বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আরও নিবিড় করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার
সুনামগঞ্জে সোমবার থেকে প্রথমা প্রকাশনের উদ্যোগে ছয় দিনব্যাপী বইমেলা শুরু হয়েছে। পৌর শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এই বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলা চলবে আগামি ২৭ মে পর্যন্ত।
বিকেলে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী এই মেলার উদ্বোধন করেন। এতে কবি, সাহিত্যিক, লেখক, শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, সরকারি— বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক সবাইকে নিয়ে ফিতা কেটে মেলার উদ্বোধন করেন। পরে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় জেলা প্রশাসক ছাড়াও বক্তব্য দেন বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রজত কান্তি সোম, কবি মুনমুন চৌধুরী, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. রোখসানা পারভিন চৌধুরী, সিলেটের এমসি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. বিল্লাল হোসেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথমা প্রকাশনের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন, অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুনামগঞ্জে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক খলিল রহমান।
সুনামগঞ্জের মতো একটি প্রান্তিক জেলায় বইমেলার আয়োজনের জন্য প্রথমা প্রকাশনের প্রশংসা করেন বক্তারা। তাঁরা বলেন, আমরা বই থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। এটা খবুই ভাবনার বিষয়। নতুন প্রজন্ম নানা মাধ্যমে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। আধুনিক সব সুযোগ—সুবিধা আমরা নেব। কিন্তু বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে নয়, বই পড়তেই হবে। বইয়ের সঙ্গে সম্পর্কটা আরও নিবিড় করতে হবে।
কবি মুুনমুন চৌধুরী বলেন,‘আমাদের কাছে এখনো বইয়ের ঘ্রাণ প্রিয়। আমরা বই পড়ে পড়েই বড় হয়েছি। কিন্তু আমাদের সন্তানেরা সেভাবে বই পড়ছে না। তারা মুঠোফোনে ডুবে আছে। বইয়ের প্রতি তাঁদের আগ্রহী করে তুলতে এসব আয়োজন ভূমিকা রাখবে।’
প্রথমা প্রকাশন বই প্রকাশে মানের দিকটায় গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে অধ্যাপক রোখাসান পারভিন চৌধুরী বলেন,‘বই পড়ব, তবে সঠিক বই পড়তে হবে। সঠিক বই নির্বাচন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমার ভালো লাগে প্রথমা প্রকাশন বাছাই করে বই প্রকাশ করে।
পৌর মেয়র নাদের বখত তাঁর প্রতিষ্ঠানে একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠান করছেন উল্লেখ করে বলেন,‘ তরুণ প্রজন্মকে বই পড়ায় উৎসাহিত করতে হবে। আমরা যে যাই করি, বই পড়ার জন্য একটা সময় বের করতেই হবে। এটা নিজের সমৃদ্ধির জন্যই দরকার।’
বই নিজেকে আনন্দ দেয়, সমৃদ্ধ করে জানিয়ে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রজত কান্তি সোম বলেন,‘বই পড়ি বলেই বেঁচে আছি। আমার কাছে বই পড়া পরম আনন্দের। নিজেকে জানা, জগৎকে জানার অন্যতম মাধ্যম বই। বই আমাদের পড়তেই হবে।
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, যাঁরা বই পড়েন তাঁরা চিন্তা—চেতনায় অগ্রসর। বই এখন নানা মাধ্যমে পড়া যায়। কিন্তু ছাপা বই পড়ার আনন্দ আলাদা। তিনি সুনামগঞ্জে বইমেলা আয়োজনের জন্য প্রথমা প্রকাশনকে ধন্যবাদ জানান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে কবি ও লেখক সুখেন্দু সেন, ইকবাল কাগজী, জেলা আইনজীবী সমিতি সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ চান মিয়া ও মো. নজরুল ইসলাম, জেলা মহিলা কল্যাণ কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদিকা দিলারা বেগম, সুনামগঞ্জ কলেজ—বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি শুভঙ্কর তালুকদার মান্না, সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি পঙ্কজ কান্তি দে, লেখক সুবাস উদ্দিন ও কল্লোল তালুকদার, আইনজীবী মাহবুবুল হাসান শাহীন, কলেজশিক্ষক মশিউর রহমান ও মো. দুলাল মিয়া, সাংবাদিক এ আর জুয়েল, আমিনুল ইসলাম, লেখক সুলেমান কবির, সুনামগঞ্জ বন্ধুসভার উপদেষ্টা মো. রাজু আহমেদ, সংগঠক প্রদীপ পাল, আশরাফুজ্জামান বাবলু, তাজকিরা হক তাজিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজকেরা জানান, সুনামগঞ্জে প্রথমা প্রকাশনের বইমেলা আয়োজনে সহযোগিতা করছেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত মেলা চলবে। মেলায় প্রথমা প্রকাশনের বই ৩০ থেকে ৬০শতাংশ এবং অন্যান্য প্রকাশনীর বই ২৫শতাংশ ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ভারতীয় বই ১ রুপি ১.৫ টাকা থেকে ১.৮টাকা ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে।