ফতেপুর-নিয়ামতপুর-তাহিরপুর সড়ক/ ঘাড়ভাঙা সড়কটিকে দ্রুত সারিয়ে তুলুন

মানুষ এখন দ্রুত গন্তব্যে যেতে পছন্দ করে। জীবনের প্রয়োজনে মানুষের ব্যস্ততা বেড়েছে। কেউ সময়ের অপচয় করতে রাজি নয়। যাতায়াতে সময় বাঁচানো ও স্বাচ্ছন্দে ভ্রমণ করা তাই এখনকার অন্যতম নাগরিক চাহিদা। যেসব খাতে দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখা যায় দেশে তারমধ্যে সড়ক যোগাযোগের উন্নয়নের চিত্র সবচাইতে বেশি উজ্জ্বল। সারা দেশে এই উন্নয়ন পরিব্যাপ্ত। শুধু নগর বা বড় শহর নয়। প্রান্তিক বাংলাদেশ তথা পল্লী অঞ্চলও এখন সড়ক নেটওয়ার্কে রয়েছে বেশ শক্তভাবেই। গ্রাম শহরের পার্থক্য প্রায় ঘুচাতে চলেছে এই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। খুব সহজেই দূর গন্তব্য থেকে মানুষ দ্রæত চলে আসে নগর ব্যবস্থার সুযোগ সুবিধার কাছাকাছি। এতে নগরীর উপর বসবাসের জন্য মানুষের চাপ কমছে। দিনে এসে রাতে চলে যাওয়া এখন সকলের আকাক্সক্ষা। কেউ বাইরে রাত্রি যাপন করতে চায় না। সুনামগঞ্জ যদিও হাওর অধ্যূষিত তবুও এখানেও সড়ক উন্নয়নের ছোঁয়া বেশ ভালভাবেই লেগেছে। একসময় চিন্তার বাইরে ছিলোÑ দিনে দিনে তাহিরপুর থেকে জেলা সদরে এসে আবার ফেরত যাওয়া। এখন তা বাস্তব। কেবল শাল্লা ও ধর্মপাশা-মধ্যনগর ছাড়া বাকি সব উপজেলার সাথে জেলা সদরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে। কোনো কোনো জায়গায় আছে একাধিক বিকল্প সড়ক। এরকম বিকল্প সড়কের একটি হলো সুনামগঞ্জ-ফতেপুর-নিয়ামতপুর-তাহিরপুর সড়ক। এই সড়কের ফতেপুর-নিয়ামতপুর অংশ প্রায় ৫০ বছরের পুরনো। তাহিরপুর ও মধ্যনগরের সাথে জেলা সদরের অন্তত ৮ কিলোমিটার দূরত্ব কমিয়ে দেয় এই সড়ক। তাহিরপুরগামী সকলেই পছন্দ করেন এই সড়ক। কিন্তু সড়কের বেহাল দশা মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে নিতান্তই ব্যর্থ হচ্ছে। গতকাল দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে এই সড়কের হাল হকিকত নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।
সড়কটিকে কার্যকর করতে ফতেপুরের নিকটবর্তী আবুয়া নদীর উপর বড় একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতু নির্মাণের বরাদ্দ ছিলো ২২ কোটি টাকা। সাড়ে ১৭ কোটি টাকা খরচ করে মূল সেতু নির্মাণ হয়েছে বছর দুই আগে। কিন্তু হয়নি সেতুর এপ্রোচ সড়ক। তাই কোনো কাজেই আসছে না এই সেতু। এখন নতুন করে এপ্রোচ সড়কের কাজের চিন্তা করা হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন এই সেতুটি অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। করা হয়েছে বিস্তর দুর্নীতি ও অনিয়ম। সেতু নির্মাণের স্থানটি ভৌগোলিকভাবে অনুপযোগী। ফলে এপ্রোচ টিকানো যায় না। বর্ষার সময় ভেঙে পড়ে। উন্নয়ন কাজে পরিকল্পনার অভাব আমরা নানাভাবে দেখি। অনিয়ম-দুর্নীতি-অপচয় এগুলোও নিত্য অভিজ্ঞতা। এসবের পরও যদি কাজটি হয়ে যায় তাতেও মানুষ খুশি। কিন্তু এত এত টাকা খরচের পরও যখন কাজের কোনো সুফলই মিলে না তখন মানুষের কষ্টের শেষ থাকে না। এই সড়কটি নিয়ে হয়েছে এমন অবস্থা।
এই সড়ক নিয়ে বিশ্বম্ভরপুরের ফতেপুর ইউনিয়ন, তাহিরপুর ও মধ্যনগরের মানুষ অনেক স্বপ্ন দেখেন। পথিমধ্যে অবস্থিত হাওরের জনপদগুলোর মানুষও কম সময়ে জেলা সদরের সাথে যোগাযোগের জন্য এই সড়কের জন্য অপেক্ষমাণ। মানুষের এই আগ্রহের কথা বুঝতে হবে কর্তৃপক্ষকে। বরাদ্দ নিয়ে নয়-ছয় যাই করুন তা করুন। কিন্তু কাজটি শেষ করে সড়কটি ব্যবহার উপযোগী করুন তাড়াতাড়ি। এতে অন্তত মানুষের ক্ষোভ কিছুটা কমবে। হাওর অঞ্চল ধান ও মাছের ভাÐার। বলাবাহুল্য এই সড়কের উভয় প্রান্তে বিস্তীর্ণ ফসলি ক্ষেত ও বহু জলাশয়ের অবস্থান। অধুনা যুক্ত হয়েছে মৌসুমী সবজি, হাঁসের খামারসহ নানা জাতের আয়বর্ধন কর্মকাÐ। এসব ধান, মাছ, সবজি ও অন্য পণ্যের পরিবহনের জন্যও এই সড়কটি সমধিক গুরুত্বপূর্ণ। সড়ক সংশ্লিষ্ট এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকাÐকে গতিশীল করে। তৈরি করে নতুন সম্ভাবনা। এ সম্ভাবনাকে পূর্ণতা দান করতে তাই ঘাড়ভাঙা সড়কটিকে দ্রæত সারিয়ে তুলুন।