স্টাফ রিপোর্টার
সুনামগঞ্জে সম্প্রতি উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় জেলায় বোরো ধান, মাছের খামার ও সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। টাকার অংকে এই ক্ষতি শতকোটি টাকার ওপরে। তবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনো বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত আছে। তাই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
এবার উজানের পাহাড়ি ঢল ও আগাম বন্যায় দুই দফা ক্ষতির মুখে পড়েন সুনামগঞ্জের হাওরের কৃষকেরা। প্রথম দফা পাহাড়ি ঢলে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে জেলার ২০টি ছোটবড় হাওরের অন্তত ১০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে যায়। এই ফসলহানি ঘটে ২ এপ্রিল থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর মে মাসের শুরু থেকে শুরু হয় আবার ভারী বৃষ্টি, নামে উজানের ঢল। এতে সৃষ্ট বন্যায় জেলায় ৮২৯ হেক্টর বোরো জমির ধান তলিয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ। একই সঙ্গে ক্ষতি হয়েছে আউশ বীজতলা, বাদাম ও সবজি খেতের। কৃষি বিভাগের হিসাব মতে বন্যায় তলিয়ে যাওয়া ধানের মূল প্রায় ১৩ কোটি টাকা। তবে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, পাকা ধান তলিয়েছে। এর মধ্যে দ্রুত পানি সরে যাওয়ায় কিছু জমির ধান কৃষকেরা কেটেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেছেন, বন্যায় তলিয়ে যাওয়া জমির মধ্যে পাকা ধানই ছিল বেশি। যে কারণে পানি কমার পর অনেক কৃষক সেগুলো কেটেছেন। তবে বৃষ্টি থাকায় ধান মাড়াই ও শুকানো নিয়ে কৃষকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বেশি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবারের বন্যায় এক হাজার ৩১০টি পুকুরের মাছ ও পোনা ভেসে গিয়েছে। এসব পুকুরে ১৬৮ মেটিক টন মাছ ও ৫০ মেট্রিক টন পোনা ছিল। জেলার ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে বেশি। ছাতকে ৭৫০টি এবং দোয়ারাবাজারে ৪৩৫টি পুকুরের মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত খামারি সংখ্যা এক হাজার ১৪৭ জন। সদর উপজেলার রঙ্গারচর এলাকার মুমিন ফিশারিজ অ্যান্ড এগ্রো লিমিটেডের মালিক মো. আবদুল আলীম জানান, তার খামারের ৭টি পুকুরের মধ্যে চারটির মাছ পোনা ভেসে গেছে। ক্ষতি হয়েছে খামারের অবকাঠামোর। আবদুল আলীম বলেন, ‘গত বছরও বন্যায় খামারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এবার সবমিলিয়ে প্রায় ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি হলো। মাছের খাবারের দোকানে বাকি আছে প্রায় ১৫ লাখ। ব্যাংক ঋণের কিস্তি আছে। এই ক্ষতি কিভাবে কাটাবো এ নিয়ে চিন্তায় আছি।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল মন্ডল বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের একটা তালিকা করেছি। এটি মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। যদি কোনো সহযোগিতা আসে সেটি খামারিরা পাবেন।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে গ্রামীণ রাস্তাঘাটের। একই সঙ্গে তিনটি সেতু, একটি রাবার বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। অনেক সেতুর সংযোগ সড়ক ধসে গেছে। জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের দৈর্ঘ্য ২৭২ কিলোমিটার। জেলার সুনামগঞ্জ—দোয়ারাবাজার—ছাতক সড়কের রামপুর এলাকার একটি পাকা সেতু বন্যার পানির তোড়ে সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে। ওই সড়ক এখনো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা এলাকার রাবার বাঁধটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তাঘাটের ক্ষতি বেশি হয়েছে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায়। এখনো অনেক অভ্যন্তরীণ রাস্তা প্লাবিত আছে।
সুনামগঞ্জ—১ আসনের (ছাতক ও দোয়ারাবাজার) সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান মানিক বলেছেন, এবারের বন্যায় আমার এলাকাই আক্রান্ত হয়েছে বেশি। এখানে অনেক রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। সংশ্লিষ্টদের বলেছি, ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করার জন্য।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম বলেছেন, আমাদের প্রায় ৯০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে এখনো পুর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতি পাওয়া যায়নি। পানি পুরোপুরি নেমে গেলে সেটা নির্ধারণ করা হবে।
- সিসি ক্যামেরা নিয়ে গেল চোর
- দুর্গন্ধ, অস্বাস্থকর পরিবেশ এলাকায় এলাকায়