বাঁধের কাজে অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ/ একে তো নাচুনি বুড়ি তাতে পড়েছে ঢোলের বাড়ি

স্বল্প বিরতিতে আবারও সম্পাদকীয় স্তম্ভে ফসলরক্ষা বাঁধ বিষয়কে আনতে হচ্ছে। চর্বিতচর্বন হয়ে যাবে যদিও তবুও গুরুত্ব বিবেচনায় উপেক্ষণীয় নয়। গতকাল দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে বাঁধ নির্মাণে সরকারদলীয়দের নানামুখী তৎপরতার উপর একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদের উপজীব্য ছিলো জেলার তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলা। জেলার মধ্যে এই দুই উপজেলায় বাঁধ নির্মাণ কাজে মন্থরতার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে উল্লেখপূর্বক ওই দুই উপজেলায় সরকার দলীয়দের বাঁধের কাজে নানারূপ হস্তক্ষেপের তথ্য উঠে এসেছে। সরকারি দলের দায়িত্ব যখন থাকে জনস্বার্থ সংরক্ষণ, কাজের গুণগত মানের নিশ্চয়তা বিধান করা তখন তাদের ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি নিয়ে মাঠে নেমে পড়ার উত্থিত অভিযোগগুলো নিঃসন্দেহে দুর্ভাগ্যজনক। এই দুই উপজেলায় এমন কিছু কাজ সরকার দলীয় কিছু পদবীধারী নেতাকর্মীদের দ্বারা সম্পন্ন হয়েছে যাতে বাস্তবায়নকারী সরকারি প্রশাসনকে যথেষ্ট বিব্রতকর ও অসহায় পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে বলে বদ্ধমূল ধারণা জন্মগ্রহণ করে। আমাদের প্রশাসনিক সংস্কৃতি খুব বেশি সুখকর নয়। এই জায়গায় ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের। যখন সেরকম না হয়ে তারাও বাণিজ্য-মানসিকতার দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়েন তখন যে ওই সংস্কৃতি আরও ভয়ানক চেহারা লাভ করবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কথায় আছেÑ একে তো নাচুনি বুড়ি তাতে পড়েছে ঢোলের বাড়ি।
তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের হস্তক্ষেপ ও এজন্য বাঁধের কাজ শুরু করা বিলম্বিত হচ্ছে। দলের বিভিন্ন পদ-পদবীর নেতারা নিজেদের পছন্দের লোকদের পিআইসির সভাপতি বা সম্পাদক বানানোর জন্য দায়িত্বশীলদের উপর চাপ তৈরি করছেন। এর ধারাবাহিকতায় তাহিরপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক প্রকৌশলী জনৈক নেতা কর্তৃক নাজেহাল হয়েছেন মর্মে অভিযোগ করেছেন । তিনি এই অভিযোগ স্থানীয় সংসদ সদস্য সমীপে উত্থাপন করেছেন। গণমাধ্যমে ওই সংসদ সদস্য আবার এজন্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে দোষারূপ করেছেন। ধর্মপাশায়ও দলের বিবদমান গ্রুপগুলো থেকে পারস্পরিক অভিযোগ উঠেছে। অর্থাৎ সরকারি দলের ভিতরকার অন্তর্কোন্দলও এই বাঁধ বাণিজ্যের কারণে বাইরে চলে আসছে। সরকার দলীয়দের এমন অবাঞ্ছিত কার্যকলাপের কারণে সুযোগসন্ধানী আরেকটি গোষ্ঠী যে সুবিধা নিতে পারে সেই সচেতনতা না দেখে আমরা বিষ্মিত হচ্ছি। বিশেষ করে গতবার হাওরের বহু ফসল অকালে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা সামনে থাকা এবং সামনে জাতীয় নির্বাচনের বাস্তবতা থাকার পরও এমন পরিস্থিতি তৈরির দায়দায়িত্ব কীভাবে নিজেদের কাঁধে রাজনীতিবিদরা নিতে পারেন তা ভেবে আমরা উদ্বিগ্ন হচ্ছি।
দিবালোকের মত সত্য যে, পিআইসিতে নিজেদের লোক ঢুকিয়ে বাঁধের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের সিংহভাগ আত্মসাৎ করার একটি নির্মম বাস্তবতা আমরা দেখে আসছি। গত কয়েক বছর ধরে এমন বাস্তবতা ক্রমাগত বাড়ছে। এবার নির্বাচনী বছর বিবেচনায় সকলেই ব্যতিক্রম কিছু ভেবেছিলেন্। কিন্তু সকলই গরল ভেল। দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহী প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিয়ত কৃষিকে নিরাপদ রাখার কথা বলছেন। তিনি কৃষিতে সহায়তার জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই করছেন। প্রধানমন্ত্রী দলীয় প্রধানও বটে। তাঁর ইচ্ছার বাস্তবায়ন করা দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মীর দায়িত্ব। এখন তা না হয়ে কিছু জায়গায় যে উল্টোটা হচ্ছে তা বেশ বুঝা যায়। এই ধরনের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপের দ্রুত অবসান কাম্য। সরকার দলীয় সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের অধিকতর সতর্ক ও সজাগ হওয়ার সময় এসেছে। দুর্বিনীতদের রাশ টেনে ধরতে না পারলে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। সুতরাং সুজন সাবধান।