের প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি নেতা আবু খালেদ চৌধুরী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালের পরবর্তী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। গত ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কোন প্রার্থী না দিলেও জাপা নেতা সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু খালেদ চৌধুরীর মেয়ের জামাই আব্বাস চৌধুরী কে সমর্থন দিয়ে প্রচারণা চালাতে দেখা যায়। ২৬ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকমল হোসেন মৃত্যুবরণ করলে উপ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৭ এপ্রিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে ৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন উপজেলা জাতীয় পার্টি নেতা আতাউর রহমান। কিন্তু প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাছাই বাছাইকালে মনোনয়নের সাথে সংযুক্ত কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় মনোনয়ন বাতিল করা হয়। পরে আপীলে মনোনয়ন বৈধ হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে উপজেলার মীরপুর ইউনিয়নে হাসান ফাতেমাপুর গ্রামের বাসিন্দা আতাউর রহমান আলতাব এলাকায় একজন সালিসি ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। নির্বাচন আসলেই তিনি প্রার্থী হন। ৭৮ বছর বয়সী আতাউর রহমান ১৯৮৫ সালে প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন। এরপর তিনি মীরপুর ইউনিয়নে ৫ বার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন। ১৯৮৮, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০২ ও সর্বশেষ ২০১৯ সালে) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ও ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। পরবর্তীতে ২০০১ ও ২০০৫ সালে জাতীয় জনতা পার্টি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সুনামগঞ্জ-৩ জগন্নাথপুর- শান্তিগঞ্জ) আসনে অংশ নেন। এবার তিনি জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে উপ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, দলের একজন প্রবীণ নেতা হিসেবে তিনি দলের মনোনয়ন নিয়ে আসায় আমরা তাঁর সঙ্গে মনোনয়ন দাখিলে সঙ্গে ছিলাম। এরপর থেকে আমি ব্যক্তিগতভাবে পোস্টার, লিফলেট ও কর্মীসভার জন্য যোগাযোগ করে তাঁর সাড়া পাচ্ছি না। গতকাল তাকে আমরা ডেকে আনলে তিনি আর্থিক অসুবিধার কথা জানালে আমরা নিজেরা কিছু টাকা দিয়ে প্রচারণা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
উপজেলা জাতীয় পার্টি নেতা আবু সুফিয়ান বলেন, এ উপজেলায় ভোটের দিক দিয়ে আওয়ামী লীগের পরই জাতীয় পার্টি লাঙ্গলের ভোট ব্যাংক ছিল। প্রতিটি নির্বাচনে এর প্রমাণ রয়েছে। যোগ্য নেতৃত্ব ও সঠিক প্রার্থী না হওয়ায় ভোটে প্রভাব পড়ছে। তিনি যে প্রার্থী হয়েছেন তা দলের কর্মীরাও জানে না। চেয়ারম্যান প্রার্থী আতাউর রহমান বলেন, আমি আর্থিকভাবে কিছু সমস্যায় আছি তাই পোস্টার, লিফলেট ও প্রচারণা ঠিকমতো চালাতে পারছি না। আর্থিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দুই দিন সময় পেলে তা কাটিয়ে উঠতে পারব। লাঙ্গল একটি পরিচিত প্রতীক সমস্যা হবে না।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান বলেন, জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে ২৫ মে ভোট গ্রহণ হবে। প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শেষ হবে ২৩ মে।
- ‘ উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে নৌকায় ভোট দিন’
- মধ্যনগরে বৃদ্ধের আত্মহত্যা