বাদাঘাট পাবলিক হাইস্কুল/ নিয়ম মোতাবেক নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করুন

কেবলমাত্র পরিচালনা কমিটির সভাপতির অসম্মতির কারণে নিয়োগ পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরও তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩টি পদের নিয়োগপত্র জারি করা হচ্ছে না বলে বৃহস্পতিবার দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা যায়। সংবাদভাষ্য অনুসারে ওই বিদ্যালয়ের জন্য নিরাপত্তাকর্মী, নৈশপ্রহরী ও আয়ার ৩টি পদে নিয়োগের জন্য গত ৪ আগস্ট লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। নিয়োগ কমিটির সভাপতি বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি স্বয়ং। নিয়োগ কমিটিতে আরও চারজন সদস্য ছিলেন। নিয়োগ পরীক্ষার পর নিয়োগ কমিটির চার সদস্য চুড়ান্ত ফলাফল তালিকায় স্বাক্ষর করেছেন। কিন্তু ওই ফলাফল তালিকায় সভাপতি স্বাক্ষর না করায় নিয়োগপ্রক্রিয়াটি গত ৫ মাস ধরে ঝুলে আছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছাড়া নিয়োগ কমিটির অপর চার সদস্য নিয়োপ্রক্রিয়া যথাযথভাবে স্বচ্ছতার সাথে শেষ হওয়ার কথা গণমাধ্যমকে বলেছেন। কিন্তু সভাপতি পুনরায় নিয়োগ পরীক্ষা আহবানের জন্য প্রধান শিক্ষককে চাপ দিচ্ছেন। কী কারণে শেষ হওয়া নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপর তিনি আস্থা রাখতে পারলেন না, উল্টো পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানালেন সে বিষয়টি তিনি গণমাধ্যমকে পরিষ্কার করেননি। অহেতুকভাবে একটি নিয়োগপ্রক্রিয়াকে তিনি একক সিদ্ধান্তে আটকে রাখতে পারেন না বলে আমরা মনে করি। তাঁর যুক্তিসঙ্গত আপত্তির বিষয় থাকলে তা সুনির্দিষ্টভাবে উত্থাপন করা প্রয়োজন। সেটি না করে কেবল ‘ক্ষমতা’ রয়েছে বলে তিনি নিয়োগ বন্ধ রাখলে সেটি হবে স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত। মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি কর্তৃপক্ষ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (যিনি নিয়োগ কমিটিরও সদস্য) নিয়োগপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার বিষয়টি উল্লেখ করে সভাপতির স্বাক্ষর না করাকে ‘অন্যায়ের সামিল’ বলেছেন।
যে তিন পদের জন্য নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু ও শেষ করা হয় সেগুলো বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য অপরিহার্য পদ। বিদ্যালয় অবকাঠামো ও শিক্ষা সরঞ্জামাদির নিরাপত্তা বিধানসহ বিদ্যালয়ের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য এই পদগুলো প্রয়োজন। এই পদগুলোতে জনবল না থাকলে শিক্ষা দানের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হয় এবং বিদ্যালয়ের নিরাপত্তাও বিঘিœত হয়। নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের পর পাঁচ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরও বর্ণিত পদগুলোর বিপরীতে যোগ্য প্রার্থীকে নিযোগ না দেয়া দুঃখজনক। বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়টি সরকারের এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়। তাই নিয়োগপ্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে সরকারি নির্দেশনা মানতে প্রতিষ্ঠানটি বাধ্য। এখানে ব্যক্তি বিশেষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো গুরুত্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবে তাই করা হচ্ছে। সভাপতির এ ধরনের আচরণ কাম্য নয়। তাঁকে নিজের আপত্তির বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে, প্রমাণসাপেক্ষে তা যুক্তিযুক্ত হলে ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বিনা কারণে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ বঞ্চিত রাখার কোনো সুযোগ কারও নেই। তাই অবিলম্বে বিষয়টির সুরাহা দরকার বলে আমরা মনে করি। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।
আমরা জানি এরকম নিয়োগের সময় নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করা হয়। অবৈধ লেনদেন, পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগদান; প্রভৃতি নানা বিষয় জড়িত থাকে। আলোচ্য নিয়োগ নিয়ে অন্তত প্রকাশিত সংবাদে সে ধরনের কোনো অভিযোগ কারও পক্ষ থেকে সামনে আনা হয়নি। গোপনে সেই ধরনের কোনো সংযোগ থাকলে সংশ্লিষ্টদের তা প্রকাশ করে উপযুক্ত আইনসম্মত সমাধান বের করতে হবে। কোনো পাবলিক প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি বিশেষের ইচ্ছার কাছে জিম্মি হতে পারে না। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, ওই নিয়োগপ্রক্রিয়াটি যাচাইবাছাই ও সকল পক্ষের বক্তব্য শুনে দ্রুত উপযুক্ত সমাধান দিয়ে বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু শিক্ষা দান পরিবেশ নিশ্চিত করুন।