টাউন হল মার্কেটটির অবস্থান সুনামগঞ্জ শহরের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ, সুবিধাজনক এবং বাণিজ্যিকভাবে উপযোগী স্থানে অবস্থিত। সাবেক টাউন হলটি একসময় অত্রাঞ্চলের প্রথম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুনামগঞ্জ কলেজের ক্যাম্পাস হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এই টাউন হল প্রাঙ্গণটি পাকিস্তান আমল থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এক দশক পর্যন্ত জেলার রাজনৈতিক কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দু ছিলো। এখানে দেশের বিখ্যাত সব নেতাগণ এসে বক্তৃতা করে গেছেন। এই টাউনহলের নীচ ও উপরতলার বিভিন্ন কামড়ায় ছিলো বহু রাজনৈতিক দলের কার্যালয়। এই ঐতিহাসিক স্থাপনার অবকাঠামো একসময় দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে পড়ে। এমন সময়ে ১৯৮০ খৃস্টিয় সনে পৌরসভা ও প্রশাসন সাবেক টাউন হলটি ভেঙ্গে তদস্থলে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এই ভবনের নীচতলায় দোকানকোঠা ও উপরে অডিটরিয়াম নির্মাণের লক্ষে পৌর কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের যৌথ অংশগ্রহণে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিছু ব্যবসায়িকে দোকানকোঠা বরাদ্দ দেয়া হয়। শুরু হয় নির্মাণ কাজ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে পৌর কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের সমন্বয়হীনতা ও পরে সত্ত্ব দাবি করে দাখিল করা এক মামলার কারণে একসময় এর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সেই যে স্থবিরতা দেখা দিল এই চার দশকেও তার কোনো সুরাহা হয়নি। মাঝেমধ্যে বিষয়টি নিয়ে কিছু কথা উঠে পরে আবার বাতাসে মিলিয়ে যায়। সবকিছু মিলিয়ে শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই জায়গাটি এখনও গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে পতিত হয়ে আছে।
গতকাল দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে বেহাল টাউন হল মার্কেট নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এই প্রতিবেদনে শহরের সৌন্দর্য বর্ধনসহ মূল্যবান এই জায়গাটির সদ্ব্যবহার প্রশ্নে জেলা প্রশাসক ও পৌর মেয়র অভিন্ন ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। পৌরমেয়র বলেছেন, শহরকে ব্র্যান্ডিং করার উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে এই ভবন। জেলা প্রশাসক বলেছেন, শুধু মার্কেট নয়, এখানে সিনেফ্লেক্সও করা হবে। আমরা তাঁদের শুভ ইচ্ছার প্রতি সমর্থন ও সংহতি জানিয়ে বিনয়ের সাথে কেবল জিজ্ঞাসা করতে চাই, এমন সদিচ্ছার বাস্তবায়ন দেখতে শহরবাসীকে আর কয় দশক অপেক্ষা করতে হবে? এই জায়গায় ১৫ শতক ভূমি রয়েছে যা সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত। অর্থাৎ জায়গার মালিক সরকার। বর্তমানে এই জায়গা নিয়ে কোনো অনিষ্পত্তিকৃত মামলা মোকদ্দমাও নেই বলে জানিয়েছেন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা। তাহলে মার্কেট ও বহুতল বহুমুখী ভবন তৈরির বাধা কোথায়? এখন দরকার শুধু উপযুক্ত উদ্যোগ ও বাস্তবায়নের। এখানে ইতোপূর্বে যারা দোকানকোঠা বরাদ্দ পেয়েছিলেন তাঁরাও একটি অংশ। এই অংশটিকেও কার্যকর সহায়তার মধ্যে আনতে হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা সদরটি এখনও দেশের বহু জেলা সদর থেকে অনুন্নত। শহরের যে সৌন্দর্যের কল্পনা আমরা করি সে জায়গায়ও রয়েছে বিপুল ঘাটতি। উপরন্তু শহরের মধ্যস্থলে এমন একটি মূল্যবান জায়গা পরিত্যক্ত রেখে দেয়ার কারণে শহরের মলিনতা সকলের নিকট বেশি করে ভেসে উঠে। এই জায়গাটির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে শহরবাসীর বহু নাগরিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এখানে যেমন অডিটরিয়াম করা যায়, সিনেপ্লেক্স করা যায়, কমিউনিটি সেন্টার করা যায় তেমনি আরও বহু জনবান্ধব কাজেও ববহারের সুযোগ রয়েছে। শহরবাসী চান জায়গাটি যেন আর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে না থাকে। জেলা প্রশাসক ও পৌর কর্তৃপক্ষের প্রতি আমাদের আহ্বান, উপযুক্ত উদ্যোগ গ্রহণ করে এই জায়গাটির সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করুন। সকলেই চায় শহরের নেতৃস্থানীয় নাগরিকদের মতামত গ্রহণ করে এখানে কী ধরনের স্থাপনা হতে পারে তার উপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হোক। অব্যবহৃত সম্পদ যতই মূল্যবান হোক না কেন তার কোনো উপযোগিতা তৈরি হয় না। আমরা বেহাল টাউন হল মার্কেটকে আর বেহাল দেখতে চাই না। এর হাল ফিরিয়ে আনা তথা শ্রী ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধির ব্যবস্থা হওয়াটাই সকলের কাম্য।
- মুস্তাফিজের বোলিং নৈপুন্যে বাংলাদেশের রোমাঞ্চকর জয়
- দরিদ্ররা বঞ্চিত -পরিকল্পনামন্ত্রী