ভূমি সেবা সপ্তাহের রেশ বজায় থাকুক বছরজোড়ে

ভূমি সেবা সপ্তাহ বেশ সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে সারা দেশে। ভূমি সেবার বিশেষ কিছু বিষয় ডিজিটাল রূপান্তর করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ভূমির খাজনা পরিশোধ, নামজারি, খতিয়ান, পর্চা বা জমির নকশার আবেদন অনলাইনে নিষ্পত্তিসহ বেশ কিছু । এছাড়া ১৬১২২ নম্বরে ফোন করে বা land.gov.bd ওয়েবসাইড ভিজিট করে জনসাধারণ এখন সহজেই ভূমি সংক্রান্ত পরামর্শাদি পেতে পারেন। মূলত সরকারের এসব যুগান্তকারী পদক্ষেপগুলো জনসাধারণকে জানানোই এই সেবা সপ্তাহ পালনের উদ্দেশ্য। সোমবার এই সপ্তাহ উপলক্ষে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এক সভায় জেলা প্রশাসক সঠিকভাবেই বলেছেন, ভূমিসেবা সংক্রান্ত অজ্ঞতার কারণেই জনসাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। তিনি সরকারের সেবাসংক্রান্ত সকল তথ্যসমূহ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ও সুলভ করার কথা বলেছেন। কথা সত্য যে, জানার অভাবের নামই অজ্ঞানতা আর অজ্ঞনতার হাত ধরেই আমন্ত্রণ জানানো হয় অপরাপর খারাপ প্রপঞ্চসমূহকে। ভূমিসেবা সংক্রান্ত হয়রানির শিকার হননি এমন মানুষ সমাজে খোঁজে পাওয়া কঠিন হবে। এই সেবার সাথে জড়িত সরকারি দপ্তরগুলো এখন ভূমি মালিকদের নিকট বিড়ম্বনাস্থল হিসাবে অধিক খ্যাতি পেয়েছে। এই জায়গায় ভূমিসেবার ডিজিটাল রূপান্তর একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ যা ভূমি সংক্রান্ত সকল ধরনের দুর্নীতি, অনিয়ম ও হয়রানি বন্ধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এ কারণে সরকারের এই মহতী পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাই।
জেলা প্রশাসক সোমবার যে সভায় এসব কথা বলছিলেন সে সভায়ই জনৈক ব্যক্তি নকল পাওয়ার জন্য সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিজের হয়রানি তথা ঘুষ দেয়ার পরও কাজ না হওয়ার অভিজ্ঞতা উত্থাপন করেন। বিষয়টি কাকতালীয় নয়, একেবারেই প্রাসঙ্গিক। বলা চলে, প্রতীকী এই উপস্থাপনাটি সারা দেশের ভূুমিসেবার সাধারণ চিত্রকে উন্মোচিত করে দিয়েছে। জেলা রেজিস্ট্রার এই অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, সাবরেজিস্ট্রি অফিস সমূহে ভুয়া ব্যক্তি, ভুয়া কাগজ ও অতিরিক্ত লেনদেনের বাস্তবতা রয়েছে । সেবাসংক্রান্ত সরকারের নানা নির্দেশনা আমরা নানাভাবে জানতে পারি কিন্তু সাবরেজিস্ট্রি অফিসের কোনো তথ্য পাওয়া এভারেস্ট ডিঙানোর মতো কঠিন কাজ। সেটেলম্যান্ট অফিস এরকম আরেক সরকারি দপ্তর। এসব দপ্তরের সেবাগুলোরও ডিজিটাল রূপান্তর আবশ্যক। ডিজিটাল সেবার কারণে সরকারি-বেসরকারি বহু সেবা এখন মানুষের হাতের নাগালে চলে এসেছে। কিন্তু কিছু সরকারি দপ্তর এখনও ইচ্ছা করে এই ডিজিটাল রূপান্তরকে নিজেদের আঙ্গিনায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। মুখ্যত দুর্নীতির প্রবল ইচ্ছাই এই বাধার মূল কারণ। সরকারকে শুধু সহকারি কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়কে ডিজিটাল করলেই চলবে না। সাবরেজিস্ট্রি অফিস, সেটেলম্যান্ট অফিসকেও দ্রুত এর আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
সরকারি কর্মচারিদের মন মানসিকতারও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাতে হবে। প্রচলিত প্রভৃত্বসুলভ ও দুর্নীতিপরায়ণ মনোবৃত্তির পরিবর্তে সেবামূলক মনোভাবের প্রবর্তন করতে হবে। এজন্য দরকার ব্যাপক মনোজাগতিক পরিবর্তন ঘটানোর কর্মসূচি। মানসিকতা পরিবর্তনের এই কাজটি শুরু করতে হবে শীর্ষবিন্দু থেকে নীচের বিন্দু পর্যন্ত। না হলে ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে যে সুফলের আশা আমরা করি তা সোনার হরিণের মতোই অধরা থেকে যাবে। বলাবাহুল্য কিছু স্বার্থান্ধ মানুষ অবৈধ সুবিধা করায়ত্ত্ব করতে সরকারি কর্মচারিদের প্রলোভিত ও প্ররোচিত করে। সমাজ-শরীরের এই দুষ্ট মানুষগুলোকেও শায়েস্তা করার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, ভূমি কাঠামোকে যদি একটু গ্রহণযোগ্য মাত্রায় তৈরি করা যায় তাহলে দেশের বহু সমস্যার সমাধান ঘটে যাবে। কমবে মারামারি, হানাহানি, হিং¯্রতা, লোভ, মামলা মোকদ্দমা ইত্যাদি। বেঁচে যাবে ভদ্র ও সুন্দরভাবে যারা জীবন যাপন করতে চায় তাঁরা।
সরকারের জনবান্ধব ভূমি ব্যবস্থাপনা তথা এর ডিজিটাল রূপান্তরের মহতী আকাক্সক্ষা পূর্ণতা পাক। মানুষের জন্য এই সেবা সহজলভ্য ও হয়রানিমুক্ত হোক এই আমাদের কামনা।