এনাম আহমদ
(পূর্ব প্রকাশের পর)
বিশ্বকাপ সরাসরি মাঠে বসে উপভোগ করা আমাদের বন্ধুদের দীর্ঘ দিনের পরিকল্পনা। ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপে যাওয়াটা পরিকল্পনার মধ্যে ছিল। কিন্তু বিশ্বকাপের মাত্র কয়েক মাস আগে রাশিয়া ঘুরে আসায় আবার রাশিয়া যাওয়ার কোন আগ্রহ ছিল না। এজন্য সব বন্ধু—বান্ধব মিলে ঠিক করি, পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারলে ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপ আমরা মাঠ থেকে দেখবো। কিন্তু আমরা সবাই টিকতে পারিনি! বন্ধু কামাল, আবেদ ও ফারুক ইতিমধ্যে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। কাতার যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করি মার্চ মাসে। একে একে সব বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। সব বন্ধুরাই কিছু সঙ্গত এবং কিছু অসংগত কারণে রণভঙ্গ দেয়। বিশ্বকাপের সব আবেদন —নিবেদন অনলাইনে করতে হয়। আমি এই লাইনে পারদর্শী না হওয়ায় কার শরণাপন্ন হবো ভাবতে ভাবতে কিছু দিন গুজরান হয়। শেষে রবিন হুডের মতো আবির্ভূত হয় তরুন অ্যাডভোকেট মারজান। উনার আরেকটা ভালো নাম আছে। আমি কম্পিউটার টাইপিং এ পারদর্শী না বলে ঐ নামটি টাইপ করতে পারছি না। তবে মারজান নামটিও নেহায়েত খারাপ না। দীর্ঘ ছয় মাস ফিফা কর্তৃপক্ষ ও কাতার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে ই—মেইল চালাচালি করতে হয়। প্রথম অপশন আসে বিশ্বকাপের ম্যাচের টিকেট কেনার। সেটিও আবার লটারির মাধ্যমে। বিগ ম্যাচ আর্থিক ও ভৌগোলিক কারণে সংগ্রহ করতে পারব না, এটা ধরে নিয়েই কথিত তিনটি ছোট ম্যাচের জন্য লটারিতে নাম দেই। এবার অপশন আসে মাঠের কোন জায়গায় বসে খেলায় দেখতে চাই। একেক জায়গায় একএক মূল্য! আমি বেছে বেছে একেবারে দূরুহ, মাঠের ঈষান কোনের এক চিপার স্থান নির্বাচন করলাম যার মূল্য সবচেয়ে কম। কাতারি টাকায় ২৫০ দিনার আর বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৭০০০টাকা। ই—মেইলে জানানো হয় ৩১ মে তারিখে লটারির ফলাফল ঘোষণা করা হবে। বর্তমানে স্কুল —কলেজের ভর্তিতে লটারিতে অভ্যন্ত বাঙালির অপেক্ষার পালা আর শেষ হয় না! ই—মেইল আসে না। শরণাপন্ন হলাম মারজানের। সে আবার অন্য কোন সাইটে ডুকে বের করে ফেললো! আমাকে ক্যামেরুন বনাম সার্বিয়ার ম্যাচের টিকেট দিয়েছে, এবং দ্রুত তা কিনতে হবে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে। শত চেষ্টা করে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে সুনামগঞ্জ থেকে টিকেটটি কিনতে না পেরে শেষে ভাতিজা আদিবেব খালাতো ভাই আবির আমেরিকা থেকে আমার জন্য টিকেটটি কিনে দিল! টিকেট কেনায় ফিফা অভিনন্দন জানালো এবং নিয়মিত মেইল চেক করতে অনুরোধ করলো। চেক করতে থাকলাম। একদিন জানালো কাতারে প্রবেশ করতে ‘হাইয়া’ কার্ড করার জন্য। এগিয়ে যেতে থাকলাম মারজানের কাঁধে বন্দুক রেখে! এক পর্যায়ে জানালো কোথায় থাকবো তার ঠিকানা দিতে। অ্যাড. পংকজের ভাতিজা তাপসের ঠিকানা দিলাম। পরে আবার কাতারের বাসিন্দা যাদের ওখানকার জাতীয় পরিচয়পত্র আছে এবং বাসার কাগজপত্র আছে, তা পিডিএফ করে মেইল করতে বললো। শেষে অ্যাড. ফাহিম ও দোলার ছোট মামার কাগজপত্র দিয়ে আমার ‘হাইয়া’ কার্ড প্রস্তুত হয়। দেশে বসে ল্যাপটপে তা করে দিচ্ছে সেই মারজান! ল্যাপটপ বগলদাবা করে ঘুরছি কখনো মারজানের বাসায় কখনো আমার বাসায় আবার কখনো বার লাইব্রেরিতে। একে একে মেইল আসতে লাগলো। সবগুলো লিমনের দোকানে বিনা পয়সায় প্রিন্ট করে ফাইল বন্দি করলাম। ইতিমধ্যে আশেপাশের দেশগুলোও গা ঝাড়া দিয়ে উঠলো বিশ্বকাপ দর্শকদের তাদের দেশ ভ্রমণ করানোর জন্য। করোনা মহামারীর ক্ষতি পুষিয়ে দিতে ভ্রমনকারীদের নিজ নিজ দেশে টেনে নেয়ার চেষ্টা! সুযোগে পেয়ে সৌদি আরবের ই—ভিসা করে দেয় মারজান। বন্ধু—বান্ধবরা মনে করেছিল শেষ পর্যন্ত আমিও রণে ভঙ্গ দেব। কিন্তু আমি কোন মতে টিকে থাকায় উনারা মোটামুটি ঈর্ষাকাতর। বাংলাদেশ বিমানের টিকেট কেটে দিলেন বাবুভাই। কাতারের উদ্দেশে সুনামগঞ্জ ছাড়তে হয় তিনদিন আগে। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী মহাসমাবেশের জন্য বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা ধর্মঘট করলে তার আগেই রাজধানীতে এসে রাজনৈতিক আশ্রয় নেই। রবিবারের ঢাকার ঐতিহাসিক যানজট বিবেচনায় সকাল সাড়ে দশটায় এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওয়ানা করে কোন প্রকার যানজট ছাড়া প্রায় এগারোটায় এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছে যাই! এতো আগে আসতে পারায় আমাকে দেখে বন্দরের কর্তারাও আপ্লূত হয়ে যান। (চলবে)
লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
- শোক সংবাদ-শেখ আব্দুল্লাহ
- ২য় দফা ছাতক-সিলেট রেললাইন পরিদর্শনে এডিবি’র প্রতিনিধি দল