বাদামের বাম্পার ফলন/ গেল বছরের ক্ষতি পোষাতে চান চাষীরা

সাইদুর রহমান আসাদ
সুনামগঞ্জে বাদাম চাষে বাম্পার ফলন পেয়েছেন চাষিরা। গতবছর পাহাড়ি ঢলে ক্ষতি হলেও এবার ফলনে খুশী তারা। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার জেলায় প্রায় ৩০ কোটি টাকার বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
দেশে তেল আমদানির খরচ কমাতে তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে সুনামগঞ্জে গত বছরের চেয়ে এবার ২৯৯ হেক্টর জমিতে বেশি বাদাম আবাদ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। ভালো ফলনে খুশী কৃষকরা। গত বছরের ক্ষতি পোষাবার কথাও বলেছেন চাষীরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্যমতে, সুনামগঞ্জে এবার ১ হাজার ৭২৬ হেক্টর জমিতে বাদাম আবাদ হয়েছে। জেলায় সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ হয়েছে তাহিরপুর উপজেলায়। এ উপজেলায় ১৪৭৫ হেক্টর জমিতে বাদাম আবাদ হয়েছে। এছাড়াও সুনামগঞ্জ সদর ৩৫, দোয়ারাবাজার ৪০, বিশ^ম্ভরপুর ৮১, জগন্নাথপুর ১০,জামালগঞ্জ ৫০, ধর্মপাশা ১০, দিরাই ৫ ও ছাতক ২০ হেক্টর জমিতে বাদাম আবাদ হয়েছে।
তবে অতিরিক্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে গত বছর ১ হাজার চারশ’ সাতাশ হেক্টর বাদাম ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাতে লোকসানে পড়েন চাষিরা। ফসল হারানো ও শতাব্দির ভয়াবহ বন্যার যন্ত্রণা ভুলে আবারও বাদাম চাষ করেছেন চাষীগণ।
বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের ভাদেরটেক মনিপুরি হাটির বাসিন্দা মো. ইয়াকুব আলী। তিনি গেল বছর প্রায় ৫ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। প্রতি বিঘা জমিতে বাদাম আবাদ করতে খরচ হয়েছিলো প্রায় ৫ হাজার টাকা। আ´সিক বন্যায় তার বাদাম ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। এতে লোকসানের মুখে পড়েন তিনি।
বাদাম চাষী ইয়াকুব বলেন, গত বছর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে বাদাম ক্ষেত তলিয়ে যায়। পরে আর বাদাম তুলতে পারিনি। ক্ষেতের সব বাদাম নষ্ট হয়ে যায়। ফলে প্রায় ২৫ হাজার টাকার লোকসানের মধ্যে পড়তে হয়েছে আমাকে।
একই এলাকার বাদাম চাষী মো. হারিছ মিয়া বললেন, গত বছর বাদাম করে লোকসানের মুখে পড়লেও এবার ভালো আবাদ হয়েছে। আমরা এখন ক্ষেত থেকে বাদাম তুলছি। আমার ক্ষেতে বাদাম তুলতে ৮ জন শ্রমিক কাজ করছেন। ক্ষেতের মোট বাদামের ৮ ভাগের একভাগ যারা তুলছেন তারা পাবেন। এতে যারা বাদাম আবাদ করে নি তারাও উপকৃত হচ্ছে।
বাদাম ক্ষেতে বাদাম তুলছিলেন ইসমাইল মিয়া। তিনি বললেন, ভোর থেকে ক্ষেতে বাদাম তুলছি। সারাদিন বাদাম তুলবো। যা পরিমানে বাদাম তুলবো, তার ৮ ভাগ করে আমরা একভাগ নেবো।
বাদাম চাষী মো. ওসমান মিয়া বললেন, গতবার লোকসান হলেও এবার ফলনে খুশী আমরা। খুব ভালো ফলন হয়েছে। প্রতিবিঘা জমিতে ৫ মণ করে হয়েছে। দাম কিছুটা কম। আরেকটু দাম পেলে খুবই ভালো হতো।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিউটের (বিনা) সুনামগঞ্জ উপকেন্দ্রের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুন-নবী মজুমদার বলেন, দেশে তেল আমদানির খরচ কমাতে তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে সুনামগঞ্জে আমরা কাজ করছি। এবার আমাদের উদ্ভাবিত বিনা চিনা বাদাম ৪, ৬ ও ৮ আবাদ করে কৃষকরা ভালো ফলন পেয়েছেন। এবার তাহিরপুর, বিশ^ম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় প্রায় ১৪৫ হেক্টর জমিতে বিনা চিনা বাদাম- ৪, ৬ ও ৮ আবাদ করেছেন। সামনের মৌসুমে আরও বাড়বে।
এদিকে বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে জানিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোহাম্মদ শওকত ওসমান মজুমদার বললেন, বৃষ্টিপাত কম ও আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার বাদাম চাষীরা ভালো ফলন পেয়েছেন। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থেকেও বেশি জমিতে বাদাম আবাদ হয়েছে। আশাকরছি চলতি মাসের ৩০ তারিখের ভেতর জেলায় শতভাগ বাদাম উত্তোলনের কাজ শেষ হবে।