প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিতের অভিযোগ প্রতিবাদে মানববন্ধন

ধর্মপাশা প্রতিনিধি
ধর্মপাশা (মধ্যনগর) উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের ভোলাগঞ্জ সার্বজনীন উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রঞ্জু মিয়াকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার বিচার দাবি করে রবিবার দুপুর ১২টার দিকে বিদ্যালয় সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন করেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ স্থানীয়রা। গত শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে কার্তিকপুর লামাপাড়া এলাকায় এক সভাপতি পদপ্রার্থীসহ তার লোকজন এ ঘটনা ঘটায়। মানববন্ধনে বক্তব্য, বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. আজিজুল হক, নূর আলম, শিক্ষার্থী শান্তনা আক্তার ও জুবায়ের হোসেন। পরে মানববন্ধন শেষে ভোলাগঞ্জ বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।
গত ৮ জানুয়ারি অভিভাবক সদস্য পদে বিদ্যালয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় বিনা ভোটে চারজন অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত হয়। গত শনিবার সভাপতি নির্বাচনের জন্য দিন ধার্য করা হয়। সভাপতি হিসেবে আব্দুস ছাত্তার, আবু বকর সিদ্দিক, অভিভাবক সদস্য আব্দুল আলিম ও শাহজাহান খান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। শনিবার সকাল ১১টায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সচিব, দাতা সদস্য, নির্বাচিত অভিভাবক সদস্য, বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধি, সংরক্ষিত নারী সদস্য, সংরক্ষিত শিক্ষক সদস্যদের উপস্থিতিতে নিয়ম অনুযায়ী কণ্ঠ ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়া না মেনে গোপন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন সম্পন্ন করার দাবি জানিয়ে দাতা সদস্য আব্দুল হাই, অভিভাবক সদস্য উজ্জ্বল তালুকদার ও আব্দুল আলিম প্রধান শিক্ষকের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যান। এ সময় প্রিজাইডিং কর্মকর্তা তাঁদের ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হন। পরে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কণ্ঠ ভোট এবং গোপন ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচনের কাজ সম্পন্ন করলেও আব্দুল হাই, উজ্জ্বল তালুকদার ও আব্দুল আলিম এতে অংশগ্রহণ করেননি। ভোট গ্রহণ শেষে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার নির্দেশে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের নৈশ্য প্রহরী মঞ্জুরুল হককে সাথে নিয়ে ব্যালট বাক্সসহ উপজেলার দিকে রওয়ানা দেন। কিন্তু পথিমধ্যে কার্তিকপুর লামাপাড়া সেতু সংলগ্ন সড়কে সভাপতি প্রার্থী আব্দুল আলিম, তার বড় ভাই আব্দুল জলিল ও তাদের চাচাতো ভাই আব্দুল করিম, দাতা সদস্য আব্দুল হাইয়ের ছেলে আব্দুল আলিম প্রধান শিক্ষকের গতিরোধ করে তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাসহ টানাহেচড়া ও লাঞ্ছিত করে। এ সময় নৈশ্য প্রহরীর কাছে থাকা ব্যালট বাক্স ও বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয় অভিযুক্তরা। একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হলেও তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন তবে এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রঞ্জু মিয়া বলেন, ‘আব্দুল আলিম, আব্দুল জলিল, আব্দুল করিম, আব্দুল হাইয়ের ছেলে আব্দুল আলিম আমার গতি রোধ করে আমাকে উঠিয়ে নেওয়ার জন্য টানাহেচড়া লাঞ্ছিত করে এবং নৈশ্য প্রহরীর কাছ থেকে ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেয়।’
অভিযুক্ত সভাপতি পদপ্রার্থী আব্দুল আলিম বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করিনি।’
প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্বে¡ থাকা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের একাডেমিক সুপারভাইজার জাহাঙ্গীর আলম মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘তিনজন সদস্য গোপন ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচন চায়। কিন্তু বিষয়টি না মানায় তারা রাগ করে বেরিয়ে যায়। পরে তাদের দাবি অনুযায়ী গোপন ভোট নিলেও তারা আর আসেনি। নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংখ্যাগরিষ্টদের সমর্থনের ভিত্তিতে সভাপতি নির্বাচন হয়।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনতাসির হাসান বলেন, ‘ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন নিয়ে ঝামেলা হয়েছে শুনেছি। কিন্তু প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করা হয়েছে এমনটি কেউ জানায়নি।’