বিশেষ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ জেলা শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন আইনজীবী স্বামী। নয় বছর আগে গ্রামের বাড়ি জেলার জগন্নাথপুরে চাকুরি হয়েছে স্ত্রী’র। চাকুরি হবার পর থেকে স্বামীর ঠিকানায় বদলি হবার চেষ্টা করছেন স্ত্রী। তিনবছর আগে একবার বদলির আবেদনের সুযোগ পেয়েছিলেন, তখন বদলির ক্ষেত্রে দেওয়া শর্তের বাধ্যবাধকতায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় আস হয় নি তার। দীর্ঘদিন পর গেল তিন মার্চ আবার বদলির আবেদনের সুযোগ হয়েছিল এই শিক্ষকের। সবকিছু ঠিকটাক থাকলেও এবার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে বদলি’র সুযোগ হারালেন ওই শিক্ষিকা। জেলার জগন্নাথপুর উপজেলায় এমন অমানবিক ঘটনা ঘটেছে। বদলি’র সুযোগ পেয়েও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে ১৮ জন প্রাথমিক শিক্ষক বদলির সুযোগ বঞ্চিত হয়েছেন। বঞ্চিত শিক্ষকরা মঙ্গলবার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে তাদের বঞ্চনার কথা জানান।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী গেল তিন মার্চ থেকে পাঁচ মার্চ পর্যন্ত অনলাইনে বদলির আবেদন করেন জগন্নাথপুরের সহকারী শিক্ষকরা। তিনদিনে ৪১ জন শিক্ষক বদলির আবেদন করলেও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ১৯ জন শিক্ষকের আবেদন জেলা প্রাথমিক শিক্ষকের নিকট ফরোয়ার্ড করেন নি। একারণে ওই শিক্ষকদের কাঙ্খিত বদলির বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে গেছে।
জগন্নাথপুরের বদলি বঞ্চনার শিকার একজন সহকারী শিক্ষিকা বললেন, প্রায় ১০ বছর হয় চাকুরি হয়েছে। স্বামীর ঠিকানায় যাওয়ার চেষ্টা করছি শুরু থেকেই। তিন বছর আগে একবার বদলির আবেদন করার সুযোগ হয়েছিল। ওই সময় বদলিকৃত উপজেলায় মোট শিক্ষকের ১০ শতাংশের বেশি শিক্ষক বদলি হয়ে আসতে পারবে না বলে শর্ত ছিল। সেই কারণে ওই সময় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় বদলি হয়ে যাবার সুযোগ হয় নি।
আরেক শিক্ষিকা বললেন, এবছর স্বামীর স্থায়ী ঠিকানার পাশের বিদ্যালয়ের পদ শূন্য ছিল। বদলি হতে সবকিছু ঠিকঠাকও করেছি। অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী আবেদন করেছি। কিন্তু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবেদন শুরু’র শেষ দিন দুপুর পর্যন্ত আবেদন ফরোয়ার্ড করেন নি। শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী তাঁকে সফটওয়ারে ফরোয়ার্ড করার অপসন বন্ধ হয়ে যেতে পারে জানানোর পরও তিনি আমলে নেন নি। এ কারণে ভীষণ বেকায়দায় পড়লাম আমরা।
আরেক শিক্ষক বললেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে যারা উৎকোচ দিয়েছে, তাদের আবেদন ফরোয়ার্ড হয়েছে, যারা উৎকোচ দেয় নি, তাদের আবেদন ফরোয়ার্ড হয় নি, আবার রিজেক্ট করার কোন অজুহাত না পাওয়ায় রিজেক্টও করেন নি। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অবহেলায় বিপদে পড়লাম আমরা।
জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি হারুনুর রশিদ বললেন, এই বিষয়টি জেনে হতবাক হয়েছি আমরা। শিক্ষকদের সঙ্গে অবিচার হয়েছে। সুনামগঞ্জ সদরে ১৯ জন শিক্ষক জগন্নাথপুর থেকে বদলি হয়ে আসতে চেয়েছিলেন। যথারীতি অনলাইনে তারা আবেদনও করেছেন। কিন্তু জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে ফরোয়ার্ড হয়েছে ১৯ জনের মধ্যে পাঁচ জনের আবেদন। এভাবে বিভিন্ন উপজেলায় বদলি হতে আগ্রহী মোট ১৯ জনের আবেদন ফরোয়ার্ড হয় নি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জগন্নাথপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে মঙ্গলবার এই বিষয়ে শো-কজ করেছেন বলে জানান এই শিক্ষক নেতা।
জগন্নাথপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র দাস বললেন, সকল শিক্ষকের বদলির আবেদন ফরোয়ার্ড করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পাঁচ তারিখ রাতে ইন্টারনেট ত্রুটির কারণে কিছু আবেদন ফরোয়ার্ড করার পর অন্যগুলো ফরোয়ার্ড হয় নি। পরে মেইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ডিজি প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে বিষয়টি জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এই বিষয়ে বদলি হতে আগ্রহী শিক্ষকদের সহায়তা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে, যারা অনলাইন সফটওয়ার দেখভাল করেন তাদেরকেও। উৎকোচ নেবার প্রশ্নই ওঠে না। যারা এসব বলছেন, তারা অবান্তর কথা বার্তা বলছেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বললেন, জগন্নাথপুরের ৪১ জন শিক্ষক বদলির জন্য আবেদন করেছিলেন। জগন্নাথপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ১৯ জনের আবেদন অগ্রায়ণ করেন নি। কেন তিনি এই আবেদনগুলো অগ্রায়ণ করলেন না, জবাব চেয়ে মঙ্গলবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখনো (বুধবার) তার জবাব পাওয়া যায় নি।
- হাওর রক্ষা বাঁধ/ বর্ধিত সময়েও শেষ হয়নি কাজ
- দোয়ারায় ইউএনওর সঙ্গে প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাৎ