বাদাম তোলা হলো না তিন শিশু শিক্ষার্থীর

স্টাফ রিপোর্টার, তাহিরপুর
বাদাম ক্ষেতে পানি লাগতে পারে বা ঢলে ভাসিয়ে নিতে পারে ক্ষেত। এজন্য আব্দুল হালিমের চার পুত্র কন্যা একসঙ্গে বৃহস্পতিবার সকালে বাদাম তুলতে যায়। তিন চার ঘণ্টা ক্ষেতে কাজ করে অনেক বাদাম তুলে তারা। হঠাৎ করে আকাশ অন্ধকার হয়ে বজ্রবৃষ্টি শুরু হয়। কিন্তু ক্ষেতে তোলা বাদাম ফেলে আসতে চায় নি এই চার শিশু। কিছুক্ষণ পরই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই মারা যায় ঘাগটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণিতে পড়–য়া তাওহিদা। আহত হয় তার দুই বোন ও এক ভাই। এ ঘটনায় আরও দুই শিশু শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। রিপা ও আমিরুল ইসলাম নামের ওই দুই শিশু শিক্ষার্থীও একই স্কুলের পর্যায়ক্রমে পঞ্চম ও ষষ্ট শ্রেণির শিক্ষার্থী। মর্মস্পশি এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ঘটনার সময় সব মিলিয়ে ১১ জন আহত হয়। মৃত্যু ঘটে তিনজনের। আহতদের মধ্যে একজন ছাড়া সকলেই শিশু শিক্ষার্থী। এরা স্থানীয় ঘাগটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাহাড়ি ঢলে বাদাম ক্ষেত ভাসিয়ে নিতে পারে। এই অবস্থায় সুন্দর পাহাড়ি গ্রামের বাদাম চাষীরা নিজেরাও ক্ষেতে যান। পরিবারের শিশু মহিলাসহ সকলেকেই ক্ষেতে পাঠান বাদাম তুলে আনতে। বড়োরা যান দূরের জমিতে, শিশুরা গ্রামের পাশে।
বেলা সাড়ে ১১টায় নিজেদের সুন্দর পাহাড়ী গ্রামের পাশেই বাদাম তুলছিলেন শিশুরা। বজ্রঝড়ের সময় তারা ইচ্ছা করলেই দৌঁড়ে বাড়ি যেতে পারতো। কিন্তু তোলা বাদাম ফেলে যায় কীভাবে, এই চিন্তা করেই ক্ষেতেই থাকে তারা। এসময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই সুন্দরপাহাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুল হালিমের মেয়ে তাওহিদা বেগম (১১), ফজর আলীর মেয়ে রিপা ও আবুল আজিজের ছেলে আমিরুল (১১)’এর মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয় তাওহিদার বোন ওহিদা, ভাই মাসুম এবং বোন তাছনিয়া। এছাড়া শিশু শিক্ষার্থী আউয়াল মিয়ার মেয়ে অলিজা, আব্দুল আজিজের ছেলে জিয়া, আব্দুস সাত্তারের মেয়ে সাদিয়া, ফজর রহমানের মেয়ে শেফা এবং হবি রহমান (৪০) নামের মধ্য বয়সী এক ব্যক্তি আহত হন। তার অবস্থা আশংকাজনক।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন জানান, নিহত তিনজনেই স্কুল শিক্ষার্থী। আহতদের মধ্যে হবি রহমান ছাড়া সকলেই স্কুল শিক্ষার্থী। ঘটনাটি খুবই মর্মস্পর্শির্ উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ঘটনা নিশ্চিত করে তাহিরপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ তরফদার জানান, বাদাম তুলতে গিয়ে তিন শিশু শিক্ষার্থীর বজ্রপাতে মৃত্যু ঘটেছে।
এদিকে বজ্রপাতের ঘটনায় নিহত তিন শিশুর পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।