বাঁধ বিষয়ক ৩ সংবাদ/ কৃষকদের কপাল পুড়ানো আটকাতে হবে

গতকাল (মঙ্গলবার) দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে ফসলরক্ষা বাঁধ সংক্রান্ত তিনটি খবর ছাপা হয়েছে। বলাবাহুল্য তিনটি খবরই নেতিবাচক ধারণা সরবরাহ করেছে পাঠকদের। এই মৌসুমে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা বাঁধ নির্মাণ বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে অনুসরণ করেন এবং সংবাদপত্রও সে ধরনের গুরুত্ব দিয়েই সংবাদ পরিবেশন করে। প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, দিরাই উপজেলার কালিয়াকুটা হাওরের ২২ নং প্রকল্পে আলীপুর গ্রামের একটি খেলার মাঠ থেকে মাটি তুলে বাঁধে দেয়া হচ্ছিল। আলীপুরের লোকেরা এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। অন্যদিকে পুরন্দরপুর ও দুর্লভপুরের কিছু মানুষ এই মাঠটিকে পরিবর্তন করে ফসলী জমিতে রূপান্তর করার চেষ্টায় নিয়োজিত ছিলেন। বর্ণিত পিআইসি’র সভাপতি ও সম্পাদক যথাক্রমে পুরন্দরপুর ও দুর্লভপুর গ্রামের। তারা খেলার মাঠ থেকে মাটি তোলায় আলীপুরের লোকেরা বাধা দিলে এক পর্যায়ে সংঘর্ষের সূচনা ঘটে। সংঘর্ষে ২০ জন আহত হন। একটি খেলার মাঠ কেটে কেন বাঁধে মাটি নিতে হবে সেটি আমাদের বোধগম্য নয়। খেলার মাঠকে পরিবর্তিত করে ফসলী জমি বানানোর বিষয়টিও আইনসম্মত নয়। উপরন্তু ওই মাঠটি এজমালি সম্পত্তি হিসাবে সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং এই মাঠ ধ্বংস করার অভিপ্রায়টি একেবারেই অনুচিত ও আইনবিরুদ্ধ বলে আমরা মনে করি। একটি জনপদের জন্য খেলার মাঠ অপরিহার্য। এমনিতেই এখন খেলার মাঠের সংখ্যা কমে গেছে। মাঠটিকে যেকোনো মূল্যে রক্ষা করা প্রয়োজন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংঘর্ষের যাতে আর বিস্তৃতি না ঘটে এবং মাঠটি রক্ষা পায় সেজন্য দ্রুত স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
অন্য একটি সংবাদ অনুসারে তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওরের ৭৫ নম্বর প্রকল্প পাকারশি ক্লোজার বাঁধে পার্শ্ববর্তী কেন্দুয়া নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে ভরাট করার তথ্য জানা গেছে। পাহাড়ি ঢল আসলে প্রথমেই মাটিয়ান হাওর প্লাবিত হয়। তাই এই হাওরের বাঁধগুলোকে ঢল প্রতিরোধী হিসাবে তৈরি করা জরুরি। বলাবাহুল্য বালি দিয়ে যদি কোনো বাঁধ নির্মাণ করা হয় তাহলে সেটি আক্ষরিক অর্থেই ক্ষণস্থায়ী ‘বালির বাঁধ’ ই হয়ে উঠবে। পাউবো প্রকৌশলী জানিয়েছেন, নদীর পানির লেভেল পর্যন্ত বালু দিয়ে ভরাট করার জন্য তারা বলেছিলেন। কার্যত পুরো বাঁধটিই বালি দিয়ে তৈরি হচ্ছে। প্রকৌশলী বাঁধের কাজে মাটি ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। আমাদের বক্তব্য হলোÑ বালি দিয়ে বাঁধ নির্মাণের তথ্য আগে কেন তারা জানতে পারলেন না? বাঁধ তদারকির জন্য তো নানা পর্যায়ের তদারকি টিম কাজ করছে। এই একটি ঘটনা থেকে তাহিরপুর উপজেলার বাঁধ নির্মাণের মান সম্পর্কে ধারণা করা যায়। যাহোক এরকম কর্মকা- থেকে পিআইসিদের বিরত রাখতে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কঠোর ও সার্বক্ষণিক ভূমিকা থাকা দরকার বলে আমরা মনে করি।
শেষ সংবাদে শান্তিগঞ্জ উপজেলার ৪ পিআইসি সভাপতিকে বাঁধের কাজে অনিয়ম করার জন্য আটক ও পরে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে জরিমানা করা হয়েছে বলে জানা যায়। পিআইসিগুলো হলো ৪৭, ৬৩, ৬৫ ও ৬৬ নম্বর প্রকল্প। পিআইসি সভাপতি বা সম্পাদককে এ ধরনের আটক, মুচলেকা নিয়ে মুক্তি ও জরিমানা করার ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিয়মিতই আমরা দেখে আসছি। কিন্তু এতে অনিয়মের রকমফের হয়েছে এমন কথা বলা যাবে না। তবে এই ধরনের তৎপরতা কিছুটা হলেও কাজের নিয়ম ফেরাতে ভূমিকা রাখে। মূলত পিআইসি গঠনে যদি অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি বা অন্যবিধ পক্ষপাতিত্ব করা হয় তাহলে অনুরূপ ঘটনার উদ্ভব হয়। পিআইসি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ বেশ চড়া সুরেই সকল জায়গা থেকে শোনা গিয়েছে। এই ধরনের পিআইসিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা বেশ শক্ত কাজ হলেও শেষ পর্যন্ত সেটিই করে দেখাতে হবে। নতুবা কপাল পুড়বে কৃষকের।